শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গোলাপ ফুল চাষে ক্যাপ প্রযুক্তি

গোলাপ চাষে ক্যাপ প্রযুক্তি একটি সফল ও জনপ্রিয় প্রযুক্তি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে এর ব্যবহার সীমিত। শুধু ক্যাপ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে গোলাপ ফুলের আকার, গুণগতমান ও সংরক্ষণকাল বৃদ্ধি পাওয়ায় ফুল কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করা যায়। শুধু তাই নয়, এতে ফুলটি আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির উপযোগী হয়। আর এই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য ফুলপ্রতি খরচ হয় মাত্র ৫০ পয়সা। আন্তর্জাতিক বাজারে চীনে ফুলের চাহিদা ব্যাপক। উন্নতমানের গোলাপ উৎপাদনের জন্য সেখানকার ফুল চাষিরা নিয়মিত রোজক্যাপ ব্যবহার করেন। বাংলাদেশে কৃষকরাও এখন এ প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। আমাদের দেশে বিভিন্ন দিবস ও অনুষ্ঠানে এখন ফুলের ব্যবহার প্রায় অপরিহার্য। আর তাই চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে দেশে ফুল চাষের এলাকা প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও বাংলাদেশের ফুলের বাজার তৈরির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে
প্রফেসর আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ
  ১৫ মে ২০২২, ০০:০০

গোলাপ ফুল একটি উচ্চমূল্যের ফসল। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অনেক শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তা ফুলচাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কারণ এটি চাষাবাদে সহজেই অধিক মুনাফা ঘরে তোলা যায়। কিন্তু ফুলচাষে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ একটি প্রাত্যহিক ঘটনা। চাষাবাদের ক্ষেত্রে প্রায়শই রোগবালাই, পোকামাকড়ের আক্রমণ ও নানাবিদ অজীবীয় পরিবেশগত কারণে ফুলের বাহিরের দিকের পাপড়িসমূহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক্ষেত্রে চাষি ভাইয়েরা জমি থেকে ফুল সংগ্রহ করার পর ফুলের বাহিরের পাপড়িগুলো ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে বাজারজাত করে থাকেন। এতে ফুলের আকার ছোট হয়ে যায় ও সংরক্ষণকাল কমে যায়। ফলশ্রম্নতিতে এসব ফুলের বাজারমূল্য কম হয়। এসব সমস্যা উত্তরণের জন্য গোলাপ ফুলের কলিতে ক্যাপ পরানো একটি লাগসই ও লাভজনক প্রযুক্তি।

\হরোজক্যাপ হলো স্থিতিস্থাপকতা গুণসম্পন্ন পস্নাস্টিকের এক ধরনের ইলাস্টিক ক্যাপ বা জালিকা। এগুলোকে বাড নেটও বলা হয়। এগুলো দেখতে অনেকটা বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ফলের বাহিরে থাকা জালিকার মতো। আকারে এগুলো সাধারণত ৮ থেকে ১২ সেমি হয়ে থাকে আর পুরুত্ব ১ থেকে ৫ মিমি হয়ে থাকে। বাজারে বিভিন্ন রংয়ের ক্যাপ পাওয়া যায়, তবে সাদা ও গোলাপি রংয়ের ক্যাপ এর চাহিদা বেশি থাকে। সাধারণত গোলাপের কুঁড়ি বের হওয়ার পর ক্যাপটি ওই কুঁড়িতে পরিয়ে দিতে হয়। রোজ ক্যাপ ফুলের কলি ও ফুলকে ঢেকে রাখে বিধায় গোলাপ কুঁড়িটি সুরতি থাকে এবং কুঁড়িটি পোকা-মাকড়ের উপদ্রব, রোগবালাই ও প্রাকৃতিক সব ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায়। এ ক্যাপটি স্থিতিস্থাপক হওয়ায় কুঁড়িটি বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাপটিও বাড়তে থাকে এবং ক্রমান্বয়ে ক্যাপের ভেতর কুঁড়িটি একটি উন্নতমানের পূর্ণাঙ্গ গোলাপ ফুল হিসেবে প্রস্ফুটিত হয়। গোলাপ ফুলে ক্যাপ পরানোর কাজটি সতর্কতার সঙ্গে হাত দিয়ে করতে হয়। প্রিয় চাষি ভাইয়েরা, আপনারা অবশ্যয় গুণগতমানসম্পন্ন ক্যাপ ব্যবহার করবেন, যেগুলো ফুলের কলিটিকে ভালোভাবে ঢেকে রাখে। গোলাপ ফুলে নিম্নমানের ক্যাপ ব্যবহারে অনেক সময় ভারী কুয়াশা ও বৃষ্টিবাদলের সময় ক্যাপের ভেতর পানি জমে থাকায় নানবিদ ছত্রাকজনিত রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

গোলাপের বাড ক্যাপ প্রযুক্তি ব্যবহারে ফুলের কলি ও ফুল সুস্থ সবলভাবে বেড়ে উঠে। ক্যাপ পরানো ফুলে রোগ বালাইয়ের আক্রমণ কম হয়। পোকামাকড়ের আক্রমণ কম ঘটে। আবার রোদের তীব্রতাসহ নানাবিদ অজীবীয় কারণে ফুলের পাপড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। ফুলের রং উজ্জ্বল হয়। ফুল আকারে বড় হয়। ফুলের সংগ্রহোত্তর জীবনকাল দীর্ঘ হয়। গোলাপের বাহিরে এ ক্যাপটি থাকায় সংগ্রহ, পরিবহন এবং বাজারজাতকরণের সময় ফুল কোনোভাবেই তিগ্রস্ত হয় না।

গোলাপ চাষে ক্যাপ প্রযুক্তি একটি সফল ও জনপ্রিয় প্রযুক্তি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে এর ব্যবহার সীমিত। শুধু ক্যাপ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে গোলাপ ফুলের আকার, গুণগতমান ও সংরক্ষণকাল বৃদ্ধি পাওয়ায় ফুল কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি করা যায়। শুধু তাই নয়, এতে ফুলটি আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির উপযোগী হয়। আর এই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য ফুলপ্রতি খরচ হয় মাত্র ৫০ পয়সা। আন্তর্জাতিক বাজারে চীনে ফুলের চাহিদা ব্যাপক। উন্নতমানের গোলাপ উৎপাদনের জন্য সেখানকার ফুলচাষিরা নিয়মিত রোজক্যাপ ব্যবহার করেন। বাংলাদেশে কৃষকরাও এখন এ প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

আমাদের দেশে বিভিন্ন দিবস ও অনুষ্ঠানে এখন ফুলের ব্যবহার প্রায় অপরিহার্য। আর তাই চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে দেশে ফুল চাষের এলাকা প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও বাংলাদেশের ফুলের বাজার তৈরির

যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

লেখক: অধ্যাপক, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগ

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে