যশোরের খেজুর রসের পাটালি গুড়

চাহিদা রয়েছে বিদেশেও

প্রকাশ | ২৫ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

কৃষি ও সম্ভাবনা ডেস্ক
শীতের আমেজ শুরু হয়েছে। শীত এলেই অনেকটাই পাল্টে যায় গ্রাম-বাংলার চিত্রপট। শুরু হয় শীতের মৌসুমে ঐতিহ্যবাহী পিঠা-পুলির উৎসব আর খেজুর গাছের রস থেকে তৈরি সুস্বাদু পাটালি গুড়। এই পাটালি গুড়ের চাহিদা শুধু বাংলাদেশেই নয় রয়েছে বিদেশেও। ইতোমধ্যেই গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে গাছিরা। বেলা গড়লেই খেজুরগাছে চড়ে গাছিরা রস সংগ্রহের জন্য গাছ পরিষ্কারসহ হঁাড়ি বঁাধার কাজ শুরু করে। সূযাের্স্তর আগেই গাছে হঁাড়ি লাগানো শেষ করে। রাত শেষে হঁাড়িতে যে পরিমাণ রস সংগ্রহ হয় সেই রস আবার ভোর থেকে দুপুর পযর্ন্ত নামাতে ব্যস্ত থাকে গাছিরা। সমস্ত রস বিশেষভাবে তৈরি করে নেয়া একটি স্টিলের বড় কড়াইয়ে জ্বাল করে সুস্বাদু গুড় তৈরি করছে। পুরোদমে মৌসুম শুরু না হওয়ায় বেচা-কেনা তেমন একটা জমে ওঠেনি এমনটাই বলছে গাছিরা। দেশের উত্তরাঞ্চলে অনেকটা আগে থেকেই শীত নামে। শীত নামার সঙ্গে সঙ্গে নওগঁার রানীনগর, আত্রাই, মান্দা, নিয়ামতপুর, পোরশা, সাপাহার, পতœীতলা, ধামরইহাট, বদলগাছি ও মহাদেবপুর উপজেলায় প্রান্তিক জনপদের গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন জেলা থেকে গাছিদের আগমন ঘটে। গাছিরা খেজুর গাছপ্রতি টাকা বা গুড় দেয়ার চুক্তিতে খেজুর রস সংগ্রহ ও পাটালি গুড় তৈরি করে। খেজুর রস দিয়ে স্থানীয় গাছিরা নালি গুড়ও তৈরি করে। এই নালি গুড়ের খুবই চাহিদাও রয়েছে। খেজুরের পাটালি গুড় বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পযর্ন্ত। নালি গুড় বিক্রি হয় ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকায়। খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করে নালি ও পাটালি গুড় তৈরির পবর্ চলবে প্রায় চৈত্র মাসের মাঝামাঝি পযর্ন্ত। খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। খেজুর রস ও গুড়ের জন্য রানীনগর উপজেলার এক সময় খ্যাতি ছিল। সময়ের বিবতের্ন হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস ও গুড়। কিছুদিন আগেও বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে, ক্ষেতের আইলে, ঝোপঝাড়ের পাশে ও রাস্তার দুই ধার দিয়ে ছিল অসংখ্য খেজুরগাছ। কোনো পরিচচার্ ছাড়াই অনেকটা পৃাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠতো এসব খেজুরগাছ। প্রতিটি পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত রস দিয়ে তৈরি করা হতো সুস্বাদু খেজুরের গুড়। গ্রামীণ জনপদে সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবে পুকুর পাড়ে রাস্তার ধারে পরিবেশবান্ধব খেজুরগাছ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। ইট-ভাটার রাহুগ্রাসে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার বেশি হওয়ার কারণে যে পরিমাণ গাছ চোখে পড়ে তা নিবির্চারে নিধন করায় দিনদিন খেজুরগাছ বিলুপ্তির পথে। নাটোর জেলার লালপুর উপজেলা থেকে আসা গাছিয়া রফিখুল ইসলাম ও তার সহকমীর্রা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘প্রায় প্রতি বছরেই রানীনগর উপজেলার ভবানীপুর, দুগার্পুর ও কুজাইল এলাকায় তঁাবু গেড়ে ওই এলাকার খেজুর গাছমালিকদের কাছ থেকে ৪ মাসের জন্য গাছভেদে ৫ থেকে ৭ কেজি করে খেজুরের গুড় দিয়ে গাছগুলো আমরা নিই। চাহিদামতো খেজুরগাছ না পাওয়ার কারণে রস কম হওয়ায় আশানুরূপ গুড় তৈরি করা যায় না। যার কারণে তেমন পোষায় না। তারপরও এ বছর প্রায় ১৬০টির মতো খেজুরগাছের মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করেছি। বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে না দিয়ে জীবন-জীবিকার জন্য এই পেশাই ধরে রেখেছেন। তবে যেভাবে খেজুরগাছ কাটা হচ্ছে তাতে অল্প দিনের মধ্যেই এই এলাকায় আর তাদের ব্যবসা হবে না। শীত একটু বেশি পড়তে শুরু করলে আত্মীয়-স্বজন আনা-নেয়া ও পিঠা-পুলির উৎসবে খেজুর গুড়ের দাম ও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সে সময় তাদের লাভ একটু বেশি হয়। যে পরিমাণে শ্রম দিতে হয় সে পরিমাণে আমরা লাভ করতে পারি না। তবুও পেশাগত কারণে চালিয়ে যাচ্ছে এই ব্যবসা’। বতর্মান বাজারে আখের গুড়, চিনির যে মূল্যে বেচা-কেনা হচ্ছে তার চেয়ে মানসম্পূণর্ খেঁজুরের গুড়ের দাম এ বছর কিছুটা বেশি হবে এমনটাই আসা করছেন গাছিরা।