বিশ্ব ডিম দিবস

অপুষ্টি কমাতে ডিম খাওয়ার প্রবণতা বাড়াতে হবে

প্রতি বছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার পালিত হয় বিশ্ব ডিম দিবস। বাংলাদেশেও পোল্ট্রি সংশ্লিষ্ট ৭টি অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) ও মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ অধিদফতর যৌথভাবে দিবসটি উদযাপন করে। বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে এই প্রতিবেদনটি সাজিয়েছেনÑ এস এম মুকুল

প্রকাশ | ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে বেশি করে ডিম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে দেশের অপুষ্টির চিত্র পাল্টে যাবে। বতর্মানে দেশে দৈনিক ডিম উৎপাদন হয় কমবেশি ৩ কোটি ৮০ লাখ। পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, সারাদেশে বতর্মানে প্রায় ৬৫-৭০ হাজার ছোট-বড় খামারে প্রতিদিন ডিম উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ থেকে ২৫ লাখ। আগে হ্যাচিং ডিম আমদানি করতে হতো। এখন বাংলাদেশে ৭টি গ্রান্ড প্যারেন্টস্টক (জিপি) ফামর্ আছে। প্যারেন্টস্টক বা পিএস ফামের্র সংখ্যা ছোট-বড় মিলে প্রায় ৮০টি। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন দিয়েই দেশের হ্যাচিং ডিমের শতভাগ চাহিদা পূরণ হচ্ছে। ২০১৪ সালে প্রতিদিন ডিম উৎপাদন হতো প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ। বছরে উৎপাদন ছিল প্রায় ৬৩৯ কোটি। মাথাপিছু খাওয়া হতো প্রায় ৪১টি। ২০১৫ সালে ডিম দিনে উৎপাদন হতো প্রায় ১ কোটি ৯৫ লাখ। বছরে উৎপাদন ছিল প্রায় ৭১২ কোটি। মাথাপিছু খাওয়ার পরিমাণ দঁাড়িয়েছে প্রায় ৪৫টি। ২০১৬ সালে দিনে উৎপাদন হয় প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ থেকে ২৫ লাখ। বাষির্ক উৎপাদন প্রায় ৮২১ কোটি। বতর্মানে মাথাপিছু খাওয়া হয় প্রায় ৫১টি। এই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে দৈনিক উৎপাদন হবে প্রায় ৪ কোটি ৫ লাখ ডিম। আর তখন মাথাপিছু কনজাম্পশন হবে প্রায় ৮৬টি। ডিম দিবসে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সাল নাগাদ যে বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করতে হলে ডিমের মাথাপিছু কনজাম্পশন অন্তত দ্বিগুণ করতে হবে। প্রতিটি মানুষকে দৈনিক অন্তত একটি করে ডিম খাওয়ার অভ্যাস করার মতো আথির্ক সক্ষমতায় উন্নীত করতে হবে।’ প্রকৃতপক্ষে মেধাবী ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গঠনে এবং পুষ্টির ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূণর্ ভূমিকা রেখে চলছে এই পোল্ট্রি শিল্প। প্রাণিজ প্রোটিনের অন্যতম উৎস হলো ডিম। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, চবির্ একেবারে খাওয়া ভালো নয়, কথাটা সঠিক নয়। যা ভালো নয়, তা হলো সম্পৃক্ত চবির্ এবং ট্রান্সফ্যাট। গরু খাসির মাংসের জমাট চবির্, ঘি, মাখন, ক্রিম, পেস্ট্রি ও ডিপ ফ্রাই খাবারে আছে এ ধরনের ক্ষতিকর চবির্। বাদ দিতে হলে এগুলো বাদ দিন। আর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মানে কেবল অস্বাস্থ্যকর খাবার বাদ দেওয়া নয়। আমরা জানি, প্রাণিজ প্রোটিনের মধ্যে ডিম অন্যতম। ডিমে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, যা হৃদরোগসহ অনেক রোগের বিরুদ্ধে বেশ কাযর্করী। সাধারণ হিসেবে ১০০ গ্রাম খাসির মাংস থেকে যে প্রোটিন পাওয়া যায়, সেই একই পরিমাণ প্রোটিন মেলে ৪টি ডিম থেকে। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, নারীদের অ্যাডোলেশন পিরিয়ডে বা পরবতীর্কালে সপ্তাহে কমপক্ষে ৬টি ডিম খেলে ব্রেস্ট ক্যানসারের সম্ভাবনা প্রায় ৪৪ ভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। বিজ্ঞানীরা ডিম কে একটি ‘পরিপূণর্ খাদ্য’ বা কমপ্লিট ফুড বা সুপার ফুড হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ডিমের মতো এত স্বল্পমূল্যের প্রাণিজ আমিষ দ্বিতীয়টি নেই। কমর্সংস্থান ও অথর্নীতিতে গুরুত্বপূণর্ অবদানের পাশাপাশি চাহিদার ৪০ থেকে ৪৫ ভাগ মাংস ও আমিষের যোগানদাতা হিসেবেও অবদান রাখছে- পোল্ট্রি শিল্প। ভুট্টা ও সয়াবিনের সমন্বয়ে অগাির্নক পদ্ধতিতে বতর্মানে উৎপাদন হচ্ছে এ শিল্পের খাবার। ফলে আমিষের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে উৎপাদনও। নতুন আশা নিয়ে সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অজের্ন ২০২১ সালের মধ্যে বছরে ১২০০ কোটি ডিম ও ১০০ কোটি ব্রয়লার উৎপাদনের পোল্ট্রি শিল্প সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, ২০২১ সাল নাগাদ দেশে প্রতিদিন সাড়ে ৪ কোটি ডিম ও প্রায় ৪ হাজার টন মুরগির মাংসের প্রয়োজন হবে। তার মানে অথর্নীতিতে এই শিল্পের অবদান ও ভ‚মিকা ব্যাপকতর হওয়ার বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। বিপিআইসিসি সূত্রে জানা গেছে, আগে হ্যাচিং ডিম আমদানি করতে হতো। এখন বাংলাদেশে গ্রান্ড প্যারেন্টস্টক (জিপি) ফামর্ আছে। প্যারেন্টস্টক বা পিএস ফামের্র সংখ্যা ছোট-বড় মিলে প্রায় ৮০টি। আশার খবর হচ্ছে এখন অভ্যন্তরীণ উৎপাদন দিয়েই দেশের হ্যাচিং ডিমের শতভাগ চাহিদা পূরণ হচ্ছে। আধুনিক হ্যাচারিগুলোতে যান্ত্রিক উপায়ে সপ্তাহে এক কোটি ১০ লাখেরও বেশি ডিম ফোটানো হয়। মুরগি পালনের ক্ষেত্রেও যুগান্তকারী পরিবতর্ন এসেছে। খাবার ও পানি সরবরাহ, ডিম সংগ্রহ সবকিছু স্বয়ংক্রিয় উপায়ে করা হয়। ফলে ভোক্তারা সহজেই স্বাস্থ্যকর-জীবাণুমুক্ত ডিম ও মুরগির মাংস পাচ্ছেন। পোল্ট্রি শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। জানা গেছে, ১৯৪৭ সালে ছয়টি পোল্ট্রি ফামর্ স্থাপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এ শিল্পের যাত্রা শুরু হলেও ১৯৮০ সালের দিকে বাণিজ্যিকভাবে পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশ ঘটতে থাকে। গত তিন দশকে তা দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পখাতে রূপ নিয়েছে। প্রায় ৬০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শিল্পের ওপর নিভর্রশীল। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যমতে, সুস্থ থাকার জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে বছরে গড়ে ১০৪টি ডিম খাওয়া প্রয়োজন; কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ বছরে ডিম খায় গড়ে মাত্র ৪৫-৫০টি। তবে আশার খবর হলো ডিম শুধু পুষ্টি উপাদেয় খাবার হিসেবে অসুখ অসুস্থতায় অথবা অতিথি আপ্যায়নে নয়Ñ প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডিমের গুরুত্ব অনেকাংশে বেড়েছে। লেখক : কৃষি ও অথর্নীতি বিশ্লেষক