জনপ্রিয়তা পাচ্ছে রাইস ব্রান

প্রকাশ | ২৮ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

আবুল বাশার মিরাজ, বাকৃবি
রাইস ব্রান অয়েল হচ্ছে সয়াবিন তেলের মতো একটি ভোজ্য তেল কোলেস্ট্রেরলমুক্ত ও প্রাকৃতিক ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ। আর ‘রাইস ব্রান’ হচ্ছে ধানের ওপরের শক্ত আবরণের নিচে চালের ওপরের পাতলা ‘মেমব্রেন’ যা আমাদের দেশে চালের কুড়া নামে পরিচিত। অথার্ৎ ধান ভাঙলে ধানের ওপরের শক্ত আবরণ থেকে বের হয় ভুসি এবং মেমব্রেন থেকে বের হয় কুড়া। রাইস ব্রান থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংগৃহীত ও পরিশোধিত ভোজ্য তেলই হচ্ছে ‘রাইস ব্রান অয়েল। ২০০৬ সালে নিউজিল্যান্ডে প্রথম এই তেলের উৎপাদন শুরু করে। এখন অনেক দেশেই জনপ্রিয়। বাংলাদেশেও এর ব্যবহার বেড়েছে। যেভাবে পাওয়া যাবে গবাদিপশুর ফিড মিলে ব্যবহৃত রাইস ব্রানকে (ধানের তুষ ফেলে দেয়ার পর চালের ওপর যে লালচে আবরণ/ চালের কুড়া) প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে ব্যবহার করলে আরও বেশি গুণগতমানের রাইস ব্রান পাওয়া যাবে। খড়ের প্রতি গবাদিপশুর চাহিদা কম। আবার উন্নত জাতের ধানের চাষে কমে যাচ্ছে খড়ের পরিমাণ। ফলে গবাদিপশুর বিকল্প খাবারের ওপর জোর দিতে হবে। রাইস ব্রান হতে পারে গবাদিপশুর পুষ্টির বিকল্প। রাইস ব্রান জৈব ভিটামিন, খনিজ ও এন্টি অক্সিডেন্টের ভালো উৎস। প্রক্রিয়াজাতকৃত রাইস ব্রান ব্যবহারের ফলে খাবারের মান বৃদ্ধি পাবে কমে আসবে মূল্য। মানুষের খাদ্যে রাইস ব্রান ধান থেকে ৭-৯ শতাংশ রাইস ব্রান পাওয়া যায়। রাইস ব্রান সরাসরি পশুখাদ্য তৈরিতে ও রাইস ব্রান থেকে উৎপাদিত তেল মানুষের খাদ্যে ব্যবহার হয়। এই রাইস ব্রানকে ফামেের্ন্টশন (গঁাজন) করে তারপর শুকিয়ে ব্যবহার করলে এর ক্ষতিকর উপাদান কমে, খাবারের গুণাগুণ বৃদ্ধি করে। হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী কোনো তেল বলতেই রাইস ব্রানের কথা আগে আসবে। এতে সঠিক পরিমাণে ওরিজানোল নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা দেহের কোলেস্টেরল শোষণের মাত্রা কমাতে এবং বিতাড়নের মাত্রা বাড়াতে পারে। হাটের্র সুস্থতায় কাযর্কর পরিবেশ বজায় রাখতে এই তেল খুবই ভালো। এটিতে আছে এক শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ভিটামিন-ই। আছে অ্যান্টিমিউটাজেনিক উপাদান যা ক্যান্সার প্রতিরোধী। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এই ভিটামিনের ওপর ভরসা রাখা হয়। এই তেলে আছে টকোট্রিনল। প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় বিপাকক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে বেশ কাজ করে রাইস ব্রান। এটা দিয়ে রান্না করা হলে সহজে খাবার পচে না, আবার দুগর্ন্ধও হয় না। রোগ প্রতিরোধে রাইস ব্রান রাইস ব্রান অয়েল আছে প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন উচ্চমানের ভিটামিন-ই। এ ধরনের এন্ট্রিঅক্সিডেন্ট দেহের ফ্রি রেডিকেল প্রতিরোধ করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে সব প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে বিধায় রাইস ব্রান অয়েল চমের্রাগ প্রতিরোধ করে চমের্র মসৃণতা বৃদ্ধি করে। তা রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রেখে রক্তচাপ কমায় এবং ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে রাখে। রাইস ব্রান অয়েল জাপান, চীন ও অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোয় ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং জাপানে এ তেল ‘হাটর্ অয়েল’ নামে পরিচিতÑ যা কোলেস্টেরল কমায়। রাইস ব্রানের বতর্মান প্রেক্ষাপট বাংলাদেশে রাইস ব্রান অয়েল বা চালের কুড়ায় তেল উৎপাদন শুরু হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে। বাংলাদেশে ১৫টি রাইস ব্রান অয়েল মিলের মধ্যে বতর্মানে চালু ১৩টির উৎপাদন মতো। এর উৎপাদন ক্ষমতা ২ লাখ ৫৮ হাজার মেট্রিক টন হলেও বতর্মানে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন রাইস ব্রান অয়েল। উৎপাদন বাড়াতে যা করণীয় রাইস ব্রান তেলের পযার্প্ততা নিশ্চিত করতে কুড়া রপ্তানি বন্ধ, এঙ্গেল বার হলার রাইস মিলগুলোকে রাবার রোল হলার মিল (সেমি. অটোরাইস মিল) অথবা পূণার্ঙ্গ অটো রাইস মিলে রূপান্তরিত করা জরুরি। এঙ্গেল বার রাইস মিলের (ম্যানুয়েল) কুড়াও রাইস ব্রান তেল তৈরির অনুপযোগী। উৎপাদন বৃদ্ধিতে রাইস ব্রান অয়েল মিলগুলোয় গ্যাস সংযোগ জরুরি প্রয়োজন। যারা উৎপাদন করছে পাবনার ঈশ্বরদীতে ২০১১ সালে রশিদ অয়েল মিলস লিমিটেড হোয়াইট গোল্ড ব্র্যান্ড নামে প্রথম রাইস ব্রান তেল উৎপাদন শুরু করে। এখন সব মিলিয়ে ছয়টি প্রতিষ্ঠান এ তেল উৎপাদন করছে। এর বাইরে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অন্যদের কাছ থেকে কিনেও এ তেল বাজারজাত করছে। আরও নতুন ছয়-সাতটি প্রতিষ্ঠান আসছে এ খাতে বিনিয়োগ করতে। বতর্মানে এ খাতে কমর্সংস্থান হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার মানুষের। বিনিয়োগ হচ্ছে আনুমানিক ৬০০ কোটি টাকা। রপ্তানির সম্ভাবনা বাংলাদেশ ধান উৎপাদনকারী দেশ হওয়ায়, আমাদের এ তেল উৎপাদনে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। বিশ্বের অনেক দেশেই আমাদের কাছ থেকে তেল কিনতে আগ্রহী। কিছু কিছু দেশে অল্প পরিমাণে এটি রপ্তানি শুরু হয়ে গেছে। ব্যাপক হারে রপ্তানি শুরু করা গেলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অজর্ন করা সম্ভব। পোল্ট্রিতে অবদান রাখবে রাইস ব্রান বাণিজ্যিক পোল্ট্রিতে ভ‚মিকা রাখতে পারবে এ তেল। এ তেল গবাদিপশুর খাদ্যে ব্যবহারের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। এ জন্য বিভিন্ন ফিড ইন্ড্রাস্টিকে এগিয়ে আসতে হবে বাণিজ্যিকীকরণ করলে খাদ্যমান বাড়বে সাথে কমবে মূল্য। বাজার মূল্য বাংলাদেশে ১ লিটার রাইস ব্রান অয়েলের দাম ১৩০-১৪০ টাকা। লেখক : শিক্ষাথীর্ ও সাংবাদিক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়