শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মরুভূমির মিষ্টি ফল ত্বীন এখন গাজীপুরে

আবুল হোসেন, গাজীপুর
  ২২ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

মরুভূমির মিষ্টি ফল ত্বীন এখন চাষ হচ্ছে গাজীপুরে। পবিত্র কোরআনে আত ত্বীন সূরায় এ ফলের কথা আছে। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বারতোপা গ্রামে মডার্ন অ্যাগ্রো ফার্ম অ্যান্ড নিউট্রিশন নামের ফার্মে ত্বীন ফলের চাষ করছে। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় ত্বীন ফল ও চারা বিক্রি হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় ব্যবস্থাপক পারভেজ আলম বাবু জানান, বারতোপা এলাকায় সাতবিঘা জমিতে ত্বীন ফলের চাষ করছেন। মাদার পস্ন্যান্ট (মূল গাছ) থেকে তৈরি করা কলমের তিন মাস বয়স থেকে ফল দেওয়া শুরু করে। ফল ধরার এক সপ্তাহের মধ্যে খাওয়ার উপযোগী হয়। প্রতিটি গাছে নূ্যনতম ৭০ থেকে ৮০টি ফল ধরে। সারা বছরই গাছ থেকে ফল পাওয়া যায়। প্রতিটি গাছ ৬ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। খোলা মাঠ ছাড়াও টবের মধ্যে ছাদ বাগানে ত্বীন চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া গেছে।

ত্বীন ফল ও গাছের ব্যাপক চাহিদার কারণে সাতটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ফার্ম কর্তৃপক্ষ। এখান থেকে কলম তৈরি করে এর নিজেদের পস্ন্যান্ট ছাড়াও চাষিদের মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া ও যশোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ফল বিক্রেতাসহ ভোজন রসিকরা এখান থেকে ত্বীন কিনে নিয়ে যান। প্রতিদিন ১৫ থেকে ১৬ কেজি ত্বীন বিক্রি হচ্ছে। যার প্রতিকেজির মূল্য এক হাজার টাকা। ফলের পাশাপাশি শৌখিন চাষিরা চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। দুই মাস বয়সি চারার পাইকারি মূল্য ৫২০ টাকা ও খুচরা মূল্য ৭২০ টাকা। এখান থেকে প্রতি মাসে দুই হাজার চারা বিক্রি হচ্ছে। ১০ থেকে ২০ হাজার টাকায় টবসহ ফল ধরা চারা বিক্রি হচ্ছে।

ত্বীন গাছে রোগ-জীবাণু সংক্রমণের মাত্রা একদমই কম। সৌদি আরব ও বাংলাদেশ এ ফলকে ত্বীন নামে ডাকলেও অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে ভারত, তুরস্ক, মিশর, জর্দান ও যুক্তরাষ্ট্রে এটি আঞ্জির নামে পরিচিত। ডুমুরজাতীয় এ ফলটির বৈজ্ঞানিক নাম ঋরপঁং পধৎরপধ ও পরিবারের নাম সড়ৎধপবধব. এ ফলটি পুরোপুরি পাকলে রসে ঠাসা ও মিষ্টি হয়ে ওঠে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা আজম তালুকদার বলেন, ২০১৪-২০১৫ সালে তিনি থাইল্যান্ড থেকে জীবন্ত গাছ এবং তুরস্ক থেকে ত্বীন গাছের কাটিং নিয়ে আসেন। ২০১৭ সালে বাণিজ্যিকভাবে চারা উৎপাদন ও আবাদ শুরু করা হয়। প্রতিটি গাছে প্রথম বছরে কেজি, দ্বিতীয় বছরে ৭/১১ কেজি, তৃতীয় বছরে ২৫/৪ কেজি পর্যন্ত ফল ধরে। এভাবে ক্রমবর্ধিতহারে একটানা ৩৪ বছর পর্যন্ত ফল দিতে থাকে। গাছটির আয়ু হলো প্রায় ১০০ বছর। তিন মাসের মধ্যেই শতভাগ ফলন আসে। আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ডুমুর আকৃতির এ ফল সবার দৃষ্টি কেড়েছে। প্রতিটি পাতার গোড়ায় গোড়ায় ত্বীন ফল জন্মে থাকে। ত্বীন একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল, যা মরু অঞ্চলে স্বাচ্ছন্দ্যে জন্মায়। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়ার সঙ্গে বেশ এখন মানিয়ে নিয়েছে ত্বীন। ত্বীন কোনো রাসায়নিক সার ছাড়াই, মাটিতে জৈব ও কম্পোজড সার মিশিয়ে রোদে মাঠে ও ছাদে টবে লাগিয়ে ফল উৎপাদনে সাফল্য পাওয়া গেছে। তাই ছাদ বাগানিদের মধ্যে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। দেশে ছাড়াও বিদেশে এ ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ইতিমধ্যে ভারত ও জাপানে আমাদের কাছে ত্বীন ফলের চাহিদার কথা জানিয়েছে। ত্বীন জলবায়ু অর্থাৎ শুষ্ক ও শীতপ্রধান দেশে চাষ হলেও আমরা প্রমাণ করেছি নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতেও ৩৬৫ দিন এ ফল উৎপাদন সম্ভব। বিদেশে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম। এ ফল আমাদের দেশে সারা বছর পুষ্টি ও ফলের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। তিনি আরও জানান, ত্বীন ছাড়াও গাজীপুরে তার বাগানে বিচি ছাড়া পেঁপে, আঠা ও বীজহীন কাঁঠাল, জৈতুন, চেরি, আপেল, মাল্টাসহ বিদেশি অনেক ফলগাছের চারা উৎপাদন ও তা সম্প্রসারণের কাজ চলছে।

গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া এলাকার ছাদ বাগান চাষি মো. আক্রাম হোসেন জানান, ফলটির অনেক গুণের কথা শুনে শখ করে আমি ছাদ বাগানে অন্য গাছের সঙ্গে সৌদি আরবের ত্বীন ফল গাছের চারা টবে লাগিয়েছি। দুই মাস পরেই ফল আসা শুরু হয়। পাকা ফল খেতে বেশ সুস্বাদু ও মিষ্টি। এ গাছে তেমন রোগ-বালাই নেই। ফলনও ভালো।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গাজীপুর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মাহবুব আলম জানান, প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে ত্বীন ফলের চাষ কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হবে এবং অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে ত্বীনের আমদানিনির্ভরতা কমে আসার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।

বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে এ কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, ব্রেস্ট ক্যান্সার রোধে এ ফলটি খুবই উপকারী। এ ছাড়া নানা রোগ নিরাময়ে বিশেষ করে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ত্বীন। এটি চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য ও হাঁপানি রোগ নিরাময়েও সহায়তা করে। মানসিক ক্লান্তি দূর করে। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও ক্যালিসিয়ামসহ নানা ভেষজ গুণ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে