ফসল আবাদে পানি সাশ্রয়ের গুরুত্ব

প্রকাশ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

ড. মো. আতিকুর রহমান
পুরনো সেচ ব্যবস্থাপনায় প্রকৃত চাহিদার তুলনায় দুই থেকে তিনগুণের বেশি পানি জমিতে প্রয়োগ করা হয়। যা পানি সম্পদের একটি ঢালাও অপচয়। সেচের পানি ক্রমেই দুষ্প্রাাপ্য হয়ে উঠলেও এ দেশের প্রধান শস্য ধান উৎপাদন একটি সেচনিভর্র চাষপদ্ধতি। এতে ক্রমেই নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। আবার, অনিয়ন্ত্রিত ও অসম উত্তোলনের ফলে ভ‚-উপরস্থ পানি স্বল্পতায় দেখা দিচ্ছে পরিবেশ বিপযর্য়। তথাপি ভ‚-উপরিস্থ পানিরও গুণগত অবনতি হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন উৎপাদন ব্যবস্থায় বাড়তি খরচ হচ্ছে, তেমনি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবতের্নর ফলে কৃষি ক্ষেত্রেও ক্ষরা, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, ভ‚গভর্স্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া বিভিন্ন প্রভাব দেখা দিচ্ছে। ফসলভেদে পানির চাহিদা সঠিকভাবে নিরূপণ, সেচকাযের্ পানির পরিবহন ও বিতরণের সঠিক পদ্ধতি নিধার্রণ করে সেচের সামাজিক, অথৈর্নতিক ও পরিবেশগত অবস্থার উন্নয়নের জন্য সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনাবিষয়ক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা খুবই জরুরি। আর কৃষিপ্রধান দেশে এসব সমস্যা থেকে উত্তরণ করা যায় মূলত তা নিয়েই শিক্ষা ও গবেষণাকাযর্ চালিয়ে যাচ্ছে তার বিভাগটি। বছরব্যাপী ফসল উৎপাদনের জন্য সেচ অপরিহাযর্। ভ‚গভর্স্থ পানির তুলনায় উপরিভাগের পানি সেচের জন্য অধিক উপযোগী হলেও শুষ্ক মৌসুমে ভ‚-উপরিস্থ পানির প্রাপ্যতা না থাকায় দেশের ৭৯ ভাগ সেচ ভ‚গভর্স্থ পানির উপর নিভর্রশীল। তাই সেচকাযর্ পরিচালনায় প্রতিবছর গভীর ও অগভীর নলক‚পের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে ভ‚গভর্স্থ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। বলা হয়ে থাকে প্রচলিত সেচ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার লিটার সেচ পানি প্রয়োজন। অতিমাত্রায় ভ‚গভর্স্থ পানি উত্তোলনের কারণে ভ‚গভর্স্থ পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে তেমনি বেড়ে যাচ্ছে ভ‚গভর্স্থ পানিতে আসেির্নকের সংমিশ্রণ। কমে যাচ্ছে মাটির জৈব উপাদান ও পুষ্টিমান ফলে মাটি হারাচ্ছে তার গুণগতমান। এ সব সমস্যাগুলো মোকাবেলায় প্রয়োজন একটি সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা। তা ছাড়া যেসব ফসল উৎপাদনে পানি কম লাগে সে সব ফসল উৎপাদনের দিকে মনোযোগী হতে হবে। বরেন্দ্র অঞ্চল, চরাঞ্চল ও যেসব এলাকায় বেলে মাটির উপস্থিতি রয়েছে সেখানে ধান চাষ নিরুৎসাহিত করে গম, ডালজাতীয় ফসল ও সবজি চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। এ ছাড়াও সেচের পানি সাশ্রয়ের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে এলাকাভিত্তিক ফসল উৎপাদনের জন্য বিশেষ নিদের্শনা প্রদানে নীতি-নিধার্রক মহলের আরও বিশেষ ভ‚মিকা রাখা প্রয়োজন। এডবিøউডি প্রযুক্তি (পযার্য়ক্রমে পানি সরবরাহ ও জমি শুকিয়ে সেচ পদ্ধতি) নিয়ে আরডিএ-ব্রি, এডিবির অথার্য়নে ইরির সঙ্গে যৌথভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে গবেষণা পরিচালনার ফলাফলে দেখা গেছে ধান চাষে ১০ থেকে ৩০ ভাগ পানি সাশ্রয় হয়। এ ছাড়া আরডিএ-কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) বিষয়ক যৌথ গবেষণা দেখা যায় এসআরই প্রযুক্তির (কম সেচ ও কম শ্রমিক দিয়ে সেচপদ্ধতি) মাধ্যমে সেচ পানি, বীজ সাশ্রয়সহ বোরো ও আমন মৌসুমে ধানের ফলন ২০ ভাগের অধিক বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া আমরা শিক্ষাথীের্দর কৃষিতে কিভাবে পানির অপচয় রোধ করা যায়, কম সেচে ফসল ব্যবস্থাপনা কাযর্ করা সম্ভব সে বিষয়গুলো শিখিয়ে থাকি। এ ছাড়াও প্রতিনিয়ত বিভাগটিতে নতুন নতুন পানি সাশ্রয়ী সেচ প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবস্থাপনার উপর গবেষণা কাযর্ক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের দীঘির্দনের দাবি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিসিএসে (টেকনিক্যাল) ক্যাডারে হিসেবে কাজের সুযোগ। আমি মনে করি গ্র্যাজুয়েটরা সেখানে কাজের সুযোগ পেলে একদিকে যেমন আমাদের পানির অপচয় রোধ করে বেশি ফসল উৎপাদন হবে। অন্যদিকে এড়ানো যাবে পরিবেশের উপর ঝুঁকি। সরকার ও কৃষি মন্ত্রণালয় সুযোগটি তৈরি করতে আর কালক্ষেপণ না করে দ্রæতই আমাদের দাবিটি বাস্তবায়ন করবে বলে আশা রাখছি।