যুক্তরাজ্যের নতুন অভিবাসন প্রস্তাবে হুমকিতে পড়বে জলবায়ু লক্ষ্য

প্রকাশ | ২০ জুন ২০২৫, ১৮:০৬

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
প্রস্তাবিত অভিবাসননীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়বে নির্মাণ খাতে

 

 

ব্রিটিশ সরকারের অভিবাসনসংক্রান্ত প্রস্তাবে (হোয়াইট পেপার) উল্লিখিত কঠোর নীতিগুলো দেশটির নিট জিরো বা শূন্য কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্যকে ব্যাহত করতে পারে বলে এক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে। লেবার পার্টির দেয়া শ্বেতপত্রে দক্ষ কর্মী ভিসার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়িয়ে স্নাতক ডিগ্রির সমতুল্য করা হয়েছে। এছাড়া কনজারভেটিভ সরকার চালু করা বছরে ন্যূনতম বেতনসীমা ৩৮ হাজার ৭০০ পাউন্ড বহাল রাখা হয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান রিফর্মের (সিইআর) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে ‘পরিবেশবান্ধব চাকরিতে’ নিযুক্ত ৪ লাখ ৬৫ হাজার বিদেশী শ্রমিকের মধ্যে ২ লাখ ৬০ হাজারই নতুন এ নিয়মের আওতায় দেশে ঢোকার অনুমতি পেতেন না।

সিআইআরের গবেষক জন স্প্রিংফোর্ড বলেন, ‘স্থানীয় শ্রমিকদের আকর্ষণ করতে মজুরি বাড়ানো এবং প্রশিক্ষণ দেয়ার ওপর সরকার নির্ভর করছে। কিন্তু এতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে খরচ বাড়বে এবং অনেক মানুষই হয়তো আর বাড়ি ইন্সুলেট করানো বা হিট পাম্প কেনার কথা ভাববে না।’

যুক্তরাজ্যের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকসের (ওএনএস) তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, একজন কর্মীর কর্মঘণ্টার এক-তৃতীয়াংশ পরিবেশ সহায়ক হলে তা ‘পরিবেশবান্ধব চাকরি’ হিসেবে বিবেচিত হবে। এর মধ্যে বড় অংশ নির্মাণ খাতে। এ খাতে বাড়িঘরে কার্বন নিরপেক্ষ প্রযুক্তি বসানোর কাজ হয়। এবার নতুন ভিসা নীতির কারণে নির্মাণ খাতে শ্রমিক সংকট আরো ঘনীভূত হতে পারে বলে প্রতিবেদনে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে সরকারের ২০২৯ সালের মধ্যে ১৫ লাখ বাড়ি নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

প্রতিবেদন বলছে, নির্মাণ খাত শ্রমনির্ভর ও মৌসুমভিত্তিক, যেখানে কর্মী প্রবাহ বেশি। বাড়ি নির্মাণ ও দালানকোঠা কার্বন-নিঃসরণমুক্ত করার লক্ষ্যে এ খাত সরকারের দুটি মূল পরিকল্পনারই কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। অথচ অভিবাসন সীমিত হলে এখানেই শ্রমিক সংকট সবচেয়ে বেশি হতে পারে।

বর্তমানে বিদ্যমান ‘ইমিগ্রেশন স্যালারি লিস্ট’-এর পরিবর্তে লেবার সরকার ‘টেম্পোরারি শর্টেজ লিস্ট’ চালুর ঘোষণা দিয়েছে। এ তালিকায় থাকা পেশাগুলোয় বিদেশী কর্মীদের কম বেতনে ভিসা দেয়া যাবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট খাতগুলোকে স্থানীয় কর্মী প্রস্তুতের রোডম্যাপ দিতে হবে। সিইআর সতর্ক করে বলেছে, এ তালিকা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কারণ বেতনসীমা এত উঁচু রাখা হয়েছে যে তালিকাভুক্ত খাতের কর্মীরা অন্য কোথাও চলে যেতে পারবেন না। এতে নিয়োগদাতা যাদের ভিসা স্পন্সর করে, তারা তাদের ওপর শোষণ করতে পারেন, এমন নজির রয়েছে সমাজসেবা খাতে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের উচিত হবে নিট জিরো ও হাউজিং মিশনে গুরুত্বপূর্ণ পেশাগুলোয় শ্রমিক সংকট নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনে ভিসা নিয়ম শিথিল করা। তবে নির্দিষ্ট কিছু পেশায় নিয়মের ছাড় দিলে দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি বাড়বে।

প্রতিবেদনটিতে আরো কয়েকটি বিকল্প উপস্থাপন করা হয়েছে, যেমন পরিবেশবান্ধব ভিসা চালুর চিন্তাও রয়েছে। এ ভিসা এমন চাকরির জন্য দেয়া হবে, যেগুলো নিট জিরো লক্ষ্য পূরণে সহায়ক। কিংবা সামগ্রিকভাবে বেতন ও দক্ষতার শর্ত কিছুটা কমানো হতে পারে।

গত মাসে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার অভিবাসন নীতিতে বড় পরিবর্তন আনেন। তিনি বলেন, ‘ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ের কনজারভেটিভ সরকারের ব্যর্থতা ও অভিবাসন বৃদ্ধির অপমানজনক অধ্যায় এবার শেষ হবে।’

২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে যুক্তরাজ্যে নিট অভিবাসনের সংখ্যা নয় লাখ ছাড়িয়ে যায়, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তবে ঋষি সুনাক সরকারের বেশকিছু কঠোর পদক্ষেপের পর ২০২৪ সালে তা নেমে আসে ৪ লাখ ৩১ হাজারে। স্টারমার দাবি করেছেন, তার ঘোষিত নতুন নিয়মে অভিবাসনের হার কমে আসবে।

এদিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নিট অভিবাসনের হার কমায় যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও কমিয়ে আনতে পারে বাজেট নিরীক্ষা সংস্থা ওবিআর।

স্টারমার প্রশাসনের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘হোয়াইট পেপারে অভিবাসন, দক্ষতা ও ভিসা ব্যবস্থার সংযোগ ঘটিয়ে আমাদের অভ্যন্তরীণ শ্রমশক্তি বৃদ্ধি এবং বিদেশী শ্রমিকের ওপর নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে একটি বিস্তৃত পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়েছে। নির্মাণ খাতে অনেক বছরের বিনিয়োগ ঘাটতি দূর করতে ৬০ কোটি পাউন্ড বরাদ্দ দিয়ে ২০২৯ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ৬০ হাজার নির্মাণকর্মী নিয়োগ ও ইংল্যান্ডে ১০টি নতুন টেকনিক্যাল কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’