বসতবাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ

প্রকাশ | ০৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

প্রফেসর আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ
সুস্থ্য ও সবলভাবে বেঁচে থাকতে পুষ্টিকর খাবার খেতেই হবে। একজন পূর্ণবয়স্ক লোকের দৈনিক ৩০০ গ্রাম সবজি খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আমরা গড়ে মাত্র ১৮০ গ্রাম শাকসবজি খেয়ে থাকি। এর কারণে এ দেশের কোটি কোটি মানুষ দৈহিক ও মানসিক অসুখে ভুগছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই হচ্ছে শিশু এবং নারী। শাকসবজি আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো ছাড়াও সব ধরনের পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে। বাংলাদেশের মোট আবাদি জমির প্রায় পাঁচভাগের সমপরিমাণ জমি নিয়ে প্রায় দেড় কোটি বসতভিটা রয়েছে। প্রায় সব বসতবাড়ির আঙিনায় কম বেশি খোলা জায়গা থাকে। এসব বসতভিটায় বন্যার পানি প্রবেশ করে না, বর্ষায় পানি জমে না। তাই অনায়াসে এসব বসতবাড়িতে সারা বছর শাকসবজি চাষ করা যায়। এতে করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি বাড়তি আয়েরও ব্যবস্থা করা যায় এবং পারিবারিক শ্রমের সুষ্ঠু ব্যবহারের পাশাপাশি নারীর শ্রমের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের নিজস্ব কর্মসংস্থান এবং ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি করা যায়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শাকসবজি আবাদের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ ক'টি সবজি মডেল উদ্ভাবন হয়েছে- যার মধ্যে কালিকাপুর সবজি উৎপাদন মডেল অন্যতম। এ মডেলর সবজি বিন্যাস অনুসরণ করে চাষাবাদের মাধ্যমে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিবারের সারাবছরের সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। এজন্য বসতবাড়ির রোদযুক্ত উঁচু স্থানে ৬ মিটার লম্বা ও ৬ মিটার চওড়া জমি নির্বাচন করে পাঁচটি বেড তৈরি করতে হবে। যেখানে প্রতিটি বেডের প্রস্থ হবে ৮০ সেন্টিমিটার এবং দুই বেডের মাঝখানে নালা থাকবে ২৫ সেন্টিমিটার। এ সবজি বিন্যাসে প্রথম খন্ডে থাকবে: মুলা-টমেটো-লালশাক-পুঁইশাক; দ্বিতীয় খন্ডের বিন্যাস হবে: লালশাক ও বেগুন-লালশাক-ঢেঁড়শ; তৃতীয় খন্ডের বিন্যাস হবে: পালংশাক-রসুন-লালশাক-ডাঁটা-লালশাক; চতুর্থ খন্ডের বিন্যাস হবে: বাটিশাক-পেঁয়াজ-গাজর-কলমিশাক-লালশাক এবং পঞ্চম খন্ডের বিন্যাস হবে: বাঁধাকপি-লালশাক-করলা-লালশাক। এছাড়াও বাড়ির সীমানায় কাঁচকলা, সজিনা, পেঁপে ইত্যাদি চাষ করা যায়। খোলা জায়গায় সব ধরনের সবজি চাষ করা যায়। তার মধ্যে রয়েছে বাঁধাকপি, লালশাক, গিমাকলমি, পুঁইশাক, পালংশাক, বাটিশাক ও ডাঁটাশাক। স্থায়ী মাচায় এক বর্ষজীবী সবজি যেমন- মিষ্টি কুমড়া, শিম, চালকুমড়া, পুঁইশাক, ধুন্দুল, ঝিঙা, শসা, লাউ, চিচিঙ্গা, করলা ও লতা জাতীয় শাকসবজি চাষ করা যায়। মাচার নিচে বা আংশিক ছায়াযুক্ত জায়গায় আদা, হলুদ, কচু, মানকচু, ওলকচ, আর সঁ্যাতসেতে জায়গায় পানিকচু চাষ করা যায়। বসতবাড়ির গাছে লতাজাতীয় সবজি হিসেবে লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, ঝিঙা, ধুন্দুল, শিম, গোলমরিচ, পান, গাছআলু, চিচিঙ্গা চাষ করা যায়। ঘরের চালে ও ছাদে লাউ, মিষ্টিকুমড়া, শিম, চালকুমড়া, পুঁইশাক জাতীয় লতা সবজি চাষ করা যায়। আর পাকা ঘরের ছাদে টবে সব ধরনের সবজিই চাষ করা যায়। বসতবাড়ির আঙিনায় চাষযোগ্য জমি যেহেতু কম তাই জৈব সার ব্যবহার করে শাকসবজি চাষ করা উত্তম। এক্ষেত্রে সবজির ধরন অনুযায়ী শতাংশ প্রতি ৬০-১০০ কেজি জৈবসার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজন হলে অল্প পরিমাণ ইউরিয়া, টিএসপি এবং এমওপি সার দেয়া যেতে পারে। আগাছা শাকসবজির অন্যতম শক্র। তাই আগাছা দেখামাত্র তুলে ফেলতে হবে। প্রয়োজন মতো সেচ এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে হবে। শাকসবজির প্রধান প্রধান ক্ষতিকর পোকার মধ্যে- কুমড়া জাতীয় সবজির ফলের মাছি পোকা, বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা, টমেটো-বেগুন-ঢঁ্যাড়সের সাদা মাছি, শিম-বেগুন-লাউ-বাঁধাকপি-টমেটো-শসা-কুমড়ার জাব পোকা উলেস্নখযোগ্য। এসব পোকা আইপিএম বা সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দমন করতে হবে। এক্ষেত্রে পোকা ধরে মেরে ফেলা, ফেরোমোন ফাঁদ, বিষটোপ এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। পোকা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলেই কেবল অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক সময়ে, নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যবহার করা উচিত। লেখক: অধ্যাপক, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।