ঘরেই মরিচ চাষ করুন

প্রকাশ | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

আরহা হোসেন
মরিচ ছাড়া আমরা কোনো তরকারি রান্নার কল্পনাই করতে পারি না। শুধু আমাদের দেশে নয়, এটি বিশ্বের অনেকে দেশেই একটি জনপ্রিয় সবজি। অল্প পরিশ্রমে বাড়ির চিলেকোঠা বা ছাদে অথবা ঘরের বারান্দায় অথবা বাড়ির আঙিনায় সহজে মরিচ চাষ করতে পারেন। এটা চাষে খরচও অনেক কম। একটু রোদ আর সামান্য যত্নে দ্রম্নত বেড়ে ওঠে মরিচ গাছ। বাসার বারান্দায় বা ছাদে ছোট্ট টবে চাষ করতে পারেন মরিচ। ঘরের এক কোনায় টবে মরিচের চাষ আপনার গৃহের শোভা বর্ধনের পাশাপাশি পূরণ করতে পারে আপনার সারা বছরের মরিচের চাহিদা। কেননা, মরিচ আমাদের প্রতিদিনের রান্নায় খুব অল্প পরিমাণেই লাগে আর মাত্র ৫ থেকে ৬টি টবে মরিচের চারা লাগালে তা দিয়ে দিব্যি সারা বছরেই চলে যাওয়ার কথা। রোদযুক্ত স্থানে রেখে নিয়মিত অল্প পরিচর্যা করলেই টবে মরিচ চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। আপনার বাসার বারান্দায় বা ছাদে এমন একটি স্থান বেছে নিন যেখানে আলো বাতাস আছে। মরিচ ছায়ায়ও ভালো হয়, তবে মাঝে মধ্যে রোদে দিতে হবে বা জানালার কাছে রাখতে হবে। ছাদে অথবা বারান্দায় মরিচ চাষের ক্ষেত্রে মাটি অথবা পস্নাস্টিকের টব ব্যবহার করা উত্তম। এছাড়া পলিব্যাগ, টিনের কৌটা বা পস্নাস্টিকের পাত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। মরিচ গাছের জন্য মাঝারি আকৃতির টব হলেই চলে। মাঝারি আকৃতির টবে চারটি মরিচ গাছের চাষ করা সম্ভব। মরিচ সাধারণত সারা বছরেই জন্মে তাই বছরের যে কোনো সময়েই আপনি মরিচের চারা লাগাতে পারবেন। মরিচ গাছ খুব বেশি বড় হয় না তাই মাঝারি আকারের টবেই রোপণ করতে পারেন। মরিচের জন্য দো-আঁশ মাটি উৎকৃষ্ট। টবের আকারের অর্ধেক পরিমাণ দো-আঁশ মাটি আর তার সমপরিমাণ শুকনো গোবর, ১০ গ্রাম পটাশ, ১০ গ্রাম টিএসপি ও এক চামচ পরিমাণ ইউরিয়া ভালোভাবে মিশিয়ে টব পূর্ণ করুন। কম্পোস্ট সার ব্যবহার করতে পারেন। অথবা নার্সারি থেকে মরিচের চারা কিনে বা বীজ সংগ্রহ করে টবে লাগাতে পারেন। মরিচ চাষের জন্য দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযুক্ত। এছাড়া সামান্য ক্ষারীয় মাটি ব্যবহার করা যেতে পারে। দো-আঁশ মাটির সঙ্গে জৈবসার ভালো করে মিশিয়ে টবভর্তি করুন। টবের এই মাটিতে যথেষ্ট পানি দিন, যাতে মাটি ভেজা ভেজা থাকে। এবং লক্ষ্য রাখুন মাটি যেন একেবারে শুকিয়ে না যায়। এবং আর্দ্র স্থানে রাখুন। টবে লাগানোর পূর্বে এর মাটি নিড়ানি দিয়ে নরম করে নেবেন। মরিচের চারা তৈরি করা খুব সহজ। আপনি শুকনো মরিচের বীজ থেকেও চারা তৈরি করে নিতে পারেন। কয়েকটি শুকনো মরিচের বীজ সংগ্রহ করে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর বীজগুলো পানি থেকে তুলে অল্প শুকিয়ে নিয়ে টবের মাটিতে ছড়িয়ে দিন। কিছুদিন পরেই দেখবেন যে চারা গজিয়ে যাবে। মরিচ গাছের জন্য খুবই উপকারী সার আপনি নিজেই তৈরি করে নিতে পারেন আপনার ঘরেই। প্রতিদিনের রান্না করার জন্য তরিতরকারি কাটার পর উচ্ছিষ্ট খোসা, ছাল, শাকসবজির আবর্জনা ইত্যাদি পচিয়ে জৈব সার বানিয়ে মরিচ গাছের টবে দিলে টবের মাটি উর্বরতা বৃদ্ধি হবে এবং ফলন অনেক ভালো হবে। মরিচ গাছে নিয়ম করে পানি দেয়া খুব জরুরি। টবের মাটি কখনই খুব শুকিয়ে যেতে দেয়া যাবে না। ভালো ফলন পেতে পর্যাপ্ত রোদ আছে এমন জায়গায় মরিচ গাছের টবটাকে স্থাপন করতে হবে। মরিচের টবে পিঁপড়ার আক্রমণ ঠেকাতে টবের চারদিকে হালকা সাবানের গুঁড়া ছিটিয়ে রাখতে পারেন। মরিচের চারা বাড়ন্ত অবস্থায় টবে একটি কাঠি পুতে গাছের জন্য সাপোর্টের ব্যবস্থা করুন। ভালো করে যত্ন নিলে একটি টবের মরিচ গাছ থেকে দুই দফায় অনেক মরিচ সংগ্রহ করতে পারবেন। সাধারণ জাতের মরিচের একটি গাছে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৭৫টি মরিচ জন্মানো সম্ভব আর তা থেকে দুই দফায় প্রায় ১০০ থেকে ১৫০টি মরিচ তুলতে পারবেন। মরিচ গাছে ফুল এলে দু-তিনদিন পরই ফুল ঝরে যাবে, ধীরে ধীরে মরিচ বড় হবে। কিছুদিন পর থেকে মরিচ সংগ্রহ করতে পারেন। মরিচ বড় হলে টান দিয়ে না ছিঁড়ে কাঁচি দিয়ে সাবধানে কেটে নিন। তাহলে গাছের কোনো ক্ষতি হবে না। গাছ অধিক পরিমাণ ফলন দেবে। ঝাল মরিচের একটি গাছে এক দফায় কমপক্ষে ৫০ থেকে ৭৫টি করে, দুই দফায় ১০০ থেকে ১৫০টি মরিচ পাওয়া সম্ভব। পাকা মরিচ ১৫ দিন পরপর সংগ্রহ করা যায়। মরিচ গাছ নির্বাচন করে পরিপূর্ণ পাকা মরিচ সংগ্রহ করতে হবে। তারপর তা ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে বীজ বের করে নিতে হবে। বীজ শুকিয়ে আর্দ্রতা ৬-৮ শতাংশ করে নিয়ে বায়ুরোধী পাত্র বা পলিথিন প্যাকেটে সংরক্ষণ করতে হবে।