কালো মুরগির ভালো গুণ

প্রকাশ | ২০ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন
কথায় বলে ‘কালো জগতের আলো’ একদমই সত্যি। কালো রঙটিকে যতই ছোট করা হোক না কেন, অনেক ক্ষেত্রে কিন্তু শুধু কালো রং বলেই জিনিসের দাম বেড়ে যায় কয়েকগুণ। পৃথিবীর তাবত রাষ্ট্রনায়কদের লিমুজিনের রং কালো, মাইকেল জ্যাকসন কিংবা স্টিভ জোভসকে কালো পোশাক ছাড়া অন্য কোনো রঙে দেখেছেন কেউ? বø্যাক রোজ, বø্যাক পালর্, বø্যাক প্যান্থার থেকে শুরু করে নীহাররঞ্জনের ‘কালো ভ্রমর’Ñ ‘কালো’ শব্দটি জুড়লেই বস্তুটির প্রতি আকষর্ণ যেন কয়েকগুণ বেড়ে যায়। কালো জুতা, কালো স্যুট এমনকি কালো শাটের্ও সাধারণ চেহারার মানুষকে অনেক স্মাটর্ ও আকষর্ণীয় লাগে। কিন্তু জানেনকি! পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মুরগির বণর্ও কুচকুচে কালো? পালক থেকে শুরু করে ঠেঁাট, পা, নখ, ঝুঁটি, চোখ, সবই কালো। এমনকি, ওই মুরগির মাংসের রংও কালো। শুধু মাংসই নয়, মুরগির জিভ, হাড় ও নাড়িভুঁড়িও কালো রঙের। কেবল রক্ত স্বাভাবিক লাল রঙের। ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপের কেমানি এলাকাতেই প্রথম পাওয়া গেছিল এই বিশেষ জাতের কালো মুরগি। নাম ‘জেট বø্যাক’ আয়্যাম কেমানি চিকেন। আমেরিকার ফ্লোরিডায় অবস্থিত গ্রিন ফামের্র ব্রিডার পল ব্র্যাডশো ২০১৩ সাল থেকে এই কালো মুরগির ব্যবসা শুরু করেছেন এবং কয়েক বছরেই কোটিপতি হয়ে গেছেন। একেকটি মুরগির দাম হেঁকেছিলেন ২৫০০ ডলার, ২০১৩ সালেই। ভারতীয় টাকায় প্রায় লাখ দেড়েক। ব্র্যাডশো আদর করে এই কালো মুরগির নাম দিয়েছেন ‘ল্যাম্বরগিনি পোল্ট্রি’। জীববিজ্ঞানীদের মতে কালো টিস্যুর জিন প্রকট হওয়ায় এই জেনেটিক পরিস্থিতির নাম ‘ফাইব্রোমেলানোসিস’। চীনের সিল্কি জাতের কালো মুগির সঙ্গে ‘জেট বø্যাক’ আয়্যাম কেমানি চিকেনের কিছুটা মিল রয়েছে, কিন্তু চাইনিজ মুরগি চাইনিজ মোবাইলের মতোই দামে কম ও কদরহীন। তাই দুনিয়ার বিত্তশালীদের ডিশ আলো করছে ‘ল্যাম্বরগিনি পোল্ট্রি’ ওরফে ‘জেট বø্যাক’ আয়্যাম কেমানি চিকেন। ব্রিডারদের ও ভোজন রসিকদের কাছে অত্যন্ত আকষর্ণীয় ও লোভনীয় এই জাতের মোরগের গড়পড়তা ওজন হয় দ্ইু থেকে আড়াই কেজি এবং মুরগির ওজন হয় দেড় থেকে দুই কেজি। ‘জেট বø্যাক’ আয়্যাম কেমানি চিকেনের ডিমও কিন্তু কালো রঙের। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের মধ্যপ্রদেশে কড়কনাথ বা কালি মাসি (কালো মাংস) নামে এ প্রজাতির মুরগি পাওয়া যায়। এই মুরগিরও মাংস কালো। দেখতেও কালো। উচ্চমানের প্রোটিন ও অল্প পরিমাণের চবির্র জন্য চাহিদা খুব বেশি; কিন্তু সেই তুলনায় জোগান অনেক কম। তবে ইন্দোনেশিয়ার অ্যায়্যাম কেমানি চিকেনের তুলনায় দাম ও জনপ্রিয়তা ভারতে অনেক কম। যে মুরগির প্রতি কেজি মাংসের দাম হাজার টাকার বেশি। এক হালি ডিমের দাম ১০০ টাকা। ভারতীয় বিজ্ঞানীদের মতে, এই কালো মুরগিতে রয়েছে রোগমুক্তির মহৌষধ। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থেকে রক্তে শকর্রা নিয়ন্ত্রণ, পেশিশক্তি বাড়াতেÑ এমনকি ক্যান্সারের প্রতিরোধেও বিশেষ ভ‚মিকা পালন করে এ মুরগির মাংস ও ডিম। এমনটিই জানিয়েছেন গবেষকরা। পুষ্টিবিদরা জানান, কালো এই মুরগিতে রয়েছে বিপুল পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও প্রচুর পরিমাণে আয়রন। সাধারণ মুরগির চেয়ে এই কালো মুরগির মাংসে কোলেস্টেরলের মাত্রাও অনেক কম বলে জানান তারা। এ মুরগির মাংসে রয়েছে মাত্র ১.৯৪ শতাংশ ফ্যাট; কিন্তু প্রোটিনের মাত্রা অন্য সব মুরগির মাংস থেকে কয়েক গুণ বেশি। হঁাড়ির খবর হলোÑ স¤প্রতি ভারতীয় ক্রিকেটারদের পেশিশক্তি বাড়াতে তাদের খাদ্য তালিকায় কড়কনাথ প্রজাতির মুরগি যোগ করতে বিসিসিআইকে পরামশর্ দিয়েছেন দেশটির মধ্যপ্রদেশের প্রাণী বিজ্ঞানী ড. আরএস তোমর। এত শত গুণের কথা জেনে স¤প্রতি এই মুরগির উৎপাদন বৃদ্ধিতে জোর দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।