সৌরশক্তি কাজে লাগিয়ে কৃষিতে পানি ব্যবহারের উদ্যোগ

প্রকাশ | ১৭ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

সাজ্জাদ হোসেন শাওন
কৃষি জমিতে সৌরশক্তির মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ওই লক্ষ্যে সৌরচালিত পাম্প স্থাপনের মাধ্যমে দুই হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ভূ-উপরিস্থ পানিনির্ভর সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে। ফলে প্রতি বছর অতিরিক্ত ১১ হাজার টন খাদ্যশস্য ও শাকসবজি উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে কৃষি সংশ্লিষ্টরা মনে করছে। একই সঙ্গে উপকৃত হবে ৬ হাজার ৬০০ কৃষক পরিবার। বর্তমানে অনেক এলাকায় বিদু্যৎ এবং ডিজেল ব্যবহার করে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের মাধ্যমে জমিতে সেচ দেয়া হয়। তাতে একদিকে যেমন কৃষিপণ্য উৎপাদন খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে বাড়ছে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ। কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। কৃষি উৎপাদনে সেচ অন্যতম প্রধান নিয়ামক। বোরো মৌসুমে মূলত বিদু্যৎ ও ডিজেলচালিত গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে জমিতে সেচ দেয়া হয়ে থাকে। অনেক সময় আমন মৌসুমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গেলে সম্পূরক সেচের প্রয়োজন হয়। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ বৃদ্ধিসহ বিদু্যতের চাহিদা ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ায় ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে কৃষি। এমন পরিস্থিতিতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই করার লক্ষ্যে সেচ কাজে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহারসহ সৌরশক্তিনির্ভর সেচ কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে বিদু্যতের সাশ্রয়সহ ফসলের চাষাবাদ লাভজনক করা প্রয়োজন। সূত্র জানায়, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সৌরশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন নামে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ৮২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ের চলমান প্রকল্পটি ২০২৩ সালের মধ্যেই কাজ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সৌরশক্তিনির্ভর সেচ সুবিধা সম্প্র্রসারণসহ প্রকল্প এলাকায় আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন হবে। সৌরশক্তিনির্ভর সেচ প্রযুক্তির দিকে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করে কৃষি মন্ত্রণালয়ও সৌরশক্তিনির্ভর সেচ কার্যক্রম সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে এগিয়ে আসে। প্রকল্পের আওতায় ২০০টি সৌরশক্তিচালিত লোলিফট পাম্প (এলএলপি) স্থাপন করা হবে। নির্মাণ করা হবে ২০০ পাম্প হাউস। চলমান এই প্রকল্পে গত বছর এক কিউসেক (দৈনিক ১০ লাখ লিটার পানি উত্তোলন ক্ষমতাসম্পন্ন) ১৫টি এবং হাফ কিউসেক ৮টিসহ মোট ২৩টি সৌরপাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সেচকৃত এলাকা ৩৫৬.৫ হেক্টর এবং নির্মাণকৃত বারিডপাম্প সেচনালা ৩৫.৫ কিলোমিটার রয়েছে। যা থেকে সরাসরি প্রায় দুই হাজার কৃষক পরিবার উপকার পাচ্ছে। প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী দেশের ৩৪টি জেলার ১৪১ উপজেলায় এ সেচ সুবিধা দেয়া হবে। মূল কাজের মধ্যে রয়েছে ২শ'টি সোলার পাম্প, ৫০টি সৌরশক্তিচালিত ড্রাগওয়েল, ৫০টি ডিপ ইরিগেশন, ১৪০ কিলোমিটার বারিড পাইপ সেচনালা হবে। সরকার আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০,০০০ সোলার পাম্প স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বিএডিসি আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে সারাদেশব্যাপী ১০০০টি সৌরশক্তিচালিত সেচপাম্প স্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। বিএডিসি, ইডকল, বিএমডিএ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ৪৫০টি সৌরপাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, সৌরশক্তির মাধ্যমে সেচযন্ত্র পরিচালনা করা হলে শুষ্ক মৌসুমে বিদু্যৎ ও ডিজেলের বাড়তি চাহিদা অনেকাংশে দূর করার পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ হতে দেশকে মুক্ত করা সম্ভব হবে। আর যখন মাঠে ফসল থাকবে না তখন এই সৌরবিদু্যৎ দিয়ে ধান মাড়াই, ধান ভাঙানো, ব্যাটারি চার্জসহ গৃহস্থালি কাজেও ব্যবহার করা যাবে। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের মতে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সেচে বিদু্যৎ সাশ্রয়সহ ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ওপর চাপ কমবে। যা পরিবেশের ভারসাম্য উন্নয়নে ভূমিকা পালন করবে। তাছাড়া বিদু্যতের অভাবে সেচ কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে এমন এলাকায়ও সেচ কার্যক্রম পরিচালিত করা যাবে। এদিকে সৌরশক্তিনির্ভর কৃষি প্রযুক্তি সনাতন ধারণা বদলে দিচ্ছে। বিদু্যতের লোডশেডিং, বাড়তি বিলের বোঝাসহ লো-ভোল্টেজের ভয়ে এখন কৃষকরা আর ভীত নয়। আর সেচ পাম্প চালাতেও ডিজেলের প্রয়োজন হচ্ছে না। সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে প্রয়োজন মতো জমি ভেজাচ্ছে কৃষক। দেশের ফসলের মাঠে সৌরসেচ সফলতায় মাঠে মাঠে এখন দেখা যাচ্ছে আধুনিক এই সেচ প্রযুক্তির ব্যবহার। এমনকি বিদু্যৎবিহীন চরাঞ্চলে সৌরশক্তির ব্যবহার কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। বিএডিসি রংপুর বিভাগের চরাঞ্চলে মোবাইল সৌরপ্যানেল ও পাম্প স্থাপনের মাধ্যমে সেচ কাজ পরিচালনা করছে। তাছাড়া বিএডিসি ডাগওয়েলে প্যানেল আকারে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে কূপ থেকে পানি উত্তোলন করে ডিপ ইরিগেশন পদ্ধতিতে সবজি ও ফুলের চাষে যশোর ও শেরপুর জেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। সৌরশক্তির ব্যবহার কৃষকদের মধ্যে একটা সাড়া ফেলেছে। কৃষি মন্ত্রণালয় ও বিএডিসি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। করোনার ধাক্কায় কাজ থেমে নেই। তাতে কৃষক পরিবারগুলো সরাসরি উপকার পাচ্ছে এবং অতিরিক্ত ফসল আসবে। ফলে কৃষকদের অনেক সাশ্রয় হবে।