ই-ফিশারি

মাছের খাদ্য খরচ কমাবে ২১ ভাগ

প্রকাশ | ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মেশিনটি ব্যবহারে এফসিআর বা খাদ্য রূপান্তর হার কমপক্ষে ২১ ভাগ পর্যন্ত সাশ্রয় হবে। আমাদের দেশের মাছের খাদ্য উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি অনুযায়ী সাধারণভাবে তাদের তৈরিকৃত খাদ্যের এফসিআর রেট ১.৫। মাঠ পর্যবেক্ষকদের দাবি প্রকৃত এফসিআর ১.৭। এ ক্ষেত্রে ই-ফিশারি অটোফিডার ব্যবহার করলে এফসিআর রেট কমে দাঁড়াবে ১.৩-১.৪ বলে দাবি করা হয়েছে। লিখেছেন মো. খোরশেদ আলম জুয়েল জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সর্বশেষ (এফএও) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাছ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে চীন বিশ্বসেরা, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে ভারত ও মিয়ানমার এবং তারপরই বাংলাদেশ। এফএও পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২২ সাল নাগাদ বিশ্বের যে চারটি দেশ মাছ চাষে বিপুল সাফল্য অর্জন করবে তার মধ্যে প্রথম দেশটি হচ্ছে বাংলাদেশ। পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) হিসেবে বলা হয়েছে, ২০১৩-১৪ সালে বাংলাদেশে ৩৪ লাখ ৫৫ হাজার টন মাছ উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে চাষের মাছের পরিমাণ ছিল প্রায় ২০ লাখ টন। বর্তমানে দেশে মাছ উৎপাদন হচ্ছে বছরে প্রায় ৩৬ লাখ মেট্রিক টন আর চাহিদা জনপ্রতি দৈনিক ৬০ গ্রাম হিসেবে বছরে ৪২ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে মাছ রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১৩৫ গুণ। স্বল্প আয়তন, সীমিত সম্পদের মধ্যেও বাংলাদেশের এমন অবস্থানে পৌঁছানোর কারণ কী হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে- স্থানীয় বাজারে চাহিদা, মাছচাষ সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ, কারিগরি জ্ঞানের সম্প্রসারণ এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমেই এটি সম্ভব হয়েছে। সরকার এবং বেসরকারি উদ্যোক্তারা চেষ্টা করছেন মাছের উৎপাদন আরও বাড়ানোর এবং এফএওর পূর্বাভাসকে বাস্তবে রূপ দিতে। প্রতিযোগী বিশ্বে টিকে থাকার জন্য মাছের উৎপাদন খরচ কমানোর বিকল্প নেই এ ক্ষেত্রে। মাছ উৎপাদনের মোট খরচের সিংহভাগ (৭৫-৮০ ভাগ) খরচ হয় খাদ্যবাবদ। এই খাদ্য খরচ কমাতে গেলে লাগসই প্রযুক্তির ব্যবহারের ব্যাপারে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে। এবার আসুন তাহলে এক নতুন প্রযুক্তির কথা জানি। একবার ভাবুন তো আপনি বসে আছেন শত মাইল দূরে। মাছচাষ করেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোনো পুকুরে। তাই বলে মাছকে তো আর না খাইয়ে রাখা যাবে না। যেহেতু বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন সুতরাং মুনাফা করতে চাইলে তার যত্নআত্তি নিতেই হবে। কিন্তু আপনি তো দূরে বসে আছেন। মাছের খাবার দেবেন কীভাবে? ভাবছেন, কর্মচারী রেখে দেবো, সমস্যা কী। নাহ্‌, সেটির আর দরকার নেই। রূপকথার গল্পের মতো, খাবার চলে যাবে মাছের কাছে। বেশিও নয় কমও নয়, নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার ঠিক যতটুকু মাছের জন্য দরকার ততটুকুই। টেনশনে আছেন, আপনার পুকুরের মাছ ঠিকমতো খাবার খেলো কিনা। চিন্তা নেই, গোয়েন্দাদের মতো সে খবরও পৌঁছে যাবে আপনার কাছে। শুধু তাই নয়- পুকুরের খাবারের আয়-ব্যয় সম্পর্কিত সব খবর জানতে পারবেন দূরে বসেই। এমনকি পুকুরের অবস্থা কেমন আছে বিশেষ করে পানির অবস্থা, তাপমাত্রা, পিএইচ মাত্রা, মাত্রাতিরিক্ত গ্যাস হলে সেগুলো বিশ্লেষণ করে এর কারণ নিরূপণ করা যাবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে। এ সবই জানা এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে আপনার মুঠোফোনের ইনস্টল করা একটি অ্যাপসের মাধ্যমে এবং যে যন্ত্রটির মাধ্যমে ওই অ্যাপসটি এ সব কাজ করবে সেটি থাকবে পুকুরে স্থাপন করা। আপনার পুকুরের মাছ কোনো কারণে খাবার কম খেলে পুকুরে স্থাপন করা মেশিনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। ভাবুন তো এমন একটি ব্যাপার হলে কেমন হবে? নাহ্‌! কোনো কাল্পনিক কাহিনী নয়, এটি এখন বাস্তবতা। আর এই বাস্তবতার কাজটি করেছে ইন্দোনেশিয়ার ই-ফিশারি নামে একটি যন্ত্র। যন্ত্রটি মূলত মাছের অটোফিডার। ই-ফিশারি ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মেশিনটি ব্যবহারে এফসিআর বা খাদ্য রূপান্তর হার কমপক্ষে ২১ ভাগ পর্যন্ত সাশ্রয় হবে। আমাদের দেশের মাছের খাদ্য উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি অনুযায়ী সাধারণভাবে তাদের তৈরিকৃত খাদ্যের এফসিআর রেট ১.৫। মাঠ পর্যবেক্ষকদের দাবি প্রকৃত এফসিআর ১.৭। এ ক্ষেত্রে ই-ফিশারি অটোফিডার ব্যবহার করলে এফসিআর রেট কমে দাঁড়াবে ১.৩-১.৪ বলে দাবি করা হয়েছে বাংলাদেশে যন্ত্রটির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এসিআই লিমিটেড। এ ছাড়া যন্ত্রটি ব্যবহারের ফলে প্রতিকেজি মাছ উৎপাদনে ২০০-৩০০ গ্রাম খাদ্য কম লাগবে বলে জানান, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এসিআই লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এফএইচ আনসারি। তিনি জানান, যন্ত্রটি ব্যবহারের ফলে শুধু মাছের খাদ্য খরচ কম হবে তা-ই নয় পুকুরের ভৌত অবস্থাও জানা যাবে। যার ফলে মাছের রোগ-বালাইও কম হবে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা খরচ কমে যাবে প্রায় ৩০ ভাগ। অন্যদিকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে মাছের খাবার সরবরাহ করার জন্য শ্রমিক খরচ সাশ্রয় হবে প্রায় ৩০-৪০ ভাগ। ড. আনসারি আরও বলেন, এতে মাছের স্যাম্পল সংগ্রহ এবং অন্যান্য যাবতীয় হিসাব রাখাও সহজ হবে। আপনি ঢাকা কিংবা অন্য কোনো শহরে বসে আছেন অথচ আপনার প্রকুরের অবস্থান প্রত্যন্ত কোনো এক গ্রামে। সমস্যা নেই, সেখানে বসেই পুকুরের সব খবরাখবর নিতে পারবেন। খাবার সময়মতো দেয়া হলো কিনা; মাছ খাবার খেলো কী খেলো না, সামগ্রিক বিষয়ই খোঁজ রাখতে পারবেন শত শত মাইল দূরে বসেই। যন্ত্রটির দাম পড়বে ১ লাখ ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে। এই দাম খামারিদের জন্য ব্যয়বহুল হবে কিনা জানতে চাইলে ড. আনসারি জানান, আমরা মোট মূল্যের ২০% অগ্রিম জমা দিয়ে ডাউন পেমেন্ট সিস্টেমে খামারিদের কাছে অটোফিডারটি সরবরাহ করব। বাকি টাকা ৪ মাস পর মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। এ ছাড়া রয়েছে স্থাপনা খরচ ফ্রি এবং ৫ বছর পর্যন্ত যে কোনো সমস্যায় ফ্রি সার্ভিস দেয়া হবে। সুতরাং এটি ব্যয়বহুল তো হবেই না বরং দুই বছরের মধ্যে এই খরচ উঠে আসবে। এ ছাড়া এসিআই অভিজ্ঞ মৎস্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি সার্ভিস টিম গঠন করেছে, যারা ই-ফিশারি অটোফিডার ব্যবহারকারিদের অ্যাপিস্নকেশন অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে মাছ ও পুকুরের যে কোনো সমস্যার জন্য ফ্রি পরামর্শ দেবেন।