ফুলের নাম নাগলিঙ্গম

প্রকাশ | ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নামটা শুনেই কেমন নাগ-নাগিনির ব্যাপার চলে আসে। ফুলের পরাগচক্র দেখতে অনেকটা সাপের ফণার মতো। হয়তো এ কারণেই এর নাম নাগলিঙ্গম। জনশ্রæতি আছে, নাগলিঙ্গম গাছের ফুল ও ফল একান্তই নাগ-নাগিনির সম্পদ। যদিও বাস্তবে এর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। রমনা পাকের্ বিকেলে হঁাটতেছিলাম বন্ধুদের সঙ্গে, কিছু পাখির ছবি তোলা যায় কিনা। বন্ধু সুবির হঠাৎ দৃষ্টি আকষর্ণ করল। এই দেখ নাগলিঙ্গম! এত বড় গাছ! গাছের গোড়া ফুঁড়ে বের হওয়া লম্বা লতার মতো শাখায় ছোট ছোট হাজারো কুঁড়ি। এক সময় কুঁড়ি থেকে টকটকে লাল পলাশ কিংবা শিমুলের মতো ফুল মুখ বের করে আকাশের পানে। নাগলিঙ্গম ফুলের পাপড়ি, রেণু, ফুলের গঠন আরো মোহনীয়। পাপড়ির মাথায় অসংখ্য ছোট ছোট সাপের মতো ফণা তোলা! তাই বোধ হয় অনিন্দ্য সুন্দর। এই ফুলের জন্যই গাছের নাম হয়েছে নাগলিঙ্গম। নাগলিঙ্গমের বৈজ্ঞানিক নাম ঈড়ঁৎড়ঁঢ়রঃধ মঁরধহবহংরং. ইংরেজি নাম ঈধহহড়হনধষষ ঃৎবব. এটি খবপুঃযরফধপবধব (লিসাইথিডেসিয়া) গোত্রের। নাগলিঙ্গম গাছ সাধারণত ১০ থেকে ৩০ মিটার পযর্ন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর গোড়ায় বেলের মতো শত শত ফল হয়। এটি একটি ঔষধি বৃক্ষ। ফল হুবহু কামানের গোলার মতো হওয়ায় এ গাছ ইংরেজদের কাছে ক্যানন বল নামে পরিচিত। নাগলিঙ্গম ফল হাতির প্রিয় খাবার, এ জন্য কোথাও এ উদ্ভিদটি হাতিফল নামেও পরিচিত। নাগলিঙ্গমের ফুল গাঢ় গোলাপি, সেই সঙ্গে হালকা হলুদ রঙের মিশ্রণ। পাপড়ি ছয়টি, পাপড়ি গোলাকার কুলি­পাকানো। যেন ফণা তোলা সাপ। ফুলগুলো বেশ বড় বড়। এক কথায় দেখতে অসাধারণ! নাগলিঙ্গম সৌরভের জন্যও সেরা। কী দিন, কী রাত, নাগলিঙ্গম গাছের পাশ দিয়ে গেলে এর তীব্র ঘ্রাণের মাদকতা আপনাকে কাছে টানবেই। বিরল প্রজাতির এই ফুলের সৌরভে রয়েছে গোলাপ আর পদ্মের সংমিশ্রণ। দ্বিজেন শমার্ তার শ্যামলী নিসগর্ বইয়ে লিখেছেন, ‘আপনি বণের্, গন্ধে, বিন্যাসে অবশ্যই মুগ্ধ হবেন। এমন আশ্চযর্ ভোরের একটি মনোহর অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই অনেক দিন আপনার মনে থাকবে।’ নাগলিঙ্গম ফুল সারা বছর ফুটলেও গ্রীষ্মকাল হচ্ছে নাগলিঙ্গম ফোটার আসল সময়। শীত এবং শরৎকালে গাছে কম ফুল ফুটে। নাগলিঙ্গম আমাদের দেশে বিরল প্রকৃতির গাছ। এই ফুল সচরাচর দেখা যায় না। বেশির ভাগ মানুষের কাছে এটি অপরিচিত। পৃথিবীর অনেক দেশে নাগলিঙ্গম দেখা যায়। তবে এর আদি নিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার গভীর বনাঞ্চলে। গাছটি থাইল্যান্ড ও ভারতের বিভিন্ন মন্দিরে দেখা মেলে। ভারতে এটি দেখা যাচ্ছেÑ অন্তত চার হাজার বছর ধরে। ভারতের শান্তিনিকেতনেও বেশ কিছু বড় আকৃতির নাগলিঙ্গম গাছ আছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গাডেের্ন বেশ কিছু নাগলিঙ্গম চোখে পড়ে। প্রাচীন এ গাছটি দেখতে পাওয়া যায় গাজীপুর রাজবাড়ি ও ব্রি ক্যাম্পাসে। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, নটর ডেম কলেজ ক্যাম্পাস, রমনা পাকর্, বলধা গাডের্ন ও বরিশালেও আছে কয়েকটি। সোহরাওয়াদীর্ উদ্যানে আছে একটি গাছ। কাজর্ন হলের বাগানে আছে ২টি গাছ। গুলিস্তান পাকের্ আছে ২টি গাছ। গুলিস্তান পাকের্র একটি গাছে ফল হয়। বাকিগুলো ফুলের সৌন্দযর্ ছড়িয়েই ক্ষান্ত থাকে। হোটেল রূপসী বাংলার পাশে, ফুলার রোডের মাথায় যেখানে ফোয়ারা আছে সেখানে ছিল একটি প্রাচীন নাগলিঙ্গম গাছ। ফোয়ারা তৈরি করতে গিয়ে গাছটি কাটা পড়ে বলে জেনেছি। পৃথিবীতে এ গাছ এখন বিলুপ্তির পথে। নাগলিঙ্গম গাছের রয়েছে ব্যাপক ঔষধি গুণ। এর ফুল, পাতা ও বাকলের নিযার্স থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরি হয়। এন্টিবায়োটিক, এন্টিফাঙ্গাল, এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহার করা হয় এর নিযার্স। এই গাছ থেকে তৈরি ওষুধ পেটের পীড়া দূর করে। পাতার রস ত্বকের নানা সমস্যায় কাজ দেয়। ম্যালেরিয়া রোগ নিরাময়ে নাগলিঙ্গমের পাতার রস ব্যবহার হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দযের্ বেঁচে থাকুক নাগলিঙ্গম। লেখা ও ছবি : মনজুর কাদের চৌধুরী