বিকশিত বাংলাদেশের উদ্যোগ

নিরাপদ সবজি উৎপাদন

প্রকাশ | ১১ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

তারেক মাহমুদ, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ১১ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ১২ গ্রামের প্রায় ৩০০ জন কৃষক ১৮২ বিঘা জমিতে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করে আলোচনায় এসেছেন। নিরাপদ সবজি উৎপাদনে কৃষকদের সহযোগিতা করছে বিকশিত বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। খুব শিগগিরই কৃষকদের উৎপাদিত নিরাপদ সবজিগুলো দেশের বাজার ছাড়িয়ে বিদেশে রপ্তানির আশা করছে তারা। সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ বারোমাসি টমেটো, পেঁপে, বেগুন, লাউ, পেয়ারা ও শিমসহ বিভিন্ন জাতের সবজি লাগানো হয়েছে। আর এ সব সবজি শতভাগ জৈবপদ্ধতিতে চাষ করা হচ্ছে। এ সব সবজি উৎপাদনে কোনো রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি। ফলে এই জৈবপদ্ধতিতে উৎপাদিত সবজির একদিকে যেমন ভালো দামও পাচ্ছেন অন্যদিকে বাজারে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ সবজিগুলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। অনেকে আবার জমি থেকেই পকেট ভরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি বছরগুলোতে কালীগঞ্জ উপজেলায় নিয়ামতপুর ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামে কম্পোস্ট সার উৎপাদন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা আছে। এ উপজেলায় বেশির ভাগ গ্রামে নিরাপদ সবজি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত কৃষানি। তবে গত ৬ মাস ধরে উপজেলার ১২টি গ্রামে ১২ জন মডেল চাষিসহ প্রায় ৩০০ জন চাষি তারা নিজেদের জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপাদন করছে শতভাগ জৈবপদ্ধতিতে। এর মধ্যে মডেল বা প্রদশর্নীয় প্লটে উপজেলার লুচিয়া গ্রামে ৩৩ শতক জমিতে ইশারত আলী মÐল বাধাকপি, জগন্নাথপুর গ্রামে ৩৩ শতক জমিতে মাহমুদুল হাসান ফুলকপি, বাদুরগাছা গ্রামে ৩৩ শতক জমিতে ওলিয়ার রহমান শিম, ষাটবাড়িয়া গ্রামের ৩৩ শতক জমিতে সাখাওয়াত লিটন শসা, বেথুলি গ্রামে গোলাম রহমান ৩৩ শতক জমিতে বেগুন, বনখিদ্দা গ্রামের নজরুল ইসলাম পলিথিন পদ্ধতিতে ৩৩ শতক জমিতে বেগুন, মোস্তবাপুর গ্রামে মনোয়ারা বেগম বেগুন ও পান, ঘোষনগর গ্রামের আব্দুর রশিদ ৩৩ শতক জমিতে হাজারী লাউ, ইশ্বরবা গ্রামের জয়নাল আবেদিন ৩৩ শতক জমিতে শাহী পেঁপে, মাহামুদপুর গ্রামের হারুন অর রশিদ ৩৩ শতক জমিতে থাই পেয়ারা, কুল্লাপাড়া গ্রামের নিখিল কুমার ৩৩ শতক জমিতে বারোমাসি টমেটো, আগমুন্দিয়া গ্রামে ৩৩ শতক জমিতে আনোয়ারুল ইসলাম বেগুন চাষ করছেন। এ ছাড়া উপজেলার প্রায় ৩০০ চাষি ১৮২ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করছেন। জগন্নাথপুর কৃষক মাহমুদুল হাসান জানান, ৩৩ শতক জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন। বাজারে বিষযুক্ত ফুলকপির চেয়ে আরও বেশি ভালো ফুলকপি তিনি উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন জৈবপদ্ধতিতে। প্রতিটি ফুলকপির সাইজ হয়েছে প্রায় ৫০০ গ্রাম করে। প্রতিকেজি ফুলকপি ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, তার ধারণাই ছিল না রাসায়নিক সার বাদে এত ভালো ফসল উৎপাদন করা যায়। তিনি বলেন, এখন থেকে তিনি জৈবপদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করবেন। বনখিদ্দা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, তিনি কীটনাশক বাদে বেগুন চাষ করছেন। তার বেগুনের সাইজও অনেক বড়। ২টি বেগুন এককেজি সাইজ। ৩৫-৪০ টাকা দরে বেগুন বিক্রি করছেন। তিনি আরও বলেন, পলিথিন পদ্ধতিতে বেগুন চাষ করে সফল হয়েছেন। পলিথিন পদ্ধতিতে ঝিনাইদহে কেউ বেগুন চাষ করেনি এখনো। আমি হয়তো প্রথম। বেগুন গাছে আসার পর পর যদি পলিথিন ঢুকিয়ে দেয়া যায় তাহলে এর সাইজ অনেক ভালো হয় এবং কোনো পোকা এটিকে আক্রমণ করতে পারে না। উপজেলার কুল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক নিখিল কুমার জানান, তিনি তার জমিতে জৈবপদ্ধতিতে বারোমাসি (বারী৪) জাতের টমেটো চাষ করছেন। সারা বছর এই টমেটো উৎপাদন হয়। প্রতিকেজি টমেটো ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি করছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ জাহিদুল করিম জানান, সত্যিই গবের্র বিষয় ঝিনাইদহে কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৩০০ জন কৃষক একযোগে নিরাপদ খাদ্যে বা সবজি উৎপাদন করছে। মানুষ এখন বিষমুক্ত সবজি পেতে চায়।