কুমড়ো বড়িতে নারীদের কর্মসংস্থান বাড়ছে বাণিজ্যিক চাহিদা

প্রকাশ | ০৩ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

মিলন রহমান, যশোর
'কুমড়ো বড়ি'। যশোরাঞ্চলের মানুষের একটি পরিচিত ও প্রিয় খাবার। শীত এলেই এ অঞ্চলের মানুষের বাড়িতে বাড়িতে 'কুমড়ো বড়ি' তৈরির ধুম পড়ে যায়। এ অঞ্চলের গন্ডি পেরিয়ে কুমড়ো বড়ি এখন সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে শুধু বাড়িতে খাওয়ার জন্যই নয়; এর বিপণনও হচ্ছে সারাদেশে। যারা ইতিপূর্বে এর নাম শোনেননি, তারাও চেখে দেখছেন এর স্বাদ। বাজারে বিভিন্ন ধরনের কুমড়ো বড়ি পাওয়া গেলেও এ অঞ্চলে সাধারণত চালকুমড়োর সঙ্গে মাষকলাই ডাল মিশিয়ে তৈরি বড়িই স্থানীয়দের বেশি প্রিয়। মাছের ঝোল বা সবজির সঙ্গে রান্না করে খাওয়া হয় উপাদেয় এই খাবারটি। বহু বছর ধরেই গ্রামগঞ্জের নারীরা বাড়িতে খাওয়ার জন্য কুমড়ো বড়ি তৈরি ও সংরক্ষণ করতেন। এখন এটি বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর। বিশেষ করে করোনাকালে গড়ে ওঠা অনলাইন পেজ বা পস্নাটফর্মগুলোতেও বাড়িতে তৈরি কুমড়ো বড়ি বিক্রি করছেন অনলাইন উদ্যোক্তরা। যশোরের বিভিন্ন অঞ্চলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছরের মতো এবারও শীত আসতে না আসতেই গ্রামে গ্রামে কুমড়ো বড়ি তৈরির ধুম পড়ে গেছে। আগে শুধু বাড়িতে খাওয়া এবং আত্মীয়স্বজনদের দেয়ার জন্য কুমড়ো বড়ি তৈরি করতেন নারীরা। এখন বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্যও প্রচুর পরিমাণে কুমড়ো বড়ি তৈরি হচ্ছে। বড়ি তৈরির পদ্ধতি জানাতে গিয়ে যশোরের শার্শা উপজেলার বারোপোত গ্রামের শামীমা আক্তার বললেন, বড়ি দেওয়ার আগের দিন খোসা ছাড়ানো মাষকলাই ডাল পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। আর সন্ধ্যায় পাকা চালকুমড়ার খোসা ছাড়িয়ে ভেতরের নরম অংশ ফেলে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিতে হয়। এরপর কুুমড়োর পানি ঝরিয়ে নিতে মিহি করে কুড়িয়ে পরিষ্কার কাপড়ে বেঁধে সারারাত ঝুলিয়ে রাখতে হয়। পরদিন ভোরে ডালের পানি ছেঁকে মিহি করে বেটে পেস্ট তৈরি করতে হয়। পানি ঝরানো কুমড়োর সঙ্গে প্রায় সমপরিমাণ ডাল ও পরিমাণ মতো লবণ মেশাতে হয়। পরে কড়া রোদে পরিষ্কার কাপড়, চাটাই বা নেটের ওপর ছোট ছোট করে বড়ি দিতে হয়। এরপর কয়েক দফায় রোদে শুকিয়ে নিলে তৈরি হয়ে যায় কুমড়ো বড়ি। প্রতি বছর শীত এলেই চালকুমড়ো ও মাষকলাইয়ের ডাল দিয়ে বড়ি তৈরি করেন শার্শা উপজেলার সামটা গ্রামের স্কুল শিক্ষিকা রেবেকা সুলতানা। তিনি জানালেন, 'বড়ি রোদে শুকিয়ে কৌটায় ভরে অনেক দিন রাখা যায়। তরকারিতে এ বড়ি দিলে খাবার খুব সুস্বাদু হয়।' যশোরের মণিরামপুর উপজেলার বাসিন্দা আসমা আক্তারও এবছর কুমড়ো বড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি জানালেন, ডাল ও কুমড়ো ভালভাবে ফেটাতে হয়। তারপর রোদে ভালভাবে শুকাতে হয়। পুরো প্রক্রিয়া ঠিকমত সম্পন্ন না হলে বড়ির স্বাদ ভালো হয় না। শার্শা উপজেলার জামতলা গ্রামের বাসিন্দা জুলি খাতুন জানালেন, ভালো শীত না পড়লে কুমড়ো বড়ি ভালো হয় না। এটি তেলে ভেজে মাছ বা সবজিতে দিলে খাবারের স্বাদ ও মান বেড়ে যায়। এদিকে শখ বা ঐতিহ্যের খাবার কুমড়ো বড়ি'র বাণিজ্যিক কদরও বাড়ছে। বিশেষ করে অনলাইন পেজ বা পস্নাটফর্মগুলোতেও বিভিন্ন পণ্যের সঙ্গে কুমড়ো বড়িও বিক্রি হচ্ছে। অনলাইন পেজ 'মনোহরী'র উদ্যোক্তা মেহনাজ রহমান লিরা ও জাহানারা বেগম জানালেন, তারা বাড়িতে তৈরি কুমড়ো বড়ি বিক্রি করছেন। তাদের পেজে অর্ডার করলে হোম ডেলিভারির ব্যবস্থাও করছেন। বড়ির মানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তারা ৬৫০ টাকা কেজি দরে তারা বিক্রি করছেন। তারা আরও জানালেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তারা অনলাইনে কুমড়ো বড়ির অর্ডার পাচ্ছেন। এমনকি যারা কোনোদিন নামও শোনেননি, তারাও আগ্রহী হয়ে রান্নার পদ্ধতি জেনে ক্রয় করছেন এবং স্বাদ পরখ করে একাধিক বার ক্রয়েরও অনেক ঘটনা রয়েছে। যশোরের অনলাইনভিত্তিক 'কারুভূমি'র স্বত্বাধিকারী শিরিন সুলতানা জানালেন, শুধু দেশেই নয়; প্রবাসীদের কাছেও এর চাহিদা রয়েছে। সারাদেশ থেকেই তারা অর্ডার পাচ্ছেন। 'উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স' এবং 'উইনি' পেজ থেকেও অনেক ক্রেতা কুমড়ো বড়ি কিনছেন বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন।