গদখালীতে বিএডিসির ড্রিপ ইরিগেশন কর্মসূচি

প্রকাশ | ৩১ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

এম আর মাসুদ, ঝিকরগাছা
সাদা নেট ও পলিথিন দিয়ে চার পাশ ঘেরা। উপরে রয়েছে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা। মাটির উপরে থাকা পাইপ হতে গাছের গোড়ায় ফোঁটা ফোঁটা করে দেয়া হচ্ছে পানি। আর্সেনিকমুক্ত এই পানিতে মেশানো আছে রাসায়নিক সার। এই পদ্ধতিতে ফুল ও সবজি চাষের সুবিধা পাচ্ছেন ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী অঞ্চলের চাষিরা। রীতিমতো তারা লাভবানও হচ্ছেন চাষাবাদের। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সেচ বিভাগের বাস্তবায়নে ফুল ও সবজি উৎপাদন সম্প্রসারণে এই ড্রিপ ইরিগেশন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৬ লাখ টাকা। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সৌরচালিত ডাগ ওয়েল, ড্রিপ ইরিগেশন ও ফ্লাওয়ার শেড নির্মাণ। ফলে, কর্মসূচি অঞ্চলে কৃষিতে খরচ ও ঝুঁকি কমায় লাভবান হচ্ছেন কৃষক। ২০১৭ সালের জুন মাসে শুরু হওয়া এই কর্মসূচির আওতায় ফুলের রাজধানী খ্যাত উপজেলার গদখালী, পানিসারা, নাভারণ, শিমুলিয়া ও নির্বাসখোলা ইউনিয়নে ১৫টি সৌরচালিত ডাগ ওয়েল ও ড্রিপ ইরিগেশন এবং ৭টি পলি শেড (ফ্লাওয়ার শেড) নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে কর্মসূচির ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মসূচির এক্সক্লুসিভ ইঞ্জিনিয়ার মো. মাহাবুব আলম। ৫টি সৌরচালিত ডাগ ওয়েল, ৪টি ড্রিপ ইরিগেশন এবং একটি পলি শেড (ফ্লাওয়ার শেড) নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২২ সালের জুন মাসে কর্মসূচির মেয়াদ শেষের আগেই সব কাজ সম্পন্ন হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। সরজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার পানিসারা মাঠে সৌরচালিত যন্ত্রে গভীর পাতকুয়া থেকে পানি উঠিয়ে ট্যাঙ্কিতে জমা করে তাতে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার মিশিয়ে পাইপ দিয়ে গাছের গোড়ায় ফোঁটা ফোঁটা করে দেয়া হচ্ছে। পলি শেডের বাইরেও এই সুবিধা পাচ্ছেন চাষি। কথা হয় পানিসারা গ্রামের ফুলচাষি ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, এই কর্মসূচির আওতায় তাকে ১০০৮ বর্গফুটের একটি পলি শেড (ফ্লাওয়ার শেড), সৌরচালিত ডাগ ওয়েল ও ড্রিপ ইরিগেশনের সুবিধা দেয়া হয়েছে। পলি শেডে (ফ্লাওয়ার শেড) জারবেরা ও গোলাপ ফুল, তরমুজ এবং এসকস চাষ করেছেন। শেডে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকায় ঝুঁকি কম। সৌরচালিত ডাগ ওয়েল ও ড্রিপ ইরিগেশনে রয়েছে ১৪০ ফুট গভীর পাতকুয়া, সৌরচালিত পাম্প, ফসেট ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণাগারের দরুন সেচ খরচ নেই, কীটনাশকের খরচ ৭০ ভাগ কম বলে দাবি করেন দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে ফুলচাষ করা কৃষক ইসমাইল। কর্মসূচির আওতায় তিনি ২৬ বিঘা জমিতে পালাক্রমে সারা বছর ফুল ও সবজি চাষ করছেন। আরো কথা হয় একই গ্রামের ফুলচাষি আব্দুল হক ঢালী ও আব্দুল হামিদ গাজীর সঙ্গে। তারা জানান, এই কর্মসূচিতে এলাকার কৃষক লাভবান হচ্ছে। বিশেষ করে সেচ সুবিধাটা বেশি। তা ছাড়া সেচের পানি আর্সেনিক মুক্ত হওয়ায় ফসলের উপকার বেশি হয়। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, এই অঞ্চলে প্রায় ৫ হাজার ফুলচাষি রয়েছে। তাই পলি শেডের (ফ্লাওয়ার শেড) সংখ্যা আরো বেশি হলে ভালো হতো। তবে এই কর্মসূচির সেচ ব্যবস্থায় কৃষক উপকৃত হচ্ছে। কর্মসূচির এক্সক্লুসিভ ইঞ্জিনিয়ার মো. মাহাবুব আলম এসবের ফল, ফুল ও সবজি চাষে খরচ এবং ঝুঁকি কম হচ্ছে বলে জানান। কৃষক এতে লাভবান হওয়ারও দাবি করেন তিনি।