অ্যাকুরিয়ামে বাহারি মাছ

প্রকাশ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

নাহিদ বিন রফিক
মানুষ সৌন্দযের্র পূজারি। প্রকৃতির বিচিত্র বাহারি মাছ যখন স্বচ্ছ কাচের জলজবাগানে ঘুরে বেড়ায় তা দেখতে কার না ভালো লাগে! অ্যাকুরিয়াম হচ্ছে এমনি ধরনের চারদিকে কাচ দিয়ে ঘেরা জলধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পাত্র, যেখানে মাছ ও উদ্ভিদ রাখা সম্ভব। অ্যাকুরিয়াম কেবল শখ কিংবা শোভাবধর্নকারী নয়, এর বাণিজ্যিক গুরুত্বও রয়েছে বেশ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে রাজধানীর কঁাটাবনে গড়ে উঠেছে অ্যাকুরিয়ামের জমজমাট ব্যবসা। পাশাপাশি নিউমাকের্ট, গুলশান এবং বনানীতে বেশ কটি দোকান রয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতেও এর যাবতীয় উপকরণ পাওয়া যায়। যদিও কোনো এক সময় অ্যাকুরিয়ামে মাছ পালন ছিল ব্যয়সাধ্য। এখন তা কিন্তু নয়। শৌখিনতা ও ক্রয়ক্ষমতার কারণে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ইচ্ছে করলে আপনিও এর অংশীদার হতে পারেন। অ্যাকুরিয়াম তৈরি : অ্যাকুরিয়াম তৈরির জন্য প্রথমেই আকৃতি নিবার্চন করতে হয়। আয়তাকার, ত্রিকোণাকার, বোতলাকৃতি, ছয়কোণা যে কোনো ফ্রেমেই হোক; তাতে পানির চাপ সহ্য করতে পারবে এমন শক্ত ও স্বচ্ছ কাচ ব্যবহার করা উচিত। এ জন্য কাচের পুরু হবে কমপক্ষে ৬০ মিলিমিটার এবং এর সংযোগস্থলে বিশেষ ধরনের আঠা লাগাতে হবে। তলার কাচটি (ধারক) অবশ্যই ভারি হওয়া দরকার, যাতে অ্যাকুরিয়ামের পুরো ওজন বহন করতে পারে। তবে আকার বড় হলে লোহার ধারক ব্যবহার সবচে’ নিরাপদ। উপরের ঢাকনা হিসেবে কাঠ, প্লাস্টিক কিংবা অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া ঢাকনা খোলা এবং বন্ধ করার ব্যবস্থা রাখা দরকার। আরেকটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে, অ্যাকুরিয়ামের প্রস্থ এবং উচ্চতা উভয়ই যেন দৈঘের্্যর অধের্ক হয়। উপকরণ : অ্যাকুরিয়ামে মাছ পালনের জন্য যেসব উপকরণ দরকার; তা হলোÑ মোটা বালি, পাথর কুঁচি, জলজ উদ্ভিদ, ফিল্টার, এয়ার মোটর, এয়ার এক্সিকিউটর, এনাজির্ বাল্ব, ওয়াটার হিটার এবং রাবারের পাইপ। আজকাল নানান সাইজের অ্যাকুরিয়াম রেডিমেড কিনতে পাওয়া যায়। ঢাকার কঁাটাবনে অ্যাকুরিয়াম তৈরি ও বিক্রির অনেক দোকান রয়েছে। পরিবেশ সৃষ্টি : মাছ পালনে একটি গুরুত্বপূণর্ অংশ হলো অ্যাকুরিয়ামে পরিবেশ সৃষ্টি করা। আর এজন্য উপকরণগুলো একেক করে সাজাতে হবে। অ্যাকুরিয়ামে পানি দেয়ার আগে উদ্ভিদ লাগানোর জন্য তলা প্রস্তুত করতে হয়। এক্ষেত্রে মোটা বালি, পাথরের কঁুচি এবং রঙিন দ্রব্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। তলা প্রস্তুত হলে ভেলিসনেনিয়া, সেরাটোফাইলাম, ওয়াটার স্পাইট, অ্যানাক্যারিশ, ঝঁাঝি, জলজ পদ্ম, শাপলা এসবের যে কোনো উদ্ভিদ রোপণ করতে পারেন। এগুলো শুধু শোভাবধর্নই নয়, এর উপকারিতাও আছে। মাছের বজর্্য থেকে উৎপন্ন বিষাক্ত গ্যাস শোষণ করে পরিবেশ অনুক‚লে রাখে। সব কাজ শেষে পরিষ্কার পানি দিয়ে অ্যাকুরিয়াম ভতির্ করতে হবে। সৌন্দযর্ বৃদ্ধি এবং উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণের জন্য অ্যাকুরিয়ামে কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা থাকা দরকার। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা করে বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে রাখতে হবে। বাহারি মাছ : বাহারি মাছের অধিকাংশই বিদেশি। এ ধরনের মাছের মধ্যে গোল্ড ফিশ অনন্য। ওরা শান্ত প্রকৃতির হয়। দেহের গঠন অনুযায়ী গোল্ড ফিশ দু’ধরনের। লম্বা ও ডিম্বাকৃতি। এগুলো হলোÑ রুইকিন, ওয়াকিন, জাইকিন, কমেট, ওরান্ডা, ফান্টাইল, রানচু, বøাক মোর, ভেইল টেইলসহ আরও শতাধিক। মাছের খাদ্য : মাছের ওজনের প্রায় ৫% হারে সকাল বিকাল দু’বার খাবার দিতে হয়। এ জন্য শুকনো টিনজাত, প্যাকেটজাত এবং প্রাকৃতিক খাবার রয়েছে। শুকনো খাদ্যের মধ্যে আছে আটা, ময়দাসহ অন্যান্য খাদ্যশস্যের মিহি গুঁড়া। টিনজাত খাবারের মধ্যে সিদ্ধ নরম সবজি, চিংড়ি, লবস্টার, বিভিন্ন প্রাণীর হৃৎপিন্ড, যকৃত, কিডনি এবং ডিমের কুসুম। আর প্রাকৃতিক খাদ্য যেমন- এককোষী প্রাণী, কেঁচো, প্লাংকটন, লাভার্ ও টিউবিফেক্স। এ ছাড়া বাজারে কৃত্রিম খাবারও পাওয়া যায়। অন্যান্য : অ্যাকুরিয়ামে বায়ু সঞ্চালন অত্যাবশ্যক। তাই কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হবে। অ্যাকুরিয়ামের সৌন্দযর্ বাড়াতে এর তলদেশের মাটি দিয়ে পাহাড়, পবর্ত, নালা এসব তৈরি করা যায়। এ ছাড়া শামুক কিংবা ঝিনুকের খোল অথবা চীনা মাটির টুকরো দিয়েও সাজাতে পারেন। পরিচযার্ : মাছের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধি বজায় রাখতে নিয়মিত পরিচযার্ করতে হবে। এর অবহেলায় মাছের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। পানির রঙ ঘোলাটে, লাল বা সবুজ বণর্ কিংবা গন্ধ বের হলে সাথে সাথে পরিবতর্ন করা উচিত। এ কাজ সপ্তাহে একদিন করলে ভালো হয়। প্রথমে মাছগুলো একটি পানির পাত্রে রাখতে হবে। এরপর একটি লম্বা রাবারের পাইপ অ্যাকুরিয়ামের তলদেশে রেখে মুখ দিয়ে একটু বাতাস টেনে ছেড়ে দিয়ে নিচে রাখা খালি বালতি বা পাত্রে পানি রাখতে হবে। এরপর পুনরায় পরিষ্কার পানি দিতে হবে। রোগ প্রতিরোধ : অন্য মাছের মতো বাহারি মাছেও রোগ হওয়াটা স্বাভাবিক। তাই অ্যাকুরিয়ামকে সবমসয় জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। এ জন্য ফরমালিন, ডেটল, সেভলন, লবণ এসব ব্যবহার করতে পারেন। তবে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়। মাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এক ধরনের তরল ভিটামিন পাওয়া যায়। দেখতে গোলাপি রঙের। এগুলোর দু’তিন ফেঁাটা খাবারের সাথে মিশিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে। এরপর খেতে দিলে ভালো হয়। যদি রোগ হয়েই যায়, তখন চিকিৎসা জরুরি। অ্যাকুরিয়ামে পালিত মাছে যেসব রোগ হতে পারে; এর মধ্যে লেজ পচা, অ্যাঙ্কর, কোষ্ঠকাঠিন্য, সাদা দাগ রোগ অন্যতম। লেখক: টেকনিক্যাল পাটিির্সপেন্ট, কৃষি তথ্য সাভির্স, বরিশাল।