বিদেশি সবজিতে ফিরেছে দেশি স্বাদ

প্রকাশ | ০৩ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

আলতাব হোসেন
দেশি স্বাদ ফিরেছে বেশির ভাগ সবজিতে। দেশের উৎপাদিত সবজিতে এখন ফিরে এসেছে আগের স্বাদ। এক দশক আগেও উচ্চ ফলনশীল জাতের সঙ্গে ব্রিডিং করে দেশে হাইব্রিড বীজ বিপণন করা হতো। এতে পরিপূর্ণ স্বাদ পাওয়া যেত না। এখন দেশীয় আবহে বেড়ে ওঠা সবজির প্রজাতিগুলো থেকে বাছাই করা প্যারেন্ট লাইনে উৎপাদিত উচ্চ ফলনশীল জাতগুলো থেকে সবজি বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত সবজির ৯০ শতাংশই বিদেশি হাউব্রিড। হাইব্রিড জাতের বীজ বাজারে বিপণন করছে দেশীয় বীজ কোম্পানিগুলো। বিদেশি হাইব্রিড বীজে ফলন যেমন বেড়েছে, তেমনি দেশি সবজির মতো স্বাদ ফিরেছে। আর সারা বছরই মিলছে হরেক রকমের সবজি। এতে একদিকে জাতগুলোর যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে, তেমনি দেশীয় স্বাদ পরিপূর্ণভাবে বজায় থাকছে। এতে দেশে সবজির চাহিদা বাড়ায় উৎপাদনও বাড়ছে। আর বহির্বিশ্বে দেশীয় মানুষের কাছেও চাহিদা বাড়ছে। ফলে দেশের সবজি রপ্তানি বাড়ছে। আগে টমেটো, লাউ, কপি বা নানা পদের সবজি শীতকাল ছাড়া বাজারে মিলতই না। এখন প্রায় সারাবছরই বাজারে হরেক রকমের সবজি পাওয়া যাচ্ছে। কৃষকরা সারা বছরই ৬০ ধরনের ও ২০০টি জাতের সবজি উৎপাদন করছেন। এসব সবজির ৯০ শতাংশ হাইব্রিড বীজই দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। দেশের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত উন্নত জাত এবং সরকারের বিভিন্ন সহায়তার সঙ্গে কৃষকের পরিশ্রম যুক্ত হয়েই এ সফলতা এসেছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও নগরায়নের ফলে কৃষি জমির পরিমাণ কমলেও টানা ১০ বছর ধরে সবজি উৎপাদন বাড়ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে দেশে এক কোটি ৬২ লাখ কৃষক পরিবার রয়েছে। এসব কৃষক পরিবারের কমবেশি সবাই সবজি চাষ করেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে সবজি উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি সবজির চাহিদাও বেড়েছে। পরিসংখ্যান বু্যরোর সর্বশেষ খানা জরিপের তথ্যমতে, গত এক যুগে দেশে মাথাপিছু সবজি খাওয়া বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। গত এক বছরে শুধু সবজি রপ্তানি আয়ই বেড়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত বীজ সরবরাহের পাশাপাশি অনুকূল আবহাওয়া, চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ, ভালো বীজ ব্যবহারে কৃষকের সচেতনতা বাড়ানো, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর উদ্যোগ ও সরকারের নীতি ও উপকরণ সহায়তা জোরদারের কারণেই সবজির স্বাদ যেমন ফিরে আসছে, তেমনি উৎপাদনও বাড়ছে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (এফএও) তথ্যমতে, সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির হারের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। দেশের শীর্ষস্থানীয় বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লাল তীরের পরিচালক তাজওয়ার এম আউয়াল বলেন, ভালো মানের জাত দিতে না পারার কারণে দেশের কৃষকরা কয়েক বছর অর্গানিক আবাদ পদ্ধতি থেকে বেশ দূরে সরে গিয়েছিলেন। দেশীয় প্রজাতি থেকে বাছাই করা প্যারেন্ট লাইনের মাধ্যমে উৎপাদিত বীজকে হাইব্রিড জাত হিসেবে বাজারজাত করা হচ্ছে। এসব বীজে এখন আর আগের মতো সার ও কীটনাশক দেওয়ার প্রয়োজন নেই। দেশের সেরা জাত থেকে ব্রিডিং করা এসব জাতে সবজির পুরানো স্বাদ ফিরে আসছে। এতে কম জমিতে অধিক সবজি উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। স্থানীয় ৬২ জাতের সবজির উন্নয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৮৫টি জাতের শস্য উৎপাদন ও বাজারজাত করছে লাল তীর। টিয়া করলা, গায়েনা লাউ, সুইটি মিষ্টিকুমড়া, আলভী শসা, মিন্টু টমেটো খুবই জনপ্রিয়। কীটনাশকের কম ব্যবহার স্বাদ ফিরিয়ে আনছে তার তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ক্রপ প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যে। পাঁচ ধরনের কীটনাশক (ইনসেকটিসাইড, ফাঙ্গিসাইড, হারবিসাইড, মিটিসাইড ও রোডেনটিসাইড) ফসলের রোগবালাই ও কীটপতঙ্গ দমনে ব্যবহার করা হয়। ২০০৮ সালে ৪৮ হাজার ৬৯০ টন আমদানি হলেও ২০১৮ সালে তা নেমে এসেছে ৪০ হাজার টনে। চলতি বছরে কীটনাশক আমদানির পরিমাণ আরও কমেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, গত তিন থেকে চার বছরে সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমে আসায় সবজির স্বাদ বেড়েছে। বাংলাদেশের সবজি বীজ বাজারজাতকারী বড় প্রতিষ্ঠান সুপ্রিম সিড কোম্পানির পরিচালক মো. মাহতাব উদ্দিন বলেন, আগে সবজি বীজের জাত উন্নয়ন করা হতো ভারত ও থাইল্যান্ডে। এখন দেশে ব্রিডিং করায় দেশীয় স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে। কৃষকদের বেশি মুনাফা দিতে বীজে রোগ প্রতিরোধী বিভিন্ন উপাদান যুক্ত করায় সার ও কীটনাশক কম ব্যবহার করতে হচ্ছে।