ছড়িয়ে পড়–ক কৃষি বায়োস্কোপ

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কমর্কতার্ (২৯তম বিসিএস) তালহা জুবাইর মাশরুর। যিনি কৃষির উন্নয়নে তথ্যচিত্র ‘কৃষি বায়োস্কোপ’ তৈরি করে দেশ-বিদেশে লাখো মানুষের নজর কেড়েছেন। তার এই ভিডিও শহুরে শৌখিন কৃষক থেকে গ্রামের ক্ষেতখামারে খেটে খাওয়া ভ‚মিহীনদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে কৃষির প্রয়োজনীয় তথ্য। যার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৬ সালে তিনি সরকারের উদ্ভাবনী বিভাগে শ্রেষ্ঠ সরকারি কমর্কতার্র পুরস্কার পেয়েছেন। তালহা জুবাইর এ পযর্ন্ত ১০০টি তথ্যচিত্র (ডকুমেন্টারি) তৈরি করেছেন। তথ্যচিত্রের মডেল হিসেবে দেখানো হয়েছে সফল কৃষকদের। তার উদ্ভাবিত কৃষি বায়োস্কোপ গ্রামে গ্রামে বড়পদার্য় (প্রজেক্টর) প্রদশের্নর পাশাপাশি স্থানীয় কেবল টিভিতে প্রচার করা হচ্ছে। ফেসবুক ও ইউটিউবে সজনে পাতার চাষ ও গুণাগুণ নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্রটি ৬২ লাখের বেশি দশর্ক দেখেছেন। প্রান্তিক কৃষকের জন্য তথ্য-পরামশের্র নতুন জানালা কৃষি বায়োস্কোপের উদ্ভাবক তালহা জুবাইর মাশরুরের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় বিস্তারিত তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেনÑ

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

এসএম মুকুল
পূবর্ প্রকাশের পর কবে থেকে কৃষি বায়োস্কোপের যাত্রা শুরু করলেন? তালহা জুবাইর মাশরুর : ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি রাতে কুতুবপুর ইউনিয়নের ভুলটিয়া গ্রামে প্রজেক্টর দিয়ে ‘কৃষি বায়োস্কোপ’-এর প্রথম প্রদশর্নী দেখানো হয়। এদিন বোরো ধান, ভুট্টা ও শীতকালিন সবজি চাষের কৌশল ও রোগ পোকামাকড় দমনের উপায় বিষয়ে কয়েকটি ভিডিও দেখানো হয়। স্থানীয় কয়েকজন সফল কৃষককে তথ্যচিত্রগুলোতে রাখা হয়, ফলে পরিচিতজনের মুখ থেকে কথা শুনে কৃষকরা সহজেই অনুপ্রাণিত হন। কীভাবে এই কাযর্ক্রমকে আরও প্রান্তিক পযাের্য় ছড়িয়ে দেয়া যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন? তালহা জুবাইর মাশরুর : বতর্মান সময়ে দ্রæত বেশি মানুষের কাছে প্রচারের জন্য ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার প্রভৃতি সোশ্যাল মিডিয়াই জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। যেমন সজিনার বিস্ময়কর গুণাগুণ নিয়ে ‘কৃষি বায়োস্কোপ’-এর একটা ভিডিও কয়েক মাসের মধ্যে ফেসবুকে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ, ইউটিউবে ১২ লাখ দেখেছেন। আধুনিক কৃষি যন্ত্র কম্বাইন হাভের্স্টার নিয়ে কৃষি বায়োস্কোপের ভিডিও দেখেছে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। এ ছাড়া আমের মুকুল আসার সময় কি করণীয় কিংবা ধানের ক্ষেতে বিপিএইচ বা কারেন্ট পোকার আক্রমণ থেকে বঁাচতে করণীয়, থাই পেয়ারার বাণিজ্যিক চাষ বা লাভজনক তেজপাতার চাষ ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে করা ভিডিওগুলো ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষ দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। এভাবেই কৃষিক্ষেত্রে টেকসই প্রযুক্তিগুলো দ্রæত সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমি মনে করি সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যে সব কৃষিবিদ কৃষকদের কল্যাণে কাজ করছেন তারা যদি ‘কৃষি বায়োস্কোপ’- কনসেপ্টটি অনুসরণে কৃষির নতুন নতুন লাগসই ও টেকসই প্রযুক্তি নিয়ে ছোট ছোট ডকুমেন্টরি তৈরি করে এবং কৃষক প্রশিক্ষণে ব্যবহার করে তাহলে কৃষকরা সহজেই সেগুলো থেকে উপকৃত হবে। এ পযর্ন্ত আপনি কতগুলো তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন, কতগুলো প্রদশির্ত হয়েছে এবং কি কি বিষয়ে। তালহা জুবাইর মাশরুর : এই পযর্ন্ত ১০০টা তথ্যচিত্র তৈরি করেছি যার মধ্যে ৯৮টি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া, কৃষক প্রশিক্ষণ ও সান্ধ্যকালিন কৃষি বায়োস্কোপে প্রদশির্ত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ কম্বাইন হাভের্স্টার, সামার টমেটো, অফসিজন তরমুজ, সজিনা পাতার গুণাগুণ, স্কোয়াশ চাষ, ভামির্ কম্পোস্ট, থাই পেয়ারা, থাই বারোমাসি আম, অ্যাভোকাডো, গ্রাফটিং প্রযুক্তি, রিপার, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ইত্যাদি। বাস্তবভিত্তিক এমন প্রদশর্নীর মাধ্যমে কৃষক সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি ও কৃষি উন্নয়নে সরকারের কাছে আপনার কোনো পরামশর্ বা প্রস্তাবনা আছে কি? তালহা জুবাইর মাশরুর : আমাদের শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম আধুনিক কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হলে দেশের সামগ্রিক কৃষি আরও সমৃদ্ধ হবে। কৃষি যে একটা লাভজনক সেক্টর, খাদ্য উৎপাদন যে একটা মহৎ পেশা সেই বিষয়টা তাদের উপলব্ধিতে নিয়ে আসতে পারলে অদূর ভবিষ্যতে এই শিক্ষিত যুবকদের হাত ধরেই দেশে আধুনিক কৃষির বিপ্লব ঘটবে। কিন্তু তাদের মোটিভেট করা কিংবা লাভজনক উচ্চ মূল্য ফল-ফসলের আবাদ ও প্রযুক্তি সম্পকের্ ধারণা দেয়ার মতো তথ্যচিত্র বা ডিজিটাল কন্টেনটের স্বল্পতা রয়েছে আমাদের। কৃষির নানা প্রযুক্তি ও কলাকৌশল নিয়ে আরও টেকনিক্যাল ভিডিও ডকুমেন্টারি বানানো সম্ভব হলে এবং সারাদেশব্যাপী তা প্রচারের ব্যবস্থা করা হলে সাধারণ কৃষক যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তাও তৈরি হওয়ার অনেক সুযোগ, সম্ভাবনা আছে। ‘কৃষি বায়োস্কোপের’ এই আইডিয়া কাজে লাগিয়ে সহজ উপায়ে কৃষি তথ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পেঁৗছে দিতে জাতীয়ভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে সামগ্রিকভাবে কৃষি উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। (শেষ)