পোকা দিয়ে পোকা দমন

প্রকাশ | ১৭ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

কৃষিবিদ মাহফুজ আহমেদ
ধানক্ষেতে বহু ধরনের উপকারী পোকা, মাকড়সা ও জীবাণু বাস করে। এ সব পোকামাকড় ও জীবাণু অনেক ক্ষেত্রে ধানের অনিষ্টকারী পোকা দমন করে রাখতে পারে। ধানের বিভিন্ন অনিষ্টকারী পোকার প্রজনন ক্ষমতা অনেক বেশি। একটি স্ত্রী বাদামি গাছফড়িং থেকে এক প্রজন্মেই প্রচুর সংখ্যায় বাচ্চা জন্ম নেয়, কিন্তু ওই প্রজন্মের পর তাদের মধ্যে মাত্র ১-২টা বেঁচে থাকে। কারণ এদের অধিকাংশ পরভোজী পোকামাকড় খেয়ে ফেলে অথবা পরজীবী পোকা ও জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এভাবে পোকা ও জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে ৯৮-৯৯ শতাংশ অনিষ্টকারী পোকা ধ্বংস হয়। এ রকম না হলে অনিষ্টকারী পোকার বিস্ফোরণ ঘটতো। জমিতে পরভোজী পোকামাকড়কে সহজেই দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু অনেকে এদের অনিষ্টকারী পোকা বলে ভুল করেন। এ ধরনের পরভোজী-পোকামাকড়ের মধ্যে কয়েক ধরনের মাকড়সা, লেডি বিটল এবং ক্যারাবিড বিটল ধানগাছে তাদের শিকার খুঁজে বেড়ায়, ধানগাছের পাতাফড়িং, গাছফড়িং বিভিন্ন ধরনের মথ, মাজরা পোকার কীড়া এবং বিভিন্ন ধরনের পাতাভূক কীড়া এসব শিকারের অন্তর্ভুক্ত। পরভোজী মাকড়সা চলন্ত ও জীবন্ত পোকা খেতে ভালোবাসে। তবে এরা পোকার ডিমও খায়। অনেক সময় পরভোজী পোকা অনিষ্টকারী পোকার শতকরা ৮০-৯০ ভাগ ডিম খেয়ে এদের বংশবৃদ্ধিকে রোধ করে দেয়। একটি পূর্ণ বয়স্ক উল্‌ফ (নেকড়ে) মাকড়সা প্রতিদিন ৫-১৫টি বাদামি গাছছড়িং খেয়ে ফেলতে পারে। পরবোজী পোকামাকড় তাদের নিজেদের দেহের বাড়-বাড়তির জন্য এভাবে অনেক পোকা শিকার করে খায়। কৃত্রিম উপায়ে পরভোজী পোকামাকড়ের বংশ বৃদ্ধি করিয়ে জমিতে ছেড়ে দিতে পারলে পোকা দমন অনেক সহজ হতো। কিন্তু তা করা সম্ভব নয়। কারণ কৃত্রিম উপায়ে এদের বংশ বৃদ্ধি করা অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। এ জন্য যে সব পরভোগী পোকামাকড় জমিতে সব সময় প্রচুর সংখ্যায় পাওয়া যায় তাদের রক্ষা করাই সবচেয়ে সহজ ও বাস্তবসম্মত। তাই যখন-তখন ক্ষেতে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার না করে নিতান্ত প্রয়োজনেই এর ব্যবহার করা উচিত। পরভোজী পোকামাকড়দের জীবনধারণের জন্য প্রতিদিন অনেক পোকা শিকার করা প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে পরজীবী পোকা তার জীবনধারণের জন্য সাধারণত একটা পোকা শিকার করে তা থেকে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। পরজীবী স্ত্রী পোকারা তার পোষক পোকার ভেতরে বা তার উপরে একটা বা অনেক করে গাদায় ডিম পাড়ে। ওই ডিম থেকে পরজীবী পোকার বাচ্চারা ফোটে যখন পোষক পোশাকে খেতে থাকে তখন পোষক পোকা খাওয়া বন্ধ করে দেয় এবং পরে নিস্তেজ হয়ে মারা যায়। এক দেশ থেকে অন্য দেশে পরজীবী পোকা আমদানি করে এবং সেগুলো ফসলের ক্ষেতে অনুপ্রবেশ করিয়ে ফসলের অনিষ্টকারী পোকা দমনের জন্য ধানের অনিষ্টকারী পোকা দমনের জন্য এ ধরনের প্রচেষ্টা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিফল হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কৃত্রিম উপায়ে পরজীবী পোকায় বংশ বৃদ্ধি করিয়ে তাদের ধানের জমিতে ছেড়ে দেয়া সম্ভব। এ জন্য জমিতে যে সব পরজীবী পোকা থাকে তাদের সংরক্ষণ করাই সবচেয়ে ভালো উপায় এবং এটা করতে গেলে খুব বিচার-বিবেচনা করে কীটনাশক ব্যবহার করা উচিত। প্রকৃতিতে অনিষ্টকারী পোকা ও তাদের শত্রম্নদের মধ্যে একটা ভারসাম্য আছে। এর ফলে অনিষ্টকারী পোকা সংখ্যায় বেশি বাড়তে পারে না। কিন্তু বিচার বিবেচনাহীনভাবে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করলে এ প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই এ সব কীটনাশক খুব সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োগ করা উচিত। যাতে অনিষ্টকারী পোকার প্রাকৃতিক শত্রম্নগুলো ধ্বংস না হয়। কারণ অনিষ্টকারী পোকার এ সব প্রাকৃতিক শত্রম্নরাই হচ্ছে আমাদের প্রকৃত বন্ধু।