স্বাদ-গুণে অনন্য দেশীয় কুল

স্বাদ ও পুষ্টিগুণের বিচারে কুল বাংলাদেশের একটি উৎকৃষ্ট ফল। কুল গাছ ছোট থেকে মাঝারি আকারের বৃক্ষ। উচ্চতা গড়ে ৫ থেকে ১৩ মিটার পযর্ন্ত হয়। গাছ চির সবুজ, শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত, দ্বিজীবপত্রী ও গভীর মূলী বৃক্ষ। পাতা ছোট, গোলাকার থেকে ডিম্বাকার হয়। বষার্র শেষে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে গাছে ফুল আসে ও জাতভেদে জানুয়ারি থেকে মাচর্ মাসে ফল পাকে। ফল পাকা ও টাটকা অবস্থায় খাওয়া হয় ও ফল হতে আচার, চাটনি এবং অন্যান্য মুখরোচক খাবার তৈরি করা যায়...

প্রকাশ | ০৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

মোহাম্মদ নূর আলম গন্ধী
স্বাদ ও পুষ্টিগুণের বিচারে কুল বাংলাদেশের একটি উৎকৃষ্ট ফল। কুল গাছ ছোট থেকে মাঝারি আকারের বৃক্ষ। উচ্চতা গড়ে ৫ থেকে ১৩ মিটার পযর্ন্ত হয়। গাছ চির সবুজ, শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত, দ্বিজীবপত্রী ও গভীর মূলী বৃক্ষ। পাতা ছোট, গোলাকার থেকে ডিম্বাকার হয়। বষার্র শেষে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে গাছে ফুল আসে ও জাতভেদে জানুয়ারি থেকে মাচর্ মাসে ফল পাকে। ফল পাকা ও টাটকা অবস্থায় খাওয়া হয় ও ফল হতে আচার, চাটনি এবং অন্যান্য মুখরোচক খাবার তৈরি করা যায়। কুলের জাত : আমাদের দেশে কুলের অসংখ্য জাত রয়েছে, এসব জাতের মধ্যে অনেক কুলকেই নিদির্ষ্ট নামে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। স্বাদ ও গুণের ওপর ভিত্তি করে আমাদের দেশে উৎপাদিত কুলকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়, যথাÑ উত্তম, মধ্যম ও নিম্নজাতের। সাম্প্রতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গবেষণার মাধ্যমে কিছু কিছু নতুন জাতের কুল আবিষ্কার করেছেন, যেমন- বাউকুল-১, বাউকুল-২, বাউকুল-৩, আপেলকুল, বারিকুল-১, বারিকুল-২, বারিকুল-৩। এ ছাড়াও উন্নত জাতের মধ্যে কুমিল্লা কুল, সাতক্ষীরা কুল, রাজশাহী কুল, থাইকুল আমাদের দেশে চাষ হচ্ছে। কুল উৎপাদন এলাকাসমূহ : বাংলাদেশের সব জেলাতে কম-বেশি কুল চাষ হয়। তবে রাজশাহী, কুমিল্লা, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, গাজীপুর জেলায় উৎকৃষ্ঠ জাতের কুলের আবাদ হয়ে থাকে। কুলের বংশ বিস্তার : দুইভাবে কুলের বংশ বিস্তার করা যায়। বীজ থেকে ও কলম চারা তৈরি করে। তবে কলম করে বংশ বিস্তারে বংশগত গুণাগুণ অক্ষুণœ থাকে। বীজ হতে চারা তৈরি করে তার ওপর “বাডির্ং” এর মাধ্যমে কলম চারা তৈরি করা যায়। বলয়, তালি অথবা টি-বাডির্ং ও ক্লেফট গ্রাফটিং পদ্ধতিতে কলম চারা তৈরি করা যায়। বাডির্ং করার জন্য বীজ চারার বয়স ৯ মাস থেকে ২ বৎসর বা তার বেশিও হতে পারে। মাচর্ মাস থেকে শুরু করে জুলাই-আগস্ট মাস পযর্ন্ত সময়ে বাডির্ং করা যায়, তবে এপ্রিল, মে ও জুন মাস উপযুক্ত সময়। এ ক্ষেত্রে ‘সায়ন’ সংগ্রহের জন্য নিবাির্চত জাত এবং স্টক উভয়েরই পুরনো শাখা-প্রশাখা মাচর্-এপ্রিল মাসে ছঁাটাই করে দিতে হবে। অতঃপর নতুন শাখা বাডির্ংয়ের কাজে ব্যবহৃত হবে। কুল উৎপাদনের মাটি : কুল গাছ যে কোনো ধরনের মাটিতে জন্মে এবং লবণাক্ত ও জলাবদ্ধতা উভয়েই সহ্য করতে পারে। তবে ভারী ও সামান্য ক্ষারযুক্ত বেলে দো-অঁাশ মাটি উত্তম। কুল চাষে মাটি ও জমি তৈরি : বাগান আকারে চাষের জন্য উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি ভালো। তা ছাড়া বসতবাড়ির আশপাশে, পতিত জমি, পুকুর পাড় ও অনুবর্র ধরনের মাটিতেও কুল চাষ করা যায়। বগার্কার রোপণ প্রণালীতে ৬ থেকে ৭ মিটার দূরে দূরে সব দিক ১ মিটার আকার গতর্ খনন করতে হবে। জাত ও স্থানভেদে দূরত্ব কম বেশি হতে পারে। চারা রোপণের কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ দিন পূবের্ গতর্ তৈরি ও গতের্ প্রয়োজনীয় সার মাটির সঙ্গে মিশ্রিত করে গতর্ ভরাট করে রাখতে হবে ও গতের্র ঠিক মাঝখানে চারা রোপণ করতে হবে। প্রতিটি গতের্র মাটির সঙ্গে পচা গোবর ২০ থেকে ২৫ কেজি, টিএসপি- ২৫০ গ্রাম, এমওপি- ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম, ইউরিয়া-২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম মিশিয়ে দিতে হবে। তবে মাটির উবর্রতায় সারের মাত্রা কম বেশি হতে পারে। কুল চারা রোপণের সময় : জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস কুল চারা রোপণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। কুলের অন্যান্য পরিচযার্ : চারা রোপণের পর সেচের ব্যবস্থা থাকতে হবে। নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। উপরি সার প্রয়োগ করতে হবে। রোগ ও পোকার আক্রমণ দেখা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতি বছর ফল সংগ্রহের পর পুরাতন ও রোগাক্রান্ত শাখা-প্রশাখা ছঁাটাই করে দিতে হবে। তা ছাড়া ফল সংগ্রহের পর শাখা-প্রশাখা ছঁাটাই করে দিলে নতুন উৎপাদিত শাখা-প্রশাখায় কাক্সিক্ষত ও মানসম্মত ফলন পাওয়া যাবে। সবোর্পরি চারা রোপণ থেকে শুরু করে পরবতীর্ সময়ে নিয়ম মাফিক সব পরিচযার্ গ্রহণ করলে কুল চাষে ভালো লাভবান হওয়া যাবে।