ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় গদখালীর ফুলচাষিরা

প্রকাশ | ১৩ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০

মিলন রহমান, যশোর
করোনা লকডাউনে ধসের পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন যশোরের গদখালীর ফুলচাষিরা। ভরা মৌসুম সামনে রেখে চারারোপণ, ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটালেও শঙ্কার কালো ছায়ায় কুঞ্চিত তাদের কপাল। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে মহামারি বাড়লে, উৎসব-অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে ফের ধাক্কা খেতে হবে তাদের। করোনার প্রথম ধাক্কার ক্ষয়ক্ষতিই এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি তারা। ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালীর ফুলচাষিরা জানান, আসন্ন বিজয় দিবস, ইংরেজি নববর্ষ, বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, পহেলা বৈশাখ ঘিরে এই অঞ্চলের ফুলচাষিরা বিপুল পরিমাণ ফুলের উৎপাদন করেন। গত বছর মার্চে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর মৌসুমের একটি অংশসহ বছরের বাকিটা সময় তারা বিপুল ক্ষতির শিকার হয়েছেন। কোটি কোটি টাকার ফুল ক্ষেতেই নষ্ট হয়েছে। গরু ছাগল দিয়ে ফুল খাইয়ে দিতে হয়েছে। আসন্ন মৌসুমের বাজার ধরতে নতুন করে ক্ষেতে ফুলের আবাদ শুরু করলেও করোনা আতঙ্ক তাদের মনে। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম জানান, যশোর জেলায় প্রায় ৬ হাজার কৃষক দেড় হাজার হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করে থাকেন। এই চাষ এখন ১ হাজার হেক্টরে নেমে এসেছে। আম্ফান ও করোনার কারণে কৃষি সেক্টরের মধ্যে ফুলচাষিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় তারা কোনো সহযোগিতা পায়নি বললেই চলে। এমনকি মাত্র দেড়শ' কৃষক প্রণোদনার ঋণের তালিকায় রয়েছে। এই অবস্থায় ফুলচাষিদের প্রণোদনা, ঋণ সুবিধাসহ তাদের পাশে না দাঁড়ানোয় এই সেক্টরে বিপর্যয় নেমে আসার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। সূত্র জানায়, আশির দশক থেকে বাণিজ্যিকভাবে ফুলচাষ শুরু করেন যশোরের ফুল চাষিরা। যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী এলাকার এসব চাষি- গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গস্নাডিউলাস, রজনীগন্ধা, জিপসি, রডস্টিক, ক্যালেনডোলা, চন্দ্রমলিস্নকাসহ একডজন ফুলচাষ করে সারাদেশে ফুলের বাজার সৃষ্টি করেন। দেশের মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ ফুল এই অঞ্চল থেকে সরবরাহ করা হয়। এ বছরের মার্চ মাস থেকে বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতি ছাড়াও সুপার সাইক্লোন ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েন ফুলচাষিরা। বৈরী আবহাওয়ার কারণে গত মৌসুমে তারা ফুল চাষ করে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে। ফুলচাষিরা আরও জানান, এর আগে তারা হরতাল-অবরোধসহ নানা কারণে ফুলের উৎপাদনে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তবে এ বছর যে পরিস্থিতি হয়েছে তা আগে কখনো দেখেননি। দীর্ঘস্থায়ী সংকটের কারণে তারা পথে বসে গেছেন। গদখালীর পটুয়াপাড়া গ্রামের ফুলচাষি লিয়াকত হোসেনের গস্নাডিউলাসের শেড আম্ফান ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েন করোনায়। পরে সেই শেডে টমেটোর চাষ করে জীবন জীবিকা টিকিয়েছেন। এখন আবার গস্নাডিউলাস চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু শেড সংস্কার করতে ৮ লাখ টাকা দরকার। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার। গদখালীর পানিসারার ফুলচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, অনেক কৃষক তাদের গোলাপের ক্ষেত পরিচর্যা করছেন। কিন্তু করোনা সংক্রমণের শঙ্কায় তারা আতঙ্কে রয়েছেন। জমিতে নতুন নতুন ফুল গাছ লাগাচ্ছেন, সার-কীটনাশক, সেচ দিচ্ছেন ঠিকই তবে তাদের মধ্যে বিরাজ করছে করোনার আতঙ্ক। করোনা সংক্রমণের হার বাড়লে তাদের অবস্থা ম্স্নান হয়ে যাবে। একই এলাকার ফুলচাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, অন্যান্য বছরে এই নভেম্বর মাসে ফুলের বাজার জমজমাট হয়ে ওঠে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা নববর্ষের জন্য ফুলের আগাম বুকিং দিতে আসেন। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে সে পরিস্থিতি ম্স্নান হয়ে গেছে। এখন ব্যবসায়ীরা যোগাযোগ করলেও তারা সামনে কী পরিস্থিতি হবে তা নিয়ে দোটানায় ভুগছেন। আমরা ফুলের ক্ষেতের পরিচর্যা করলেও সামনের বাজার কী হবে তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম দাবি করেছেন, অন্তত সীমিত পরিসরেও যদি সরকার সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোর বিধি নিষেধ তুলে দেয়, তাহলে ফুলের বাজার রক্ষা পাবে। আর যদি এ বছরও করোনার কারণে উৎসব আয়োজন বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে ফুলচাষিদের ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা আতঙ্কের শেষ নেই।