শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে ২০টি নতুন চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন

আল ইমরান শোভন, চাঁদপুর
  ০৬ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০

চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষক ও বিজ্ঞানীরা তিন যুগে চাষের উপযোগী ২০টি নতুন মাছচাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। প্রথমে পুকুরে ইলিশের চাষ গবেষণা সফলতা না মিললেও গবেষকদের অদম্য প্রচেষ্টায় দেড় দশকের ব্যবধানে এক সময় ক্রমহ্রাসমান ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। ফলে ফিরেছে ইলিশের ঐতিহ্য, বেড়েছে অর্থনৈতিক গুরুত্ব।

বর্তমানে দেশে ইলিশের উৎপাদন ৫ লাখ ৩৩ হাজার টন ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশের প্রধান ইলিশ গবেষক ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট চাঁদপুর নদীকেন্দ্রের মুখ্য প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আনিসুর রহমান। তিন দশক ইলিশ নিয়ে গবেষণা করছেন তিনি। এছাড়া দেশে সর্বপ্রথম থাই পাঙাশের সফল প্রজনন, ইলিশ মাছের ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং খাঁচায় মাছচাষ উদ্ভাবন করেছেন এই নদীকেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।

আনিসুর রহমান জানান, এই ইনস্টিটিউট বেশ কটি নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে ইলিশ নিয়ে গবেষণা ও খাঁচায় মাছচাষ অন্যতম। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ ইলিশ মাছের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইনডিকেশন) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। বিশ্বে যে পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যায়, তার ৭৫ শতাংশের বেশি পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশে।

চাঁদপুর নদী গবেষণা কেন্দ্র পাঁচটি গবেষণা প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। এগুলো হলো : ইলিশ মাছের মজুত নিরূপণ ও গবেষণা, সেমি ন্যাচারাল ব্রিডিং, হালদা নদীতে রুই-কাতলজাতীয় মাছের পোনা উৎপাদনে নদীর পানি দূষণের প্রভাব, নদনদীর বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ মাছের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিরূপণ এবং বদ্ধজলাশয়ে বোয়াল মাছকে অভ্যন্তকরণ ও চাষের জন্য গবেষণা।

ড. আনিস আরও বলেন, বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর দূষণের প্রকৃতি নির্ণয়, জলজপ্রাণির ক্ষতিকর প্রভাব, হিলশা ম্যানেজমেন্ট অ্যাকশন পস্ন্যান, জলবায়ুর পরিবর্তন ও এর প্রভাব, বোয়াল মাছের প্রজনন ও প্রাকৃতিকভাবে পোনা সংরক্ষণ, তেলাপিয়ার রোগ ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ চলছে।

নদীর পানির মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র, টেকনোলজিক্যাল ল্যাবরেটরি ও লিমানোলজিক্যাল ডিজিজ ল্যাব নামে একসঙ্গে তিনটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এখানে। ফলে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সদর দপ্তরসহ পাঁচটি কেন্দ্রের অন্যতম নদীকেন্দ্র চাঁদপুরে করা হয়। চাঁদপুর নদীকেন্দ্রের উপকেন্দ্র হিসেবে আরও দুটি গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে- যা রাঙ্গামাটি নদী উপকেন্দ্র ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়া নদী উপকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা কেন্দ্রে ইতোমধ্যে ইলিশ সম্পদের উন্নয়ন ও সংরক্ষণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, কার্পজাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন উৎস চিহ্নিতকরণ, পেনে মাছ চাষ ও পাঙাশ মাছের পোনা উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে।

বিএফআরআই চাঁদপুর নদীকেন্দ্র গবেষণা করে মাছের উন্নত জাতসহ আধুনিক উপায়ে মাছচাষের বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে ইলিশসম্পদ সংরক্ষণের কৌশল ও ব্যবস্থাপনা, পুকুরে পাঙাশ চাষে একক ও মিশ্র চাষাবাদ প্রযুক্তি, থাই পাঙাশ চাষের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন, পেনে মাছ চাষের কলাকৌশল, গৃহাঙ্গন হ্যাচারিতে গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদন, পুকুরে গলদা চিংড়ির একক ও মিশ্র চাষ, ধানি জমিতে মাছচাষ, মাছ ও জলজ পরিবেশের ওপর কীটনাশকের বিষক্রিয়া নিরূপণ, কাপ্তাই হ্রদের জৈব ব্যবস্থাপনা ও জলাশয় তাত্ত্বিক সমীক্ষা, খাঁচায় তেলাপিয়া চাষ, নদনদীর পানির নবায়ন ও দূষণবিষয়ক সমীক্ষা, ইলিশ মাছ গবেষণা ও ব্যবস্থাপনা, এছাড়া হাওর-খাল-বিলে কীভাবে মাছ উৎপাদন বাড়ানো যায়, তার গবেষণা চলছে এই কেন্দ্রে।

চাঁদপুর নদীকেন্দ্র ১৯৯৫ সালে থাই পাঙাশ মাছের পোনা উৎপাদন সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে রৌপ্যপদক, ২০১০ সালে রুই মাছের উন্নতজাত উদ্ভাবনের জন্য স্বর্ণপদক এবং ২০১৮ সালে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখায় স্বর্ণপদক লাভ করেছে। গবেষণার ফলে ইলিশ উৎপাদনে অভূতপূর্ব সাফল্যের কারণে চাঁদপুর জেলাকে 'সিটি অব হিলশা' নামে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে