দৃষ্টিনন্দন ফলের বাগান

প্রকাশ | ১৩ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

সবুজ শমার্ শাকিল, সীতাকুÐ
সীতাকুÐে পাহাড় সংলগ্ন ৬ একর অনাবাদি জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির দৃষ্টিনন্দন ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন আবুল ফজল মোহাম্মদ মঞ্জু ভ‚ঁইয়া
সীতাকুÐে পাহাড় সংলগ্ন ৬ একর অনাবাদি জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির দৃষ্টিনন্দন ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন রহমতনগর এলাকার ব্যবসায়ী আবুল ফজল মোহাম্মদ মঞ্জু ভ‚ঁইয়া। তার বাগানজুড়ে থাকা বিভিন্ন জাতের ৬ শতাধিক ফলগাছ বৈচিত্র্যময় সবুজের সমাহার সৃষ্টি করেছে। ব্যতিক্রমী এ ফলের বাগান দেখতে প্রতিনিয়ত তার খামার বাড়িতে ছুটে আসছেন বৃক্ষপ্রেমী মানুষ। স্থানীয় লোকজনের কাছে তিনি সফল কৃষক হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও আগতরা তাকে উপাধি দিয়েছেন বৃক্ষপ্রেমী হিসেবে। ইতোমধ্যে তার ফল বাগানের বৈচিত্র্যময় সবুজের সমাহার নজর করেছে উপজেলা কৃষি বিভাগের। জানা গেছে, একান্ত শখের বসে ২০০৮ সালে সিরাজ ভ‚ঁইয়া খামারবাড়ির অনাবাদি তিন একর জায়গায় ফলের বাগান গড়ে তোলেন মঞ্জু। শুরুতে তিনি নিজ উদ্যোগে ৮০ শতক জমিতে আম্রপলি, হিমসাগর, ফজলি, লেংড়া, হঁাড়িভাঙ্গাসহ বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক আমের চারা রোপণ করেন। এছাড়া ৭০ শতক জমিতে রোপণ করেন উন্নত কলম পদ্ধতির আপেলকুল, বাউকুল ও থাইকুল। প্রায় দেড় একর জমিতে রোপণ করেন বারী ওয়ান ও আমেরিকান প্রজাতির মাল্টার চারা। শুরুতে বাগানের পরিচযার্র বিষয় বুঝতে কিছুটা অসুবিধা হলেও পরবতীের্ত তা অতিক্রম করে সফলতার দেখা পান মঞ্জু। পঁাচ বছরের মধ্যে তার গড়ে তোলা ফলের বাগানের প্রতিটি ফলগাছ ডালপালা ছড়িয়ে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে। প্রথম ধাপে সফলতার দেখা পাওয়ায় অনাবাদি আশপাশের জমিতে ফলের বাগান গড়ে তোলার একান্ত ইচ্ছা পোষণ করেন মঞ্জু। এতে তিনি নিজ উদ্যোগের পাশাপাশি কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় অনাবাদি তিন একর জমিতে পাতি, এলাচি, ও হাইব্রিড কাগজী লেবু, পেঁপে, পেস্তাবাদাম, কামিনী হাইব্রিড কালো আম, কাজী পেয়ারা, কামরাঙ্গা, ডালিম, জাম্বুরা, আমলকী, সফেদা, আলু বোখরা, ভিয়েতনামি খাটো জাতের নারিকেল, গোলাপজাম, কাট বাদাম, স্ট্রবেরি, কমলা ও চায়না-৩ লিচুসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ রোপণ করেন। কমর্জীবনের সব ব্যস্ততার ভিড়ে একটু সময় পেলে ফল বাগানের পরিচযার্য় মেতে উঠতেন উদ্যোমী মঞ্জু। তার নিবিড় পরিচযার্য় ২০১৬ সালের বাগানের প্রতিটি গাছে ফল ধরতে শুরু করে। ইতোমধ্যে মালটা, কমলা, জলপাই, কুল ও লেবুসহ বাগানের কয়েক প্রজাতির শীতকালিন ফলগাছে থোকায় থোকায় ফল ধরে আছে। বৃক্ষপ্রেমী আবুল ফজল মোহাম্মদ মঞ্জু ভ‚ঁইয়া বলেন, সম্ভ্রান্ত ভ‚ঁইয়া পরিবারে অনেকটা আরাম আয়েশে বেড়ে উঠলেও ১৯৭৯ সালে ভাগ্যর অন্বেষণে সৌদি আরব পাড়ি জমান। সেখানে দীঘর্ ৬ বছর প্রবাসজীবন শেষে ১৯৮৫ সালে দেশে ফিরে আসেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম শহরে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। ব্যবসায়িক জীবনেও সফলতার দেখা পান তিনি। কিন্তু কমর্জীবনের শত ব্যস্ততার মধ্যে প্রকৃতির প্রতি ছিল অপরিসীম মমতা। তাই তো প্রকৃতির টানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন তিনি। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া অনাবাদি জমিতে গড়ে তোলেন দেশি, বিদেশি ও দুলর্ভ প্রজাতির ফলের বাগান। তিনি বলেন, শুরুতে বাগানের পরিচযার্র বিষয়ে বুঝতে কিছুটা অসুবিধা হলেও পরে কৃষি কমর্কতার্র পরামশর্ ও ইয়াডর্ শ্রমিকদের সহযোগিতায় তা স্বাভাবিক হয়ে যায়। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বাগানের বিভিন্ন ফলের গাছে ফল ধরতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে মালটা, কমলা, কুল ও জলপাইসহ শীতকালিন বিভিন্ন ধরনের ফলগাছে ফলন শুরু করেছে। মুকুলে ভরে উঠছে ফজলি, আম্রপালিসহ বিভিন্ন প্রজাতির আমের গাছ। এক সময়ে শখের বশে গড়ে তোলা ফলের বাগানের বাণিজ্যিক প্রসার ঘটানোর স্বপ্নে বিভোর মঞ্জু আরও বলেন, ফলের বাগান গড়ে তোলার শুরুতে উন্নত প্রজাতির চারা সংগ্রহে চষে বেড়িয়েছি দেশের বিভিন্ন এলাকা। তবে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষের সহযোগিতায় তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছি উন্নত জাতের মাল্টা ও আমের চারা। এ ছাড়া তাদের পরামশের্ কলমপদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে নিজেই কাটিং করে রোপণ করি বিভিন্ন প্রজাতির কুলের চারা। তবে বাগানের মাঝামাঝি সময়ে সরকারি ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় বেশকিছু উন্নত প্রজাতির ফলের চারা সংগ্রহ করা হয়। সীতাকুÐ কৃষি কমর্কতার্ সাফকাত রিয়াদ ফাহিম ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা এ ফলের বাগান সবুজের সমাহার সৃষ্টির পাশাপাশি মিটাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ফলের চাহিদা। বৃক্ষের প্রতি তার এ ভালোবাসাই সফলতার অন্যতম নিদশর্ন। প্রায় ৬ একর জমিতে গড়ে তোলা তার এ ফলের বাগান সীতাকুÐের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে মোহিত করেছে। ইতোমধ্যে অনেকে ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজ বাড়ির আঙিনায় ফলের বাগান গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন। ব্যতিক্রমী উদ্যোক্তা মঞ্জুর গড়ে তোলা ফলের বাগান অচিরেই বাণিজ্যিক প্রসার লাভ করবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।