‘গঙ্গা চুক্তি’ পুনঃআলোচনা: বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে ভারত

উদ্দেশ্য পানির হিস্যা কমানো

প্রকাশ | ২৩ জুন ২০২৫, ১৮:১৯ | আপডেট: ২৩ জুন ২০২৫, ১৮:৩৫

যাযাদি ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিতের পর এবার বাংলাদেশের সঙ্গেও আগামী বছর মেয়াদোত্তীর্ণ হতে চলা গঙ্গা নদীর পানি বন্টন চুক্তির শর্ত পুনঃআলোচনা করে ঠিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সুত্রগুলোর বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এসব কথা জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নয়াদিল্লি ঢাকাকে জানিয়েছে, উন্নয়ন চাহিদা মেটাতে ভারতের আরো পানিসম্পদের প্রয়োজন। এছাড়া, নতুন চুক্তিটিও হবে আগের চেয়ে স্বল্পমেয়াদি, সম্ভবত ১০ থেকে ১৫ বছর মেয়াদি। দেশটির সরকারি সূত্রগুলোর ভাষ্য হচ্ছে, এই স্বল্পমেয়াদি চুক্তির লক্ষ্য— দুই দেশকে নমনীয়তা ও অভিযোজনযোগ্য সময় দেওয়া— যাতে ভবিষ্যতে পানি ভাগাভাগির ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন আনা যায়।

১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর, দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় গঙ্গা নদীর পানি বন্টন চুক্তি, যেটি শুস্ক মৌসুমের জন্য পশ্চিমবঙ্গের ফারাক্কা ব্যারেজের পানি ভাগাভাগির পদ্ধতি নির্ধারণ করেছিল।

চুক্তিতে বলা হয়, গঙ্গার পানি যে ব্যারেজ দিয়ে ভাগ হবে সেই ফারাক্কায় গঙ্গার পানির নাব্য যদি ৭০ হাজার কিউসেকের কম হয়, তবে বাংলাদেশ ও ভারত মোট পানির ৫০ শতাংশ হারে ভাগ করবে। তবে নাব্য ৭৫ হাজার কিউসেক হলে বাংলাদেশ পাবে ৩৫ হাজার কিউসেক এবং ভারত পাবে অবশিষ্ট। আর নাব্য ৭৫ হাজার কিউসেকের বেশি হলে ভারত পাবে ৪০ হাজার কিউসেক, বাকি পুরো পানি পাবে বাংলাদেশ।

কিন্তু, ভারত এখন ভাটির দেশ বাংলাদেশের জন্য পানির হিস্যা আরো কমাতে চায়। কাশ্মীরের পেহেলগামের সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই প্রতিবেশীদের সাথে পানির ভাগাভাগি নিয়ে মোদি সরকারের যে নীতি পরিবর্তন- এটি তারই অংশ বলে মনে করা হচ্ছে।  

ঢাকায় এই চুক্তি নিয়ে উভয় দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনাও হয়। মে মাসের শুরুতে এমনই একটি বৈঠকে অংশ নেওয়া ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, "পাহেলগামের আগে আমরা ৩০ বছর মেয়াদ বাড়ানোর কথা ভাবছিলাম, কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি একদম বদলে গেছে।"

"এটা ছিল নিয়মিত বৈঠক, যা প্রতিবছর দুবার আয়োজন করা হয়। তবে এবারের বৈঠকটি আমাদের জন্য সুযোগও তৈরি করে—ভারতের নিজস্ব উন্নয়নের জন্য পানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা তুলে ধরার, এই চাহিদা নতুন চুক্তির শর্ত নির্ধারণেও প্রভাব ফেলবে।"

গঙ্গা চুক্তি নিয়ে আলোচনা সংক্রান্ত ভারত সরকারের অভ্যন্তরীণ কিছু নথিও দেখেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। যেখানে বলা হচ্ছে, ফারাক্কা ব্যারেজ ৪০ হাজার কিউসেক পানি স্থায়ীভাবে কলকাতা বন্দর ট্রাস্ট (বর্তমান শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর, কলকাতা)-এর ফিডার খালে প্রবাহিত করার জন্য নির্মিত হয়েছিল ।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দাবি করেন, "১৯৯৬ সালের (বাংলাদেশের সঙ্গে) চুক্তি এই ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটিয়েছে। এর ফলে ঢাল পতন, নদীতল ক্ষয় এবং কলকাতা বন্দরের তীব্র পলিজমার কারণে নাব্যতার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। পাশাপাশি, সেখানে অবস্থিত এনটিপিসির প্ল্যান্টও পানি সংকটে পড়েছে।"

বর্তমান চুক্তি অনুসারে, শুষ্ক মৌসুম (১১ মার্চ থেকে ১১ মে পর্যন্ত) প্রতি ১০ দিন অন্তর ভারতে ও বাংলাদেশে পালাক্রমে ৩৫ হাজার কিউসেকস পানি সরবরাহের বিধান আছে। তবে ভারতের দাবি, একই সময়ে তাদের এখন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কিউসেক অতিরিক্ত পানির প্রয়োজন— যা দেশটির ক্রমবর্ধমান নিজস্ব 'চাহিদা' মেটাতে প্রয়োজন হবে।