অথর্করী ফল সুপারি

প্রকাশ | ০২ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

নাহিদ বিন রফিক
সুপারি এক প্রকারের ফল-ফসল। এর ইংরেজি নাম বিটেল নাট। সংস্কৃত ভাষায় গুবাক। সুপারি পাম গোত্রের অন্তভুর্ক্ত। পান এবং সুপারি একে অপরের পরিপূরক। গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ নিয়মিত পান-সুপারি খান। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভোজের শেষে বিশেষ আপ্যায়নের তালিকায় এর স্থান থাকে সবার ওপরে। বাঙালিদের এ রেওয়াজ বহু পুরনো। এমনও বুড়াবুড়ি আছেন খাবার কম খেতে রাজি, কিন্তু প্রতিবেলা পান-সুপারি থাকতেই হবে। কেউ আছেন খাওয়া শেষে এক টুকরো সুপারি খেতে অভ্যস্ত। ফলজাতীয় ফসলের মধ্যে সুপারি চাষে সবচেয়ে কম জায়গা লাগে। প্রতিক‚ল পরিবেশেও এরা বেড়ে ওঠতে পারে। সারিবদ্ধ গাছ বাড়ির শোভা বাড়ায়। সুপারির আদি নিবাস এ দেশে না হলেও উপক‚লীয় এলাকায় এর ফলন ভালো হয়। এসব জেলাগুলোর মধ্যে বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, খুলনা, বাগেরহাট, নোয়াখালী, চঁাদপুর, ল²ীপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অন্যতম। এরা সবল কাÐের অধিকারী এবং শাখাহীন হয়। এক বীজপত্রী এ বৃক্ষ সাধারণত ৮০Ñ১০০ ফুট উচ্চতা হয়। এর পাতার আকার লম্বা। মধ্যশিরা বেশ শক্ত এবং দুপাশে চিরুনির দঁাতের ন্যায় সবুজ পত্রফলক সাজানো থাকে। বড় ধরনের পত্রখোল কাÐের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে গাছে ফুল আসে আর পাকে কাতির্ক-অগ্রহায়ণে। কঁাদিতে থোকায় থোকায় অনেক ফল ধরে। কঁাচা ফল দেখতে সবুজ। পরিপক্ক হলে হলুদ বা কমলা রঙ ধারণ করে। কঁাচা ও পাকা উভয় ফল খাওয়া যায়। ফল দেখতে অকেটা গোলাকার। সুপারি গাছের শিকড় উপরেও বিস্তৃত থাকে। বাংলাদেশে এর অথৈর্নতিক গুরুত্ব অনেক। আন্তজাির্তক বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক। ইচ্ছে করলে আমরাও লুফে নিতে পারব বৈদেশিক মুদ্রার্ অজের্নর বিরাট সুযোগ। সুপারিতে কিছু ভেষজগুণ রয়েছে। সুপারি আগুনে ভেজে মিহি গুঁড়া করে নিয়মিত দঁাত মাজলে দঁাতের ব্যথা ভালো হয়। এ ছাড়া রক্ত আমাশয়, কৃমি ও অজীণর্ রোগের উপকার পাওয়া যায়। সুপারি শরীরকে চাঙ্গা রাখে। বমিভাব দূর করে। দঁাতের ক্ষয় রোধ করে। কাজ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। হজমে সহায়তা করে। দঁাতের অ্যান্টিসেপ্টিক হিসেবে কাজ করে। এতে মুখের দুগর্ন্ধ দূর হয়। পাশাপাশি ক্ষয় রোধ করে। রঙ ও ঔষধশিল্পের কঁাচামাল হিসেবে সুপারি ব্যবহার হয়। পানি শোধনেও কাজ করে। গাছ দিয়ে কবরের পাটাতন দেয়া যায়। এ ছাড়া কুঁড়েঘরের বেড়া নিমাের্ণ কাজে লাগে। সুপারি পাতা সোয়ারি হিসেবে ব্যবহার হয়। মাটিতে পাতার খোলের উপর একজন বসে থাকে, আরেকজন পাতার অগ্রভাগ ধরে টেনে নিয়ে যায় এবাড়ি ওবাড়ি। এ এক ভিন্ন রকম আনন্দ। এমন দৃশ্য গ্রামাঞ্চলে আজও চোখে পড়ে। আমরা জানি, বৃক্ষ রোপণের ক্ষেত্রে রৌদ্রোজ্জ্বল জমি উত্তম। কিন্তু সুপারির বেলায় কিছু ভিন্নতা আছে। আর তা হলো: জমি হওয়া চাই হালকা ছায়াযুক্ত এবং স্যঁাতসেঁতে পরিবেশ। প্রখর রোদ ও তীব্র বাতাস গাছের বাড়বাড়তি এবং কাক্সিক্ষত ফলনের অন্তরায়। সুনিষ্কাশিত, উঁচু, উবর্র এবং শুষ্ক মৌসুমে সেচের ব্যবস্থা আছে এমন জমি নিবার্চন করতে হবে। এ দেশে এখন পযর্ন্ত সুপারির উচ্চফলনশীল জাতের উদ্ভাবন হয়নি। আবাদকৃত জাতগুলো স্থানীয়। এর ফলন কম। তবে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে ফলন বাড়ানো সম্ভব। চারা লাগানোর আগে বাগানে অবশ্যই ছায়া দেয় এমন গাছ রোপণ করে নিতে হবে। এ জন্য মাদার গাছ হলে সবচেয়ে ভালো হয়। ৬ ফুট আকারের মাদারের ডাল ১২ ফুট পরপর লাগাতে হবে। বাগানের চারপাশে আম, কঁাঠাল, জাম, নারকেল এসব ফল গাছ লাগালে বাতাস প্রতিরোধ করবে। পাশাপাশি ফল বিক্রি করে পাওয়া যাবে বাড়তি আয়। চারা রোপণের ১ মাস পূবের্ গতর্ তৈরি করতে হবে। গতের্র দৈঘর্্য, প্রস্থ ও গভীরতা হবে ২ ফুট করে। খড়-কুটা পুড়িয়ে পুরো গতের্র মাটি শোধন করে নেয়া ভালো। গতর্প্রতি ১০ কেজি জৈবসার এবং ১ কেজি সরিষার খৈল মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। প্রতিচারার দূরত্ব হবে ৮ দশমিক ৫ ফুট করে। জুন হতে সেপ্টেম্বর পযর্ন্ত চারা লাগানো যায়। ভালো ফলনের জন্য প্রয়োজন সুষম সার ব্যবস্থাপনা। সেই সঙ্গে আগাছা পরিষ্কার, মালচিং, গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দেয়া, সেচ, নিষ্কাশন এবং রোগপোকা দমন। সাধারণত ৫ বছরে গাছে ফল ধরে। ১০-৪০ বছর পযর্ন্ত সবোর্চ্চ ফলন হয়। একটি গাছে ৩-৫টি ছড়া হতে পারে। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে হেক্টরপ্রতি ৪-৬ টন ফলন পাওয়া সম্ভব। লেখক: টেকনিক্যাল পাটিির্সপেন্ট, কৃষি তথ্য সাভির্স, বরিশাল