শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাবনায় শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষক

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, পাবনা
  ২৯ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০

পাবনার সবজি ভান্ডার খ্যাত সদর, ঈশ্বরদী, আটঘরিয়াসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শীতকালীন সবজির আবাদ হয়। চাষিরা বাম্পার ফলন ও দাম দুটোই পায়। কৃষি রবিশস্য ও শীতকালীন সবজিসহ মৌসুমি ফসলে এ জেলার কৃষকরা ঝুঁকে পড়েছেন। দেশের বিভিন্ন জেলাসহ বিদেশেও এ জেলার উৎপাদিত সবজি বাজারজাত করা হচ্ছে। বড় বড় পাইকাররা এসে ট্রাকযোগে নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

বুধবার পাবনা সদরের মনোহরপুর, দাপুনিয়া, ঘরনাগড়া, রানীগ্রাম, চাঁদপুর, ঈশ্বরদীর আওতাপাড়া, ছলিমপুর, বাঁশেরবাদা, আটঘরিয়ার চাঁদভা, পারখিদিরপুর, খিদিরপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায় মাঠে সবজির সমারোহ। চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন সবজির পরিচর্যায়। ভোররাত থেকেই জমি থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে হরেক রকম সবজি। ভোরেই তোরা দিচ্ছে হাটবাজারে নতুবা পাইকারদের হাতে।

৭০ হাজার টাকায় সাড়ে চার বিঘা জমি লিজ নিয়েছেন কৃষক ওহিদুর ইসলাম। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই তিনি কৃষি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর ৭০ হাজার টাকা ফুলকপি আবাদে ব্যয় করেছেন। আর কিছু দিনের মধ্যেই হয়তো ফলানো সবজি তার স্বপ্ন পূরণ করবে। ওহিদুর ইসলাম পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার আওতাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

পাবনা সদরের দাপুনিয়া ইউনিয়নের সাহাদিয়ারের কৃষক নায়েব প্রামাণিক। ষাটের ঘর পার করেছেন কৃষি কাজ করে। শীতকালীন সবজি চাষই তার জীবনের মূল চালিকা শক্তি। শীতকালীন এই মৌসুমি সবজি তাকে স্বপ্ন দেখায়। তিনিও স্বপ্ন দেখেন তার ফলানো সবজি ক'দিন বাদেই টাকায় পরিণত হবে। এক বিঘা জমিতে ফুলকপি আবাদে সাড়ে ৬ হাজার চারাগাছের প্রয়োজন। তার দাবি, সবজি বাজার নামতে শুরু করেছে। সপ্তাহখানেক সময়ের ব্যবধানে সবজিগুলো তুলতে পারলেই অন্তত লাভের মুখ দেখবেন, নতুবা তাকে আর্থিক ক্ষতির সন্মুখীন হতে হবে।

সদরের মনোহরপুর গ্রামের বাসিন্দা বিদেশ ফেরত সাইফুল ইসলাম। দেশে এসে কৃষি কাজে মনোযোগী হয়েছেন। মৌসুমি সবজি ও সাথী ফসল ফলান তিনি। এবারও বেশ কয়েক বিঘা জমি লিজ নিয়ে শীতকালীন নানা জাতের সবজি চাষ করছেন। ইতোমধ্যে বেগুন, শসা, মুলা, ফুলকপি ও বিভিন্ন ধরনের শাকের আবাদ করেছেন। ভালো দামও পেয়েছেন। সবজির এ বাজারই যেন তাকে স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছে।

সবজি চাষিরা জানান, মানুষের মধ্যে এক ধরনের অপপ্রচার রয়েছে সবজিতে বিষ প্রয়োগ। আসলে সবজিতে যে বিষ বা কীটনাশক দেয়া হয়, মূলত সেটা সবজির জন্য পুষ্টি বা ভিটামিন। সবজিকে পোকা মাকড়ের হাত থেকে রক্ষা এবং পুষ্ট করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা বলেন, সবজি চাষে সব সময় আমরা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শক্রমেই বিষ বা কীটনাশক স্প্রে করি।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি সূত্রে জানা যায়, এবারে জেলায় শীতকালীন সবজির মধ্যে লালশাক, মুলা, গাজর, করলা-উস্তে, ঢঁ্যাড়শ, পালংশাক, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, পটল, গীমা কলমি, শীম, লাউ, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শসা, পুঁইশাক, বেগুন, মটরশাক, মটরশুঁটি, বরবটি, ডাটা, ধুনেরপাতা, ধুন্দল, চালকুমড়া, ওলকপি, খিরা, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, শালগম, কাকরোল, কাঁচাকলা ও পেঁপের আবাদ হয়েছে। এবারে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। আর আবাদ হয়েছে ১৯ হাজার ৪৫৯ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৬৫০ টন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে