লাউ চাষে ৩ হাজার কৃষকের ভাগ্য বদল

প্রকাশ | ২৭ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

সবুজ শমার্ শাকিল, সীতাকুÐ
মৌসুমি লাউ চাষে সফল হয়েছেন সীতাকুÐের বিভিন্ন অঞ্চলের ৩ হাজার কৃষক। লাউয়ের কাক্সিক্ষত ফলন ও বাজারে নায্য দাম থাকায় খরচের দ্বিগুণ লাভের স্বপ্নে বিভোর রয়েছেন কৃষকরা। এতে ভাগ্য বদলের চেষ্টায় সফলতার ছেঁায়ায় হাসি ফুটেছে অধিকাংশ লাউ চাষির মুখে। অন্যদিকে সংসারে সচ্ছলতা ফিরে আসায় খুশি প্রতিটি কৃষক পরিবার। লাউ চাষে দ্বিগুণ লাভের স্বপ্নে বিভোর সীতাকুÐের বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল গ্রামের কৃষক মো. নবী জানান, মৌসুম ভেদে সারাটা বছর বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করেই দিন কাটে তার। শীত মৌসুমে তিনি চাষ করেন লাউ, শিম, টমেটো ইত্যাদি। এবারও এসব সবজি চাষ করেছেন। তবে গতবার প্রাকৃতিক কারণে শিমে খুব একটা লাভ করতে পারেনি। তবে সেই ঘাটতি পূরণ হয়ে গেছে এবারের লাউচাষ করে। তিনি এবার দ্বিগুণ লাভ পেয়েছেন। নবী আরো জানান, তিনি এক একর জমিতে লাউচাষ করেছেন এবার। আশ্বিন মাসের দিকে এ জমি চাষ করতে বীজ, সার, বঁাশের কঞ্চি, শ্রমিক মজুরি ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ব্যয় হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। ইতোমধ্যে লাউ বিক্রি করেছেন প্রায় দেড় লাখ টাকার। যা ফসল আছে তাতে সামনে আরো অন্তত লাখ টাকার লাউ বিক্রির ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। একইভাবে লাউ বিক্রি করে দ্বিগুণ লাভের কথা জানালেন সীতাকুÐ পৌর সদরের মধ্যম মহাদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. আলী হোসেন। বাপ-দাদার সঙ্গে এক সময় পাহাড়েই চাষাবাদ করত আলী। এখন বয়সের ভারে আর পাহাড়ে যাওয়া হয় না। এখানে সমভূমিতে থাকা পৈতৃক জমিতে চাষ করেন নানান ফসল। শীত মৌসুমে অনেক রকম সবজি চাষ করেন তিনি। এর মধ্যে লাউ অন্যতম। কৃষক মো. আলী বলেন, বাজারে লাউয়ের চাহিদা দারুণ। মৌসুমের শুরুতে একটি লাউ ৫০ থেকে ৮০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছিল। এখন প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়। নভেম্বর থেকে এখন পযর্ন্ত মোট দেড় লক্ষাধিক টাকার লাউ বিক্রি করেছেন তিনি। বিক্ষিপ্তভাবে তিনি দুই একর জমিতে লাউ চাষ করেছিলেন। এ জমি থেকে কমপক্ষে দুই লাখ টাকার লাউ বিক্রি হবে। তার সাবির্ক খরচ হয়েছিল এক লাখ বিশ হাজার টাকার মতো। যা ইতোমধ্যেই পুঁজি উঠে আরো লাভ হয়েছে। মাচের্র প্রথম দিক পযর্ন্ত লাউ বিক্রি হবে। এ হিসাবে তিন লাখ টাকার বেশি বিক্রি হবে বলে মনে করেন তিনি। ওই দুই কৃষক জানান, সীতাকুÐে বিপুল পরিমাণ সবজির আবাদ হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা প্রতি হাটের দিনে এখানে এসে সবজি কিনে নিয়ে যান। তাদের হাত ধরেই লাউ চলে যায় ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঞ্চলে। এভাবে মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণে অবদান রাখছেন এই চাষিরা। সীতাকুÐে বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল বøকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কমর্কতার্ পিপাস কান্তি চৌধুরী জানান, শুধু তার ইউনিয়ন এলাকায় এ বছর ১৫ হেক্টর জমিতে ১০০ এর বেশি কৃষক লাউচাষ করেছেন। প্রত্যেকের জমিতেই ভালো লাউ হয়েছে। কৃষকরা বাজারে পেয়েছেন ন্যায্য মূল্যও। ফলে প্রায় সবাই দুই থেকে তিনগুণ লাভ করছেন। কৃষক জানান, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার সবর্ত্রই কমবেশি লাউচাষ হয়ে থাকে। এখানে পাহাড়, সমতল ভূমি কিংবা সাগর উপক‚লের সবর্ত্রই প্রচুর লাউয়ের চাষ হয়। কৃষকরা নিজেরা যেমন এ সবজি খান তেমনি বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ অথর্ আয় করেন। তারা জানান, এখন চাষিরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সতকর্তার সঙ্গে চাষাবাদ করছেন। শুধুমাত্র ফসল উৎপাদন করেই তারা ক্ষান্ত নন। সাধারণ মানুষ যেন বিষমুক্ত সবজি পেতে পারেন সেই লক্ষ্যে তারা ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার না করে করেন ফেরোমন ফঁাদ। ক্ষেতের ক্ষতিকর পোকারা এই ফঁাদে আটকা পড়ে মারা যায়। স্থানীয় এনজিও ইপসা একটি প্রকল্পের মাধ্যমে অসংখ্য কৃষককে ফেরোমন ফঁাদ স্থাপন করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে এনজিও সংস্থা ইপসার কৃষিবিষয়ক কমর্কতার্ সুমন দেবনাথ জানান, চলতি মৌসুমে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে তারা পল্লী কমর্-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর অথার্য়নে উপজেলায় প্রায় ২ হাজার ফেরোমান ফঁাদ বিনা মূল্যে বিতরণ করেছেন। আরো প্রায় ৩ হাজার ফঁাদ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করার প্রক্রিয়া চলছে। উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ কমর্কতার্ খান মোহাম্মদ সালেহীন বলেন, ‘এখানে লাউয়ের উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষকরা ক্রমশ লাউ চাষের আগ্রহী। তারা সবাই প্রায় দ্বিগুণ লাভ করছেন।’ উপজেলা কৃষি কমর্কতার্ সাফকাত ফাহিম রিয়াদ বলেন, ‘জৈব পদ্ধতিতে বিষমুক্ত লাউ উৎপাদন হচ্ছে এখন। এবার শীতকালীন মৌসুমে উপজেলায় ২০০ হেক্টর জমিতে ৩ হাজারের বেশি কৃষক লাউচাষ চাষ করেছেন। বাজারে লাউয়ের চাহিদা থাকায় ও নায্য দামে বিক্রি হওয়ায় লাভবান হয়েছেন কৃষকরা।