অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদন

বিশ্বে দ্বিতীয় বাংলাদেশ

প্রকাশ | ১৬ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

ইমরান সিদ্দিকী
অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ের মৎস্য উৎপাদনে শীর্ষ পাঁচটি দেশ হচ্ছে- চীন, ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও কম্বোডিয়া। চীনে উৎপাদন ২০ লাখ টনের বেশি। মহামারি করোনার কারণে মাছ উৎপাদন কমতে থাকে। চলতি বছর দেশটির মাছ উৎপাদনের তথ্য পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। এতে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে তাদের পদ্ধতি নেতিবাচক হয়। উৎপাদনে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারতের উৎপাদন ছাড়িয়েছে ১৭ লাখ টন। চীনের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির কারণে ভারতের প্রবৃদ্ধি এখন শীর্ষে। এর পরই অবস্থান বাংলাদেশের, যেখানে বছরে মাছের উৎপাদন প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টন। বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়া কোনো দেশেরই প্রবৃদ্ধি উৎপাদনের ধারাবাহিকতায় নেই। মিয়ানমার ও কম্বোডিয়ার প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক ধারা বিরাজ করছে। মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য এখন আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে স্বীকৃত। মৎস্য খাত বাংলাদেশে একটি স্বর্ণালি অধ্যায় সৃষ্টি করছে। বিশ্বে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ের মৎস্য আহরণে বাংলাদেশের অবস্থান এখন তৃতীয়। এছাড়া বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে পঞ্চম। ইলিশ উৎপাদনে প্রথম ও তেলাপিয়া উৎপাদনে চতুর্থ। পাশাপাশি গত পাঁচ বছরে অভ্যন্তরীণ এসব তথ্য উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, মৎস্য উৎপাদনে শীর্ষে থাকা চীনের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশকে দ্বিতীয় অবস্থানে তুলে এনেছে। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে মাছের উৎপাদন ছিল ২৮ লাখ ৯৯ হাজার টন। গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে দেশে মাছের মোট উৎপাদন ছাড়িয়েছে ৪৫ লাখ ৩ হাজার টন। ফলে এক দশকে মাছ উৎপাদন বেড়েছে ১৬ লাখ টন বা প্রায় ৫৫ শতাংশ। প্রতি বছর গড়ে সাড়ে ৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আবার অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ের মৎস্য উৎপাদনও বাড়ছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন ছিল ১০ লাখ ২৪ হাজার টন, পরের অর্থবছরে ১০ লাখ ৪৮ হাজার ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১১ লাখ ৬৩ হাজার, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১২ লাখ ১৭ হাজার ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১২ লাখ ৩৬ হাজার টন। ফলে পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার টন। এ সময়ে মাছের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। কৃত্রিম প্রজনন ও চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিপন্ন ও বিলুপ্তপ্রায় ৩১টি দেশি প্রজাতির মাছকে বাজারে ফিরিয়ে এনেছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)। বিবিএসের সর্বশেষ অর্থনৈতিক শুমারি অনুযায়ী, দেশে বছরে গড়ে মাছের বার্ষিক উৎপাদন সাড়ে ৩৫ লাখ টন। যার বাজারমূল্য প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে চাষ করা মাছের পরিমাণ প্রায় ২০ লাখ টন। তথ্যমতে, বিএফআরআই ১৬ শতাংশ অধিক উৎপাদনশীল রুই জাতীয় মাছের নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে। এ ছাড়া দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে চাষ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক শতাধিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৪৭৫টি সামুদ্রিক প্রজাতি, ৩৬০টি স্বাদু পানির প্রজাতি, ৩৬টি চিংড়ি প্রজাতির মাছ রয়েছে। মৎস্যজাত পণ্য তৈরি খাতকেও সরকার উৎসাহিত করছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল তথা হাওড় অঞ্চল, পার্বত্য অঞ্চল, উপকূলীয় অঞ্চলে ভিন্ন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। মাছকে নিরাপদ রাখার জন্য অভয়াশ্রম সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ করছে সরকার। নদীতে যাতে মাছের প্রজনন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং মাছ বেড়ে উঠতে পারে সেজন্য প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সমন্বিতভাবে কাজ করছেন। মৎস্য খাতে উপযুক্ত পদক্ষেপের কারণে দেশীয় প্রজাতির মাছ, সামুদ্রিক মাছ ও অপ্রচলিত মৎস্যসম্পদের বিস্তার ঘটছে। ২০২৬ সাল নাগাদ বিশ্বের যে চারটি দেশ মাছ চাষে বিপুল সাফল্য অর্জন করবে, তার মধ্যে প্রথম দেশটি হবে বাংলাদেশ। এরপর থাইল্যান্ড, ভারত ও চীনের অবস্থান থাকবে। মৎস্য গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রতিবেশ ব্যবস্থা মিঠাপানির মাছ চাষের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। এখানকার সোয়া আড়াই লাখ হেক্টর উন্মুক্ত জলাশয় আর গ্রামীণ এলাকায় ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা লাখ লাখ পুকুরে মাছ চাষের যে সম্ভাবনা রয়েছে, তা এখনো পুরোপুরি কাজে লাগানো হয়নি।