শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) পরামর্শ

প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের বছরে অন্তত ১৫০টি ডিম খাওয়া প্রয়োজন

আলতাব হোসেন
  ১০ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুস্থ থাকার জন্য দেশের একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে বছরে গড়ে ১৫০টি ডিম খাওয়া প্রয়োজন। ডিম রোগ প্রতিরোধ করে। মানবদেহে পুষ্টির অন্যতম জোগানদাতা ডিম। যার মূল উৎস হাঁস বা মুরগি। মুরগি সারা বছরই ডিম দেয়।

সরকারের ৮ম পঞ্চমবাষির্কী পরিকল্পনায় (২০২০-২০২৪) বছরে একজন মানুষকে ১৫০টি ডিম খাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ দ্বিতীয় পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনায় (২০২১-৪১) বছরে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে ১৬৫টি ডিম খাওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

ডিম ভাজি, ডিম ভর্তা, ডিম ভুনা, ডিম পোঁচ, ডিমের কাড়ি, ডিম সেদ্ধ, ডিম খিচুড়ি, ডিম পোলাও, ডিমের হালুয়া, রুটি-পরোটার সঙ্গে ডিমভাজি, ডিমের কোপ্তা, ডিম চপ, অমলেট, স্যান্ডুইচ, বার্গার ও ডিমের পুডিং। ডিমের এমন কত রকমের বাহারি খাবার আছে- তার জুড়ি নেই। মজাদার এমন সুস্বাদু খাবারের কারণে প্রতি পরিবারেই রয়েছে ডিমের চাহিদা। বাজারের ফর্দে তালিকার উপরের দিকেই থাকে ডিমের নাম। ডিমের চাহিদার আরেকটি কারণ ডিম প্র্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার এবং দামেও সস্তা। অনেকে রসিকতা করে বলেন, ডিম রাঁধতে রাঁধুনির বেশি কষ্ট করতে হয় না- তাই ডিম দিয়ে দিন পার করতে চান অনেকেই। ডিমের অমলেটের চল শুরু রোমান সাম্রাজ্যের সময় থেকেই।

নাস্তার টেবিলে- মুরগি আগে না ডিম আগে এ নিয়ে দ্বন্দ্ব বহুদিনের। ডিম দিয়েই যেন দিন শুরু! সকালের নাশতা, ডিম ছাড়া কী ভাবা যায়! অনেকেরই প্রাতরাশে ডিম চায়ই। তবে আবার কেউ কেউ স্স্নিম থাকার জন্য ডিম খেতে চান না। অনেকে ডিমের সাদা অংশ খেয়ে কুসুমটা রেখে দেন। চিকিৎসকরা আবার পথ্য হিসেবেও ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেন।

ডিম নিয়ে গল্প আর রসিকতার শেষ নেই- 'হাট্টিমাটিম টিম, তারা মাঠে পাড়ে ডিম, তাদের খাঁড়া দুটো শিং...।' ছোট সময়ে অনেকেরই পড়া এ ছড়া। শিশু বয়সে এ নিয়ে কৌতূহলের অন্ত ছিল না। বড় হয়ে সবাই বুঝে যান, আসলে এ প্রাণি বা তার ডিমের কোনো অস্তিত্ব নেই। হাঁস আর মুরগির ডিমই আসল। ডিম নিয়ে বিশিষ্ট শিশু ছড়াকার সুকুমার রায় তার 'আবোল তাবোল ছড়ায় বলেন, 'আদিম কালের চাঁদিম হিম, তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম'। ডিম নিয়ে জনপ্রিয় হাস্যরস হচ্ছে- কোমলমতি শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না হলে অবিভাবকরা বলেন, পরীক্ষায় তুমি ঘোড়ার ডিম পেয়েছ।

প্যারাগন পোল্ট্রি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, দেশের মানুষ বছরে ডিম খায় গড়ে ১০৫টি। অথচ আমাদের প্রতিজনের খাওয়া উচিত ১৫০টি ডিম। উন্নত দেশের মানুষ বছরে জনপ্রতি গড়ে প্রায় ৩০০টি ডিম খেয়ে থাকেন। ডিম উৎপাদনে দেশে কোনো ঘাটতি নেই। তবে ২০২১ সালে প্রতিদিন ডিমের দরকার হবে প্রায় ৪৫ কোটি পিস।

খ্রিষ্ট্রপূর্ব ১৪০০ সালে মুরগির ডিমে কৃত্রিমভাবে তা দেওয়ার প্রদ্ধতি আবিষ্কার করেন মিসরীয়রা। অনেকেই বলেন, মুরগির রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ডিমের রং হয়। সাদা মুরগির ডিম সাদা হয়। বাদামি ও লাল রঙের মুরগি ডিম বাদামি রংয়ের। তবে সব মুরগির বেলায় এ নিয়ম ধরা বাঁধা নয়, ব্যতিক্রমও আছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিমের রেকর্ড এখন জামার্নিদের দখলে। ২০১৬ সালে জার্মানির একটি মুরগি ২০৯ গ্রামের বড় ডিম পেড়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছে। এর আগে এ রেকর্ড ছিল মার্কিনিদের দখলে। ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের এসেক্সের একটি মুরগি-৯ দশমিক ১ ইঞ্চি পরিধির একটি ডিম পাড়ে।

বিশ্বে ৪০ শতাংশ ডিমের জোগান দেয় চীন। ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। চীন সব নকল করতে পারে। এ ধারণা থেকে অনেকে অভিযোগ করছেন চীন নকল ডিম বাজারে ছেড়েছে। তবে চীন থেকে ডিম আমদানি করে না বাংলাদেশ। তারপরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমে নকল ডিমের ছবি দেখিয়ে বলা হচ্ছে- বাংলাদেশের বাজারে ঢুকছে রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি কৃত্রিম নকল ডিম। অসাধু ব্যবসায়ী ফার্মের হাঁস-মুরগির ডিমের আড়ালে বাজারজাত করছে নকল ডিম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে