স্বাদে গন্ধে অপূবর্ থাই বারোমাসী আম

থাই বারোমাসী আমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলোÑ বছরে তিনবার ধরে এবং প্রতি গাছে আমের সংখ্যাও যথেষ্ট বেশি; প্রতিটি মৌসুমেরই প্রতিটি আমের ওজন ২০০-৩০০ গ্রামের মতো। লম্বাটে জাতের এই আম পাকলে হলুদাভ সুষম রং হয়। পাকা আম দেখলে মনে হবে কেমিক্যালে পাকানো আম। আমে কোনো অঁাশ নেই। রোগবালাই নেই বললেই চলে। আমবাগানেও কোনো রোগবালাইয়ের দেখা মেলেনি। প্রতিটি মৌসুমের আমের স্বাদই অপূবর্। আমের বতর্মান পাইকারি বাজারমূল্য ২০০-২৫০ টাকা কেজি। স্বাভাবিক রুমের তাপমাত্রায় এই আম ২০-২৫ দিন পযর্ন্ত অনায়াসে সংরক্ষণ করা যায়।

প্রকাশ | ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

কৃষিবিদ ড. মো. আখতারুজ্জামান
থাই বারোমাসী আমের গল্প শুনে নিজ চোখে বাগান দেখার আগ্রহটা তৈরি হয়। সেজন্য অনেকটা আকস্মিকভাবেই একদিন চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার বঁাকা গ্রামের চাষি আবুল কাসেমের বারোমাসী আমবাগান পরিদশর্ন করতে যাই। চুয়াডাঙ্গার দশর্নায় অনুষ্ঠিত ভুট্টা বীজ চাষি ও বীজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে যশোর অঞ্চলের কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অভিভাবক অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ চÐীদাস কুÐু স্যারের সঙ্গে জীবননগরের বারোমাসী আমবাগান পরিদশের্নর চমৎকার একটা সুযোগ পেয়ে যাই। এ আম সম্পকের্ জেনে আপনি বিস্মিত হবেন। একই গাছে একসঙ্গে ঝুলছে আমের মকুল, গুটি আম, কাচা আম পাকা আম। এ এক অবিশ্বাস্য দৃশ্য। চোখে না দেখলে অনেকে বিশ্বাসই করবে না। আমরা বারোমাসী আমের নাম কম-বেশি সবাই শুনেছি; কিন্তু বারোমাসী আম বলতে যে দু’চারটে বারোমাসী আমজাতের সন্ধান আমাদের জানা আছে সেগুলোর কোনোটারই গুণগত মান সন্তোষজনক নয়। সাধারণভাবে বারোমাসী আম আকারে ছোট ও টক হয়ে থাকে। এর আগে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রুুট ট্রি ইমপ্রæভমেন্ট প্রকল্প হতে যে দু’একটি বারোমাসী আমজাতের প্রবতর্ন করা হয়েছিল সে সব আমও সাবির্ক গুণগত মানের বিচারে তেমন একটা জনপ্রিয়তা অজর্ন করতে পারেনি। আকস্মিকভাবে হালে এমন একটা বারোমাসী আমের প্রবতর্ন ও সম্প্রসারণ করে চলেছেন চুয়াডাঙ্গার আমবাগানী ও নাসাির্র মালিক আবুল কাসেম। আবুল কাসেমের বাগানের এই বারোমাসী আম স্বাদে-গন্ধে অপূবর্ অতুলনীয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর সরেজমিন আবুল কাসেমের বাগানে গিয়ে পাকা আমের রসনায় তৃপ্ত হয়ে নিজেরাই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না অসময়ে প্রাপ্ত বারোমাসী আমের স্বাদ এমন অসাধারণ হতে পারে। অতিরিক্ত পরিচালক স্যার দুপুরের কাঠফঁাটা রোদে আমবাগানের ছায়ায় দঁাড়িয়ে কৃষক আবুল কাসেমের একটা এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করলেন এবং গাছপাকা বারোমাসী আমের স্বাদ গ্রহণ করলাম আমরা সবাই। স্যারের সঙ্গে আমিসহ আরও উপস্থিত ছিলেন জীবননগরের উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও গাংনীর উপজেলা কৃষি অফিসার কেএম শাহাবুদ্দিন প্রমুখ। আবুল কাসেমের দেয়া তথ্যানুসারে তার প্রবতির্ত এই বারোমাসী আমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, বছরে তিনবার ধরে এবং প্রতি গাছে আমের সংখ্যাও যথেষ্ট বেশি; প্রতিটি মৌসুমেরই প্রতিটি আমের ওজন ২০০-৩০০ গ্রামের মতো। লম্বাটে জাতের এই আম পাকলে হলুদাভ সুষম রং হয়। পাকা আম দেখলে মনে হবে কেমিক্যালে পাকানো আম। আমে কোনো অঁাশ নেই। রোগবালাই নেই বললেই চলে। আমবাগানেও কোনো রোগবালাইয়ের দেখা মেলেনি। প্রতিটি মৌসুমের আমের স্বাদই অপূবর্। আমের বতর্মান পাইকারি বাজারমূল্য ২০০-২৫০ টাকা কেজি। স্বাভাবিক রুমের তাপমাত্রায় এই আম ২০-২৫ দিন পযর্ন্ত অনায়াসে সংরক্ষণ করা যায়। থাই এই বারোমাসী আম কীভাবে চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে সম্প্রসারিত হলো সেটা নিয়ে আছে আরেক মজাদার কাহিনী। এই আমের প্রবতর্ক জীবননগরের সার ব্যবসায়ী নুর ইসলাম, যিনি আবুল কাসেমের খুব কাছের বন্ধু। বেড়ানোর কাজে নুর ইসলাম ২০১০ সালে থাইল্যান্ড ভ্রমণের প্রাক্কালে লুকিয়ে এমন একটা আম চারা সংগ্রহ করে এনে আবুল কাসেমের কাছে হস্তান্তর করেন। আবুল কাসেমের অনুরোধেই নুর ইসলাম এই চারাটি থাইল্যান্ড থেকে সংগ্রহ করে আনেন। এমন আমের খবর লোক মারফত আগেই জেনেছিলেন আবুল কাসেম। একটিমাত্র আমচারাকে আবুল কাশেম গোপনে পরম যতœ ও মমতায় বড় করত : এটার গুণগত মান যাচাই করতে থাকেন। পরে এটার সাবির্ক মান নিশ্চিত হওয়ার পরে সেটা সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। শুরুতে তিনি এই আমের ব্যাপারে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করেন এ জন্য যেন কেউ এটার পেটেন্ট চুরি করতে না পারে। একটা লাভজনক অবস্থায় আসার পরে আবুল কাসেম এটার গুণপনা জনগণের জন্য অবমুক্ত করেন। বতর্মানে আবুল কাসেমের ২০ বিঘা জমিতে এখন বারোমাসী জাতের এই আম রয়েছে। তার আমবাগানে কঁাচাপাকা আম ও মুকুলের সমারোহ এবং আমভাঙ্গার মহড়া দেখে মনে হচ্ছিল এটা যেন আমের ভরা মৌসুম। জীবননগর থেকে কালিগঞ্জের দিকে ২ কিলোমিটার অগ্রসর হলে রাস্তার ডান পাশে বিজিবি ক্যাম্পের পূবর্পাশে তেঁতুলিয়া নামক স্থানে ‘নাজমূল নাসাির্র’ নামে আবুল কাসেমের একটা বড় নাসাির্রতে এখনো ২ লাখ উন্নতমানের থাই বারোমাসী আমের চারা মজুদ রয়েছে বলে জানান আবুল কাসেম। নাসাির্র স্থলে দঁাড়িয়ে অতিরিক্ত পরিচালক চÐী স্যার এই জাত সম্প্রসারণের জন্য মুঠোফোনে কথা বললেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হটির্কালচার ইউং ও সরেজমিন ইউংয়ের পরিচালক মহোদয়দের সঙ্গে। অতিরিক্ত পরিচালক স্যার বারোমাসী এই জাত দ্রæত সম্প্রসারণের ব্যাপারে আবুল কাসেমকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেন। নাসাির্র মালিক আবুল কাসেম জানালেন স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি অফিসার শাহ আলম এবং জীবননগরের উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ নিয়মিত বাগানের পরিচযার্র ব্যাপারে কারিগরি পরামশর্ দিয়ে থাকেন। পাঠকরা কেউ যদি বারোমাসী এই থাই আম সম্পকের্ জানতে চান বা এই আমের চারা সংগ্রহ করতে চান তাহলে নিচের ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন আবুল কাসেম- ০১৭১৬-৩৩১৯৫৫। তিনি প্রতিটি আম কলমের দাম নিধার্রণ করেছেন ১৫০-২০০ টাকা; তবে পাইকারি ভিত্তিতে সংগ্রহ করতে চাইলে সেখানে কিছু মূল্য ছাড় পাওয়া যাবে বলে নাসাির্র কতৃর্পক্ষ সূত্রে জানা গেছে। লেখক : উপ-পরিচালক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মেহেরপুর