এবার কালো মুরগির বিপস্নব

বিরল প্রজাতির এই কালো মুরগির মাংস যারা খেয়েছেন- তাদের ভাষ্যমতে, এর স্বাদ খুবই সুস্বাদু। শুধু সুস্বাদুই নয়, ওষধি গুণে ভরপুর। ভারতের বিভিন্ন এলাকায় এই কাদাকনাথ বা কালো মুরগির মাংস মূলত ওষুধ হিসেবেই খাওয়া হয়। বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে এর ব্যবহার হয়ে থাকে এবং তুলনামূলকভাবে অন্য সব জাতের মুরগি থেকে এর দাম বেশি।

প্রকাশ | ১০ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

আমজাদ হোসেন, নরসিংদী
কামরুল ইসলামের খামারে বিরল প্রজাতির কালো মুরগি
দেখতে কুচকুচে কালো। শুধু পাখনা-পশমই কালো নয়; মাংস এবং মাংসের ভেতর হাড়ের রংও কালো। তবে, ডিমের রং ব্রাউন বা বাদামি। ভারতের উত্তর প্রদেশে এর উৎপত্তি। ভারতে এর নাম কাদাকনাথ। কিন্তু আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে 'বিদেশি কালো মুরগি' বা শুধু 'কালো মুরগি' নামেই পরিচিত। বিরল প্রজাতির এই কালো মুরগির মাংস যারা খেয়েছেন- তাদের ভাষ্যমতে, এর স্বাদ খুবই সুস্বাদু। শুধু সুস্বাদুই নয়, ওষধি গুণে ভরপুর। ভারতের বিভিন্ন এলাকায় এই কাদাকনাথ বা কালো মুরগির মাংস মূলত ওষুধ হিসেবেই খাওয়া হয়। বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে এর ব্যবহার হয়ে থাকে এবং তুলনামূলকভাবে অন্য সব জাতের মুরগি থেকে এর দাম বেশি। বিদেশি এই মুরগি আমাদের দেশে সখেরবশে কেউ এনে থাকতে পারে। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে এর প্রথম আমদানি করেছেন কামরুল ইসলাম (মাসুদ)। তার বাড়ি নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার মজলিশপুর গ্রামে। এই মজলিশপুরেই তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রায় ৮ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন 'লামস বার্ড অ্যান্ড হ্যাচারি' নামে বিভিন্ন প্রজাতির মুরগির খামার। এর মধ্যে কাদাকনাথ বা কালো মুরগি অন্যতম এবং বেশ আলোচিত। টার্কি, তিতির, সিল্কিসহ আরও বিভিন্ন জাতের মুরগি থাকলেও মানুষের মাঝে কৌতূহল কাদাকনাথ বা এই কালো মুরগিকে ঘিরেই। শিবপুর উপজেলা পরিষদ বা শিবপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার পশ্চিম উত্তরে মজলিশপুর গ্রাম। একেবারে নিভৃত পলস্নী এলাকা। গত ৩০ নভেম্বর, সোমবার দুপুরের দিকে আঁকাবাকা মেঠোপথ ধরে কামরুল ইসলামের (মাসুদ) খামার পরিদর্শনে গিয়ে দেখি- রায়হানুল ইসলাম নামে তার এক চাচাতো ভাই খামার তদারকি করছেন। কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন মনির হোসেন, আব্দুল বাছেদ, মো. হাসিম, সামসুল ও মিঠু নামে কয়েকজন। কামরুল ইসলামের ভাই রায়হানুল ইসলাম জানান, ২০১৬ সালে তার ভাই কামরুল ইসলাম (মাসুদ) ইন্ডিয়া সফরে যান। সেখান থেকে তিনি কাদাকনাথ বা কালো মুরগির ৩০০টি বাচ্চা (দুই মাস বয়সি) কিনে আনেন এবং প্রতি পিস বাচ্চার দাম পড়ে প্রায় দেড় হাজার টাকা। এই ৩০০ পিস বাচ্চা দিয়েই গড়ে তুলেন 'লাম্‌স বার্ড অ্যান্ড হ্যাচারি' নামে মুরগির খামার। বর্তমানে এই খামারে বিভিন্ন জাতের ও বিভিন্ন সাইজের প্রায় ৬ শতাধিক মুরগি রয়েছে। এর মধ্যে দুই শতাধিক মুরগি নিয়মিত ডিম দিচ্ছে এবং এই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো হচ্ছে। প্রতি মাসে গড়ে দুই থেকে আড়াইশত বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে। ১ মাস বয়সি প্রতি পিস বাচ্চার বিক্রয়মূল্য ৩০০ টাকা এবং প্রাপ্তবয়স্ক এক জোড়া মুরগির বিক্রয় মূল্য ৪০০০ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। কামরুল ইসলাম (মাসুদ) খামার দেখাশুনা করেন মাঝে মধ্যে। তিনি সপ্তাহের বেশির ভাগ সময় থাকেন চট্টগ্রামে। কাজ করেন একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। সেই কাজের সূত্রে ভারত সফরে গিয়েছিলেন। সফরকালীন তার এক সহকর্মীর আপ্যায়নে ভারতের চেন্নাইতে একটি রেস্টুরেন্টে প্রথম এ কালো মুরগির মাংস খান এবং এই মাংস খাওয়ার স্বাদ ও কৌতূহলবশতই এর উৎপত্তিস্থল ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে তিনি ৩০০ পিস বাচ্চা ক্রয় করে দেশে আনেন। এখন পর্যায়ক্রমে তার খামার থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই কালো মুরগির বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে, বিপণন হচ্ছে এবং উৎপাদন হচ্ছে। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কামরুল ইসলামের (মাসুদ) কথা হয় মুঠোফোনে। এ প্রতিবেদককে তিনি জানান, তিনি দেশের উন্নয়নে ব্যতিক্রম কিছু করতে পছন্দ এবং স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। বিদেশ থেকে আনা কালো মুরগির উৎপাদন তার কর্মের মধ্যে একটি ব্যতিক্রম উদ্যোগ। এ উদ্যোগ গ্রহণ করে তিনি বেশ লাভবান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, শিবপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. সজল কুমার দাস বলেন, এ মুরগির বিশেষত্ব হলো এর মাংসও কালো। এছাড়া এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্য মুরগির তুলনায় বেশি। বংশবৃদ্ধি ও ডিমের উৎপাদনও ভালো। একটি দেশি মুরগি বৎসরে যেখানে ডিম দেয় ৫০টি। সেখানে এই কাদাকনাথ দেয় ১০০ থেকে ১২০টি।