শর্ষের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌচাষিরা

প্রকাশ | ০৩ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

সঞ্জয় সূত্রধর, শিবালয়, মানিকগঞ্জ
শিবালয়ে শর্ষের মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষিরা। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শর্ষে ক্ষেত থেকে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে মধু উৎপাদন ও সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌচাষিরা। মৌচাষিরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে শর্ষে ক্ষেতের পাশে মৌমাছির বক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন। এ বছর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৪-৫ কোটি টাকার মধু সংগ্রহ হবে বলে আশা করছেন চাষিরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শর্ষে ক্ষেত থেকে কোটি কোটি টাকার মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সোনারগাঁও, যশোর, পাবনা, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, নাটোর ও ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মৌচাষিরা হাজার হাজার মধু সংগ্রহের জন্য শর্ষে ক্ষেতের পাশে মৌমাছির বক্স বসিয়ে দিন রাত মধু সংগ্রহ করছেন তারা। মৌচাষিরা প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস থেকেই মধু সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। এখন মধু সংগ্রহের মৌসুম শুরু হয়েছে। উপজেলায় শর্ষে আবাদে মাঠের পর মাঠ শর্ষে ফুলে ফুলে ভরে যাচ্ছে। মাঠের দিকে তাকালে দেখা যায়, শর্ষে ফুলের রঙে হলুদ আর হলুদ হয়ে গেছে সারা এলাকা। প্রতিটি শর্ষের মাঠে বসানো হয়েছে সারিবদ্ধভাবে হাজার হাজার মৌমাছির বক্স। লাখ লাখ মৌমাছি হলুদ রঙের শর্ষে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে বক্সে জমা করছে। আট-দশ দিন পর পর ওইসব মৌমাছির বক্স থেকে মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষিরা। প্রতিটি মৌমাছির বক্সে প্রায় এক লাখ করে আর একটি করে রানী মাছি থাকে। রানী মাছি ডিম দেয়। সারাদিন মধু সংগ্রহকারী মাছিগুলো শর্ষে ফুলের মধু সংগ্রহে ব্যস্ত থাকে। প্রতিটি মৌমাছির বক্স থেকে আট-দশ দিন পরপর ২০-২৫ লিটার মধু সংগ্রহ করছেন চাষিরা। ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার চন্ডী গ্রামের ১৭২টি বক্স নিয়ে আসা 'মেসার্স মিলন খান' মৌ খামারের মালিক জানান, ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু করে মে মাস পর্যন্ত শর্ষে ফুলের মধু সংগ্রহ করেন তারা। বছরের ৬ মাস তারা মধু সংগ্রহ করেন আর বাকি ৬ মাস রিনি সিজেনে মৌমাছি পালন করেন। তিনি ৬ জন কর্মচারী ও একশ' ৭২টি মৌমাছির বক্স নিয়ে শিবালয় উপজেলার বোয়ালী শর্ষে ক্ষেতের মাঠে এসেছেন। সে সরকারিভাবে তিন মাসের ট্রেনিং নিয়ে ১২ বছর ধরে মৌমাছি পালন করে প্রতি বছর শর্ষে ক্ষেতের মধু সংগ্রহ করছেন। \হবর্তমানে ১৭২টি মৌমাছির বক্স থেকে আট-দশ দিন পরপর ১০-১২ মণ করে মধু সংগ্রহ করছেন। তিনি আরও জানান, সরকারিভাবে তেমন কোনো সহযোগিতা ও মধুর দাম কম হওয়ায় মৌচাষে তাদের তেমন লাভ হচ্ছে না। বর্তমানে তারা মধু বিক্রি করছেন মাত্র তিনশ' টাকা থেকে তিনশ' ৫০ টাকা কেজি দরে। এতে তাদের কর্মচারীসহ বিভিন্ন খরচপাতিতে বেশি ব্যয় হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ রিয়াজুর রহমান জানান, এ উপজেলায় এ বছর ৫ হাজার ৫শ' হেক্টর জমিতে শর্ষের আবাদ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় মৌচাষিরা কেবল এসে মধু সংগ্রহ শুরু করেছেন। তবে মধু চাষিরা এবার প্রায় ৫ টন মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। মধু সংগ্রহের জন্য মৌচাষিদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। তবে তারা খুচরাভাবে মধু বিক্রি করে সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না। যদি সরকারিভাবে মধুর মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয় তাহলে মৌচাষিদের আগ্রহ আরও বাড়বে। এ মধু দেশের বাহিরেও যাচ্ছে। দেশে অনেক বেকার যুবক রয়েছেন। কিন্তু তারা সরকারিভাবে ট্রেনিং নিয়ে মৌচাষ করলে বেকারত্ব অনেক কমে যাবে এবং বেকার যুবকরা সাবলম্বী হতে পারবেন।