মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

এক সপ্তাহের মধ্যে ধর্ষণ মামলার রায় দিয়ে দ্রুত বিচারের নজির

মিজানুর রহমান মিঠু, বাগেরহাট সদর সংবাদদাতা
  ১৯ অক্টোবর ২০২০, ১৭:৩০

বাগেরহাটের মোংলায় আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় পিতৃহীন সাত বছর বয়সি এক শিশু ধর্ষণের অভিযোগের মামলার চার্জ গঠন, সাক্ষীগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক ছয় কার্যদিবসে শেষ করেছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত। রোববার দুপুর দুটা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত টানা তিন ঘণ্টা বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. নূরে আলম এই চাঞ্চল্যকর মামলার বাদী বিবাদী পক্ষের যুক্তিতর্ক শোনেন। যুক্তিতর্ক শেষে সোমবার (১৯ অক্টোবর) সকালে একমাত্র আসামি আ. মান্নান সরদারকে (৫৫) আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ প্রদান করেন।

বাগেরহাটের স্পর্শকাতর একটি ফৌজদারি মামলায় এত কম সময়ে বিচারকাজ শেষ করার নজির বাংলাদেশে এই প্রথম।

আসামি আব্দুল মান্নান সরদার মোংলা উপজেলার মাকোড়ডোন গ্রামের ভূমিহীন আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার মৃত আহম্মদ সরদারের ছেলে।

মামলার নথি থেকে জানা গেছে, বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মাকোড়ডোন গ্রামের ভূমিহীন আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় পিতৃহারা সাত বছর বয়সি এক শিশু তার মামার কাছে মানুষ হচ্ছিল। গত ৩ অক্টোবর বিকাল সাড়ে চারটার দিকে ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রতিবেশী আব্দুল মান্নান সরদার (৫৫) শিশুটিকে বিস্কুট খাওয়ার প্রলোভন দিয়ে নিজের ঘরে ডেকে নেন। এরপর শিশুটির ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। পরে এই ঘটনা জানাজানি হলে ওইদিন রাতেই মেয়েটির মামা মোংলা থানায় আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোংলা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিশ্বজিত মুখার্জ্জী তার তদন্তে ধর্ষণের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে ১৬ জনকে সাক্ষী রেখে আট দিনের মাথায় আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে ১১ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতের বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) গোপাল চন্দ্র পাল এই প্রতিবেদককে বলেন, মামলাটি স্পর্শকাতর হওয়ায় জুডিশিয়াল আদালত মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতে পাঠায়। আদালতের বিচারক গত ১১ অক্টোবর মামলাটি আমলে নিয়ে পরদিন চার্জ গঠন করেন। ১৩ অক্টোবর বাদীপক্ষের মোট ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ১৪ অক্টোবর মামলার সংশ্লিষ্ট সাক্ষী চিকিৎসক, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নারী পুলিশ সদস্য এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ১৫ অক্টোবর আসামির আত্মপক্ষ সমর্থনে সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্য নেন। রোববার বাদী-বিবাদী পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায়ের দিন ঘোষণা করেন। এই ধরনের ফৌজদারি মামলায় দেশের কোনো নিম্ন আদালতে কম সময়ে বিচারকাজ শেষ হয়নি বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সহকারী কৌঁসুলি (এপিপি) রনজিৎ কুমার মন্ডল এই প্রতিবেদককে বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সুস্পষ্ট বলা আছে কোনো ধর্ষণের ঘটনার অভিযুক্ত সঙ্গে সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে ধরা পড়লে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন করা যাবে। এই শিশু ধর্ষণের মামলাটি তারই প্রমাণ। নারী উন্নয়ন ফোরামের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী ও সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান উন্নয়নকর্মী রিজিয়া পারভীন তার প্রতিক্রিয়ায় এই প্রতিবেদককে বলেন, সম্প্রতি বাগেরহাটের মোংলা দরিদ্র পরিবারের একটি শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার কাজ শেষ করেছে। মামলাটির যুক্তিতর্ক আজ শেষ হয়েছে। মামলাটি রায়ের জন্য এখন অপেক্ষমাণ রয়েছে। যেকোনো দিন রায় ঘোষণা হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আন্তরিক থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে যে বিচার কাজ শেষ হতে পারে এটি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দ্রুততার সঙ্গে এমন একটি মামলার বিচার কাজ শেষ করে রায় ঘোষণার অপেক্ষমাণ শুধু বাগেরহাট না সারাদেশের জন্য দৃষ্টান্ত হবে। এই রায়ের মধ্য দিয়ে বিচার কার্যের যে দীর্ঘসূত্রতা ছিল বা সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের বিচার না পাওয়ার যে ভ্রান্ত ধারণা ছিল তা অনেকাংশে দূর হবে। দেশের সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে বলে মত দেন এই নারী নেত্রী।

তবে এই বিষয়ে জানতে আসামি পক্ষের সরকার নিযুক্ত আইন সহায়তা কেন্দ্রে আইনজীবী লিয়াকত আলীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে