বাকৃবি গবেষকদের সাফল্য

ভাগনা মাছের জাত উন্নয়ন

প্রাকৃতিক উৎসের (নদী, হাওর) ভাগনা মাছের বৃদ্ধি বদ্ধ উৎসের (পুকুর, খাল, বিল) মাছের চেয়ে ভালো। তাই প্রাকৃতিক বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া মাছগুলোর মধ্যে লাইন ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে মাছের জাত উন্নয়ন সম্ভব। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের ৩টি অন্যতম প্রধান নদী দিনাজপুরের আত্রাই, ময়মনসিংহের কংস এবং সিরাজগঞ্জের যমুনা নদী থেকে প্রাকৃতিক ভাগনা মাছের পোনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর মাছগুলোকে বাকৃবিতে এনে প্রতিপালনের মাধ্যমে উচ্চ গুণাগুণসম্পন্ন ব্রæড (প্রজনন সক্ষম পুরুষ এবং মা মাছ) মাছ বাছাই করা হয়...

প্রকাশ | ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

রাকিবুল হাসান
দেশে প্রথম বারের মতো ভাগনা মাছের (খধনবড় ধৎরুধ) জাত উন্নয়নে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. একে শাকুর আহম্মদ এবং অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ গোলাম কাদের খানের নেতৃত্বে গবেষণায় সহযোগী গবেষক হিসেবে ছিলেন মাস্টাসের্র ছাত্র মেহেফুজুল মিঠু, বিরাজ কুমার দত্ত, ফজলে রাব্বি, আশরাফুল রিয়ান, বোরহান উদ্দিন সিয়াম এবং কামাল হোসাইন। সম্প্রতি এ কথা জানান অধ্যাপক ড. একে শাকুর আহমদ। তিনি জানান, ২০০৭ সালে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের প্রয়াত অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মুখলেসুর রহমানের মাধ্যমে ভাগনা মাছ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। পরবতীের্ত ভাগনা মাছের লাইন ব্রিডিং এর দীঘর্ গবেষণার মাধ্যমে উচ্চ গুণাগুণ সম্পন্ন পোনা উৎপাদনে সফলতা পান তারা। সাধারণত ভিন্ন ভিন্ন বাসস্থানে ভাগনা মাছের বৃদ্ধি বিভিন্ন ধরনের হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাকৃতিক উৎসের (নদী, হাওর) ভাগনা মাছের বৃদ্ধি বদ্ধ উৎসের (পুকুর, খাল, বিল) মাছের চেয়ে ভালো। তাই প্রাকৃতিক বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া মাছগুলোর মধ্যে লাইন ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে মাছের জাত উন্নয়ন সম্ভব। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের ৩টি অন্যতম প্রধান নদী দিনাজপুরের আত্রাই, ময়মনসিংহের কংস এবং সিরাজগঞ্জের যমুনা নদী থেকে প্রাকৃতিক ভাগনা মাছের পোনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর মাছগুলোকে বাকৃবিতে এনে প্রতিপালনের মাধ্যমে উচ্চ গুণাগুণসম্পন্ন ব্রæড (প্রজনন সক্ষম পুরুষ এবং মা মাছ) মাছ বাছাই করা হয়। এরপর এদের মাঝে লাইন ব্রিডিং করিয়ে যে মাছের পোনা পাওয়া গেছে তার বৃদ্ধি প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত মাছের চেয়ে অনেক বেশি। এমনকি কোষীয় বিশ্লেষণের মাধ্যমেও দেখা গেছে যে লাইন ব্রিডিংয়ে প্রাপ্ত মাছগুলোর বৃদ্ধি অনেক বেশি। লাইন ব্রিডিং সম্পকের্ অধ্যাপক শাকুর বলেন, এটি এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে একটি মাছকে তার বংশধরদের সঙ্গে প্রজনন করানো হয়। ঐতিহ্যগতভাবে একটি পুরুষ মাছকে অনেক মহিলা মাছের প্রজনন ঘটানো হয়। লাইন ব্রিডিংয়ে মাধ্যমে বিভিন্ন নদী থেকে পাওয়া মাছের মধ্যে থেকে উচ্চ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ভাগনা মাছ আবিষ্কার করে পরবতীর্ বংশধরদের মাঝে তাদের অবদান বাড়ানো যায়। তাই ভাগনা মাছের জাত উন্নয়নে লাইন ব্রিডিং একটি অতি প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূণর্ কৌশল। ভাগনা মাছ সম্পকের্ তিনি বলেন, ভাগনা (খধনবড় ধৎরুধ) একটি দেশীয় কাপর্জাতীয় মাছ। ভাগনা মাছটি আকারে ৩০ সেমি এবং ওজনে প্রায় ৫০০ গ্রাম পযর্ন্ত হয়। এরা পুকুরের তলার খাদক। কম বয়সে এরা জুওপ্ল্যাংটন (এক ধরনের অণুবিক্ষণীক উদ্ভিদ) এবং বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সব খাবারই খায়। মাছটি বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন, ভাংগন বাটা, ভাগনা, ভাংগন, ভাগনা বাট। বাংলাদেশের আত্রাই, যমুনা, কংস, ও ব্রহ্মপুত্র নদীগুলোতে এই মাছটি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। তবে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডসহ ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য দেশে এ মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু বতর্মানে কিছু প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে প্রাকৃতিক জলজ পরিবেশে ভাগনা মাছের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এমনকি প্রকৃতি থেকে অধিক পরিমাণে মাছ আহরণের কারণে দেশে এই মাছটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। তাই প্রকৃতি হতে এ মাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে বঁাচাতে এবং চাষের আওতায় আনতেই জাত উন্নয়নের এ পদক্ষেপ নেয়া হয়। অধ্যাপক ড. শাকুর আরও জানান যে লাইন ব্রিডিং কৌশলের ভাগনা মাছের পোনা উৎপাদন এটি বাংলাদেশে প্রথম। এই পদ্ধতির মাধ্যমে ভাগনা মাছকে সংরক্ষণ ও বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে হলে উচ্চ গুণসমম্পন্ন পোনা উৎপাদনের কোনো বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে দেশে আমিষের চাহিদা পূরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই মাছটি গুরুত্বপূণর্ ভূমিকা রাখবে। তাই ভবিষ্যতে অধিকসংখ্যক পোনা উৎপাদন করে দেশের উন্মুক্ত জলাশয় বিশেষ করে হাওর অঞ্চলে ছাড়ারও পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া এই গবেষণাকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন মৎস্য হ্যাচারিতে পেঁৗছে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।