দেশের 'সুপার ফুড' হতে পারে মিষ্টি আলু

মিষ্টি আলু খেতে বেশ সুস্বাদু। এটি স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক ভালো। ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও ম্যাঙ্গানিজ আছে এই আলুতে। ক্যানসারবিরোধী নানা গুণ আছে এই আলুতে। এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মিষ্টি আলুতে থাকে পর্যাপ্ত ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ। এতে আরও থাকে ভিটামিন বি-৬, পটাশিয়াম ও নিয়াসিন। লাল, কমলা, বেগুনি বিভিন্ন রঙের মিষ্টি আলুতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের বড় উৎস। পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কার্যকরী মিষ্টি আলু। এতে দুই ধরনের ফাইবার থাকে। একটি হলো সোলিউবল, অন্যটি ইনসোলিউবল। সলিউবল ফাইবার জলশোষণ করে ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমায়। অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও প্রয়োজন হয় দু'ধরনের ফাইবারের। পাচনতন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যার ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে।

প্রকাশ | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

আলতাব হোসেন
মিষ্টি আলু বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য শস্য যা আদিকাল থেকে মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে মিষ্টি আলুকে খাদ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক যুগের কিছু প্রমাণ মিলেছে পেরুর গুহা থেকে। প্রায় ১০,০০০ বছর আগে সেখানে মিষ্টি আলু পাওয়া যেত বলে নিশ্চিত হয়েছেন গবেষকরা। মিষ্টি আলু খেতে বেশ সুস্বাদু। এটি স্বাস্থ্যের জন্যও অনেক ভালো। ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও ম্যাঙ্গানিজ আছে এই আলুতে। ক্যানসারবিরোধী নানা গুণ আছে এই আলুতে। এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মিষ্টি আলুতে থাকে পর্যাপ্ত ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ। এতে আরও থাকে ভিটামিন বি-৬, পটাশিয়াম ও নিয়াসিন। লাল, কমলা, বেগুনি বিভিন্ন রঙের মিষ্টি আলুতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের বড় উৎস। পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কার্যকরী মিষ্টি আলু। এতে দুই ধরনের ফাইবার থাকে। একটি হলো সোলিউবল, অন্যটি ইনসোলিউবল। সলিউবল ফাইবার জলশোষণ করে ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমায়। অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও প্রয়োজন হয় দু'ধরনের ফাইবারের। পাচনতন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যার ভারসাম্য রাখতে সাহায্য করে। ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৪৯২ সালে যখন বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন তখন এই মিষ্টি আলুগুলোকে ইউরোপে নিয়ে যান। এরপর ষোড়শ শতকের দিকে স্প্যানিশদের মাধ্যমে মিষ্টি আলু পৌঁছে যায় ফিলিপাইনে। আফ্রিকা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও এই আলু পৌঁছে যায় পর্তুগিজ বণিকদের মাধ্যমে। ওই সময়েই দক্ষিণ আমেরিকায় মিষ্টি আলুর চাষ শুরু হয়ে গিয়েছিল এবং এখনো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে রয়েছে এই মিষ্টি আলুর চল। আমাদের হাতের কাছে এমন কিছু খাবার রয়েছে- যা শরীরকে সুস্থ করে তুলতে পারে। এমনই একটি খাবারের নাম হলো মিষ্টি আলু। মিষ্টি আলু খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিতেও পরিপূর্ণ। মিষ্টি আলু আমাদের অনেক কঠিন রোগ থেকে মুক্তি দেয়। তাই তো মিষ্টি আলুকে বলা হয় 'সুপার ফুড'। মিষ্টি আলু বিভিন্ন রঙের হয়, যেমন লাল, বেগুনি, কমলা, সাদা এবং হলুদ। পর্যাপ্ত ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির অন্যতম প্রধান উপাদান। তাই ভিটামিন সমৃদ্ধ যে কোনো খাবারই রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া মিষ্টি আলু ভিটামিন ও অ্যান্টি- অক্সিডেন্টে ভরপুর। মিষ্টি আলু সহজলভ্য ও সস্তা একটি খাবার। কিন্তু পুষ্টিগুণে ভরপুর এই মিষ্টি আলু। আর আমাদের মতো দেশগুলোতে মিষ্টতার জন্য বেশ জনপ্রিয় মিষ্টি আলু। যাই হোক, মিষ্টি আলুর রয়েছে অনেক গুণ। মিষ্টি আলুতে এমন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে- যা কিছু কিছু ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। বেগুনিরঙা মিষ্টি আলুতে থাকে অ্যান্থোসায়ানিন নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। টেস্ট-টিউব সমীক্ষায় দেখা গেছে, কিছু কিছু ক্যানসারের কোষ বৃদ্ধির গতি কমিয়ে দেয় ওই অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট। মিষ্টি আলুর খোসা থেকে পাওয়া যৌগেরও ক্যানসাররোধী গুণ আছে। মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে বিটাক্যারোটিন আছে। উজ্জ্বল লাল, কমলা রঙের মিষ্টি আলুতে এই যৌগ থাকে। চোখের কোষের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে সাহায়ক থাকে। ভিটামিন এ এর অভাবে অন্ধত্বও আসতে পারে। বিটাক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে তা ঠেকানো সম্ভব। অ্যান্থোসায়ানিন সমৃদ্ধ খাবার যে কোনো ধরনের প্রদাহ সারাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এ কারণে মিষ্টি আলুর পুষ্টিগুণ মস্তিষ্কে কোষের প্রদাহ রোধ করে ও মস্তিষ্ক সচল রাখে। মিষ্টি আলুর মধ্যে রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন। এটি প্রদাহরোধী উপাদান হিসেবে পরিচিত। এটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রদাহ রোধে কাজ করে। মিষ্টি আলুর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি। এটি ফ্লু ও ঠান্ডার সঙ্গে লড়াই করে। ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে মিষ্টি আলু বহুকাল আগে থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দেখা গিয়েছে যে, মিষ্টি আলু খেতে পারলে সুগার দ্রম্নত বাড়ে না। এই আলুতে রয়েছে অনেকটা ফাইবার। এই আলু সিদ্ধ করে খেয়ে নিতে পারলে সমস্যা কমে। একটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ১৪০ জন ডায়াবেটিস রোগীকে প্রতিদিন ৪ গ্রাম করে মিষ্টি আলু খেতে বলা হয়। ৩-৫ মাস পর দেখা গেল তাদের ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শুধু মিষ্টি আলুই নয়, সম্পূর্ণ উদ্ভিদটিই ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে। রক্তবর্ণের মিষ্টি আলুগুলোতে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং টিউমার প্রতিরোধী উপাদান- যা ভেষজ ওষুধ হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। তাইওয়ানে মিষ্টি আলুর পাতাকে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখা হয়। এর ওপর গবেষণা করে দেখা গিয়েছে, মিষ্টি আলুর পাতায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন 'এ', আলফা-ক্যারোটিন এবং বিটা-ক্যারোটিন- যা ফুসফুসের ক্যানসারকে প্রতিরোধ করে। মিষ্টি আলুতে পটাশিয়ামও পাওয়া যায়- যা স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখে। এর পাশাপাশি এটি কিডনিকে সুস্থ রাখতেও বিশেষ সাহায্য করে। পেটের পীড়ায়, পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধেও মিষ্টি আলুর জুড়ি মেলা ভার। শুধু তা-ই নয়, মিষ্টি আলু গ্যাস্ট্রিক আলসার প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যাদের আলসার রয়েছে তারা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মিষ্টি আলু রাখেন, তাহলে আলসার প্রতিকারে কাজ করে। খেলে ওজন কমানো যায় ব্যাপারটি অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। মিষ্টি আলুতে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকলেও রয়েছে জটিল কার্বোহাইড্রেট- যা পুষ্টিগুণে পূর্ণতা দেয়। এতে রয়েছে স্থূলতা নিরাময়কারী উপাদান- যা দেহে চর্বি জমতে দেয় না। ভিটামিন এবং খনিজগুলোর ঘাটতি আমাদের দেহে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে যা পরে বিভিন্ন জ্বালাময় লক্ষণগুলোর দিকে নিয়ে যায়। বিটাক্যারোটিন, ভিটামিন সি এবং ম্যাগনেশিয়ামের কারণে মিষ্টি আলু ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। এই উপাদানগুলো অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক ব্যথা উভয়ের ক্ষেত্রেই অনেক কার্যকর। রক্তকোষ তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা আছে এই আলুর। এতে আয়রন থাকে। ফলে তা লোহিত রক্ত কণিকার সংখ্যা বাড়ায়। সিদ্ধ করা মিষ্টি আলুতে সবচেয়ে ভালোভাবে পুষ্টি উপাদানগুলো পাওয়া যায়। খোসাসহ মিষ্টি আলুকে ১/২ টুকরা করে কেটে নিন। এবার একটি পাত্রে পানি নিয়ে তাতে আলুর টুকরোগুলো ৭ মিনিট ধরে সিদ্ধ করুন। ৭ মিনিট সিদ্ধ করলে মিষ্টি আলুর সবচেয়ে ভালো স্বাদ পাওয়া যায় এবং এর পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়। যদি আরও একটু স্বাদ আনতে চান, তাহলে এর সঙ্গে দারুচিনি, লবঙ্গ এবং জায়ফল দিয়ে নেবেন। এতে করে স্বাদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুষ্টিগুণও বাড়বে। ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৫ মিনিট পুড়িয়েও খেতে পারেন মিষ্টি আলু। গবেষণায় দেখা গিয়েছে এভাবে প্রস্তুতকৃত মিষ্টি আলুতে বিটা-ক্যারোটিন আলুর সর্বত্র সঠিক মাত্রায় অবস্থান নিতে পারে। মিষ্টি আলু একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্করা প্রধান কন্দালজাতীয় ফসল। এটি উষ্ণ ও অবউষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলের ফসল হলেও বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই কম বেশি এর চাষাবাদ হয়। খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এর তথ্য মতে, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১১৯টি দেশে মিষ্টিআলুর চাষাবাদ হয়ে থাকে। পর্তুগিজ বণিকদের মাধ্যমে এটি ভারতবর্ষসহ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। মধ্য আমেরিকায় উৎপত্তি হলেও বর্তমানে এর সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী দেশ চীন। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে খাদ্যের পুষ্টিমান সরবরাহ বৃদ্ধিকে একটি অন্যতম জনস্বাস্থ্য কৌশল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে রঙিন শাঁসযুক্ত মিষ্টিআলু খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় একটি সম্ভাবনাময় ফসল। কেননা, কৃষক এটি খুব সহজে অল্পখরচে চাষাবাদ করতে পারে। এর রোগবালাই তুলনামূলক অনেক কম। এর ভক্ষণযোগ্য মূলসিদ্ধ করে, বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন চিপস, আটা, ময়দা ইত্যাদি প্রস্তুতকরণে, কনফেকশনারি দ্রব্যাদি তৈরিতে, অ্যালকোহল শিল্পে ব্যবহার করা হয়। এমনকি এর পাতা সবজি হিসেবে ব্যবহার হয় এবং গোখাদ্য তৈরিতে ও ব্যবহার যোগ্য। মিষ্টি আলুতে শুষ্ক বস্তুর পরিমাণ আলুর থেকে বেশি হওয়ায় প্রক্রিয়াজাত শিল্পে এটিকে ব্যবহারের সুযোগ তুলনামূলক বেশি। বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই মিষ্টি আলুর চাষ হয়। স্থানীয় জাতগুলোর গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ১০ টনের কম কিন্তু উচ্চফলনশীল মিষ্টি আলুর জাতের ফলন প্রায় ৩০-৪৫ টন হেক্টর। গত ২০ বছরে মিষ্টি আলুর চাষের জমির পরিমাণ ও উৎপাদন ক্রমাগত কমছে। তবে সম্প্রতি উচ্চফলনশীল জাত ব্যবহারের কারণে এর গড় ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার শিশু রাতকানা রোগে আক্রান্ত হয়। রাতকানা রোগ প্রতিরোধে সরকারি উদ্যোগে প্রতি বছর শিশুদের ভিটামিন-এ ক্যাম্পেইন করে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। এতে দেশের প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। অথচ কমলা শাঁসযুক্ত মিষ্টি আলু খেয়ে আমরা অতি সহজেই ভিটামিন এ এর অভাব পূরণ করতে পারি। এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, রঙিন শাঁস যুক্ত মিষ্টি আলু প্রতিদিন ১২৫ গ্রাম করে খেলে একটি ৫-৬ বছরের শিশুর ভিটামিন-এ এর চাহিদা পূরণ হয়। একজন পূর্ণবয়স্ক লোকের জন্য মাঝারি আকারের একটি মিষ্টিআলুই যথেষ্ট। এর গস্নাইসেমিক ইনডেক্স অন্য ফসলের তুলনায় কম হওয়ায় ডায়াবেটিক আক্রান্তরা শকরা জাতীয় খাবারের পরিবর্তে মিষ্টি আলু খেতে পারেন। এছাড়াও মিষ্টি আলুতে বিদ্যমান বিটাক্যারোটিন ও অ্যান্থোসায়ানিন নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং এন্টি কারসিনোজেনিক উপাদান বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার নিরাময়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। মিষ্টি আলুর ভিটামিন ই-৬ রক্তনালিকে স্বাভাবিক রেখে হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। জাতীয় পুষ্টি নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখার স্বার্থে মিষ্টি আলুর চাষাবাদ ও ব্যবহার ব্যাপকভাবে সম্প্র্রসারণ করা প্রয়োজন- যা ভোক্তার চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মিষ্টি আলুর পুষ্টি গুণাগুণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, খাদ্যের বহুবিধ ব্যবহার, বীজের প্রাপ্যতা, দ্রম্নত বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া ও প্রক্রিয়াজাতকরণ সুবিধা, সংরক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধি ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যমে ভোক্তার চাহিদা বৃদ্ধি করা যেতে পারে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এ সম্বন্ধীয় প্রশিক্ষণ ও প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে এর দ্রম্নত সম্প্রসারণ করা সম্ভব। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় মিষ্টি আলুর কচি ডগা শাক বা পাকোড়া/বড়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কমবেশি সব জাত-ই শাক হিসেবে ব্যবহার উপযোগী। তবে বারি মিষ্টি আলু-৪, বারি মিষ্টি আলু-৮, বারি মিষ্টি আলু-১০, বারি মিষ্টি আলু-১১ ও বারি মিষ্টি আলু-১২ জাতসমূহ খুবই সুস্বাদু ও উপাদেয় সবজি হিসেব ব্যবহার করা যেতে পারে। কচি ডগার শাকে ভিটামিন-এ ও ফলিক এসিড পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার শিশুর স্বাভাবিক বুদ্ধি বিকাশে গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই উপকারী। বসতবাড়ির পাশে মিষ্টিআলুর লতা রোপণ করলে সারা বছর সবজি/শাক হিসেবে মিষ্টি আলু ব্যবহার করা যাবে। এর ফলে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে মিষ্টি আলুর লতা বর্ধন ও শাক বিক্রি করেও বাড়তি উপার্জন করা যেতে পারে। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় রবি মৌসুম তথা অক্টোবর-নভেম্বর মাসে মিষ্টি আলুর লতা রোপণ করে ফেব্রম্নয়ারি-মার্চ মাসে এই আলু উত্তোলন করা হয়। এক একক জমি থেকে মিষ্টি আলুর যে পরিমাণ শর্করা, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান উৎপন্ন করে তা অন্যান্য ফসল থেকে অনেক বেশি হওয়ায় এবং এর বাজারমূল্যও তুলনামূলক বেশি হওয়ায় এর চাষাবাদ অত্যন্ত লাভজনক। যে কারণে কৃষক খুব সহজেই রবি মৌসুমে মিষ্টি আলু চাষে আগ্রহী হবে। এ ছাড়া লবণাক্ত এলাকা ও চরাঞ্চলেও এটি জন্মাতে পারে। কন্দাল ফসল গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, দীর্ঘদিন যাবত এ ফসলের উন্নয়নের জন্য কাজ করে আসছে। দীর্ঘ দিন গবেষণার পর এ পর্যন্ত ১৬টি উচ্চফলনশীল ও গুণাগুণ সমৃদ্ধ মিষ্টি আলুর জাত উদ্ভাবন করেছে। মিষ্টি আলু রবি মৌসুমে করা হয়ে থাকে। এ লক্ষ্যে বারি উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল মিষ্টি আলুর জাত যেমন- বারি মিষ্টি আলু-২, বারি মিষ্টি আলু-৪, বারি মিষ্টি আলু-৮, বারি মিষ্টি আলু-১২, বারি মিষ্টি আলু-১৪ ও বারি মিষ্টি আলু-১৬ চাষ করা যেতে পারে। তবে জাত নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোক্তার পছন্দকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। চারা রোপণের ১০০ থেকে ১২০ দিন পর কন্দমূল বা এ আলু উত্তোলন উপযোগী হয়, তবে ১৪০ দিনের বেশি রাখলে শাঁস আঁশযুক্ত হয় এবং তাতে উইভিল পোকার আক্রমণ বেড়ে যায়। আমাদের দেশে মার্চ-এপ্রিল মাস পর্যন্ত মিষ্টি আলু বাজারে পাওয়া যায়। মাটির সাধারণ জো অবস্থায় কোদাল দ্বারা কুপিয়ে মিষ্টি আলু উত্তোলন করা হয়। বহুবিধ ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুষ্টি নিরাপত্তায় মিষ্টি আলু উলেস্নখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে, বিশেষ করে ভিটামিন-এ এর অভাব পূরণে। উন্নত জাতের মিষ্টি আলুর প্রতি একক জমিতে ভিটামিন-এ উৎপাদন ক্ষমতা অন্যান্য ফসলের তুলনায় অনেক বেশি।