বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

একটি মৎস্য ক্লিনিক বানাতে চান রাশেদ

ম যাযাদি রিপোর্ট
  ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০

ভবদহের জলাবদ্ধতায় ও নিষ্ঠুরতায় সংকুচিত জীবন ও জনপদের সংগ্রামী ছেলেটি নাম রাশেদ আহমেদ। তার বাবার নাম কৃষক আব্দুস সালাম। যশোরের কেশবপুর উপজেলার পাজিয়া ইউনিয়নের মনোহরনগর গ্রামে তার বসবাস। চার বছর আগের কথা। দুই ছেলেকে নিয়ে অন্যের জমিতে শ্রম বিক্রি করে অভাবের সংসার চালাতেন আব্দুস সালাম। একবেলা খেলে আরেক বেলা না খেয়ে থাকতে হতো। দিন চলে তো না চলা দশা ছিল রাশেদের পরিবারের।

অভাব অনটনের তাড়নায় কিশোর রাশেদের চোখে মুখে কেমন যেন ভবিষ্যৎ স্বপ্ন স্পষ্ট ভেসে উঠে। বিদ্যা অর্জনের অদম্য স্পৃহা তার চিন্তাচেতনাকে তাড়া করে বেড়ায়। অন্যের জমিতে কাজ করে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জন করে। আরো পড়াশুনার জন্য একটা চাকরির প্রয়োজনে হন্যে হয়ে ঘুরে। এ পথ থেকে ও পথে ঘুরতে ঘুরতে দিশেহারা হয়ে মন পড়ে মাছ চাষে। এরই মধ্যে ডাক পড়ে এক সমাবেশের। রুরাল রিকস্ট্রাকশন ফাউন্ডেশন আর আরএফের বেইজলাইন সার্ভের পর দল গঠনের বিশেষ বৈঠক। হত দরিদ্র হিসেবে চিহ্নিত হয়ে মনোরনগর মৎস্য উৎপাদনকারী দলের প্রাথমিক সদস্য নির্বাচিত হন রাশেদ। পরে সবার সম্মিতিক্রমে একজন লিড ফার্মার নির্বাচিত হন রাশেদ। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন কার্প-গলদা মিশ্রচাষ ও বাজারজাতকরণের ওপর। প্রশিক্ষণ পায় মাটি, পানির গুণাগুণ পরীক্ষার কীটসের ব্যবহারের ওপর। তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানে দক্ষ হয়ে উঠে। শুরু হয় জীবন ও জীবিকার প্রয়োগিক কৌশল। তার অধীনে ৪টি দলের সদস্য ছাড়াও এলাকার সব মৎস্যচাষিদের ঘেরের মাটি পানির গুণাগুণ পরীক্ষা চলতে থাকে। এরই ফলে রাশেদ পরিচিত হয়ে উঠেন এলাকার একজন মাছের ডাক্তার হিসেবে।

রাতারাতি ছড়িয়ে পড়ে তার প্রযুক্তি জ্ঞান ও দক্ষতা। পরিচিত হয়ে উঠে একজন মাছের ডাক্তার হিসেবে। নতুন স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠে রাশেদ। দিনের পর দিন তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের গ্রামগুলোতে। কারও কাছে হাত না পেতে রাশেদ নিজের চেষ্টায় নিজের ও পরিবারের ভাগ্য বদলেছেন। নিজে স্বাভলম্বী হয়েছেন। এরই মধ্যে এগিয়ে আসে আইডিএলসি নামক একটি ঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠান। শুরু হয় ব্যবসায়িক উদ্যোগ। গড়ে উঠে জেজেএস এন্টারপ্রাইজ। শোভা পায় তার দোকানে হরেক রকম মৎস্য ও গবাদিপশুর খাদ্য ও ওষুধপাতির। ব্যস্ত হয়ে পড়ে মাছের ডাক্তার রাশেদ। সকাল-বিকাল মৎস্যচাষিদের আসা-যাওয়ার পাজিয়ার জেজেএস এন্টারপ্রাইজ জনাকীর্ণ হয়ে উঠে। হাস্যময়ী ও সদালাপি রাশেদ বলেন, এবার একটা মৎস্য ক্লিনিক বানাতে চাই। তার এগিয়ে চলার গল্প এখন মানুষের মুখে মুখে। এলাকার অনেক তরুণ রাশেদের মতো জীবনের চাকা ঘুরাতে তার আদর্শ মানছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে