বৃক্ষপ্রেমিক সেলিম শাহ

ষ গাছই যার স্বজন, গাছই প্রাণ

প্রকাশ | ২২ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

এম আর মাসুদ, ঝিকরগাছা (যশোর)
সন্তান, স্ত্রী, পরিবার-পরিজন, স্বজনেরা হয়তো একদিন আমার সঙ্গে বৈরিতা দেখাতে পারে; কিন্তু গাছ কখনও তা করবে না আমার সঙ্গে। গাছ থেকে শুধু অক্সিজেন নিয়ে আমরা বেঁচে থাকি না, এই গাছ আমাদের হিমশীতল ছায়া দেয়, ফল দেয়। আবার অদিনে এই গাছ বিক্রি করে আমরা অনেক টাকাও পাই। তাই গাছকে আমি আমার স্বজনের মতোই দেখি। গাছই আমার স্বজন, গাছই আমার প্রাণ। গাছ আমাকে বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায়। গাছ সম্পকের্ নিজের অভিমত এভাবেই ব্যক্ত করলেন সেলিম শাহ। যার আরেক নাম বৃক্ষপ্রেমিক সেলিম। পঞ্চাশোধ্বর্ বয়স্ক এই বৃক্ষপ্রেমী ফলজ বৃক্ষে সবুজায়নে কাজ করে যাচ্ছেন বিগত ১৬ বছর ধরে। সেলিম শাহ্ যশোর জেলার সদর উপজেলার দেয়ারা ইউনিয়নের তেঘরিয়া গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজ সরকারের ছেলে। তার দুই সন্তানের মধ্যে মেয়েটা মেডিকেলে ভতির্র জন্য কোচিং করছে আর ছেলেটা নবম শ্রেণিতে পড়ে। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের নতুনহাট বাজার রেল ক্রসিংয়ের পাশে ভ‚সিমালের ব্যবসা থাকলেও অধিকাংশ সময় তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘোরেন গাছ পরিচযার্র জন্য। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১০ শতক বসত ভিটা, ৪ বিঘা মাঠ আর নতুনহাট বাজারে ৬ শতক জমি আছে তার। তা থেকে গ্রামের ভ‚মিহীনদের কবরস্থানের জন্য দান করেছেন ৮ শতক। ২০০২ সালে সেলিম ৯০টি আম গাছ লাগানোর মাধ্যমে বৃক্ষরোপণ শুরু করেন। সে সময় তিনি নতুনহাট বাজার এলাকার রাস্তায় এই আম গাছ রোপণ করেছিলেন। এ বিষয় রীতিমতো জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে গাছ লাগানো ও তার পরিচযার্র অনুমতি নেন। প্রতি বছর তিনি ২০ হাজার টাকার এই ফলদ বৃক্ষ রোপণ করেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রাস্তার দুপাশে। ইতিমধ্যে যশোর সদরের নতুনহাট বাজার, বাজে দুগার্পুর বাজার, বাজে দুগার্ মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাজে দুগার্পুর রাস্তা, এড়েন্দা বাজার, এড়েন্দা রাস্তা, নারাঙ্গালি বাজার, নারাঙ্গালি রাস্তা, হালসা বাজার ও রাস্তা, নতুনহাট-ডুমদিয়া রাস্তা, তেঘরিয়া-ধোপাখোলা রাস্তা, ঝিকরগাছা উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রাস্তা, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের নতুনহাট-লাউজানি, গাজীর দরগাহ ইয়াতিম কমপ্লেক্স এ বৃক্ষ রোপণ করেছেন এবং এ বছর ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে কপোতাক্ষ নদ পযর্ন্ত রাস্তার দুই ধারে ফলদ বৃক্ষ রোপণ ও পরিচযার্র জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন। তার রোপণকৃত ফলদ বৃক্ষের মধ্যে আম, কঁাঠাল, বেল ও বিদেশি গাব গাছ আছে। নতুনহাট বাজার থেকে গাজীর দরগাহ ফিলিং স্টেশন পযর্ন্ত রাস্তার দুপাশে শতাধিক বেল গাছ লাগিয়েছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, সেলিম শাহ্র দোকানের সঙ্গে একটি আম ও কঁাঠাল গাছ রয়েছে। দোকানের সাইনবোডির্টও কাঠের ওপর খোদাই করে লেখা। আলাপচারিতায় তিনি জানালেন, বৃক্ষের প্রতি তার দুবর্লতার অনেক কথা। তার মতে, চৈত্র মাসে প্রতিক‚ল আবহাওয়ায় একমাত্র ফলদ গাছেই পাতা থাকে। তখন পরিবেশের তাপমাত্রা থেকে জীবক‚লকে রক্ষা করে একমাত্র এই ফলদ গাছ। তাই তিনি ফলদ বৃক্ষের প্রতি দুবর্ল। তিনি যে সমস্ত আম গাছ রোপণ করেন তা কলম নয়, অঁাটির গাছ। এই অঁাটির গাছ অনেক বড় ও এর পাতা অধিক সবুজ এবং আম লাল হয়। এমনকি একাধিক স্থানে ৬-৭ বার করেও গাছ লাগিয়েছেন। আর রোপণ করেই ক্ষান্ত হননি। খঁাচা বেড়া, গবরলেপনসহ গাছ বিনষ্ট ঠেকাতে সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এ সকল কাজ করতে গিয়ে তিনি শুধু পরিবার-পরিজন নয়, এলাকাবাসীরও তিরস্কার ও ভৎর্সনার শিকার হন। একদিন তিনি নামাজের জন্য মসজিদে যাচ্ছিলেন, এ সময় খবর আসে একটি গাছ গরু নষ্ট করছে। তখন সে ওই গাছটি রক্ষা করতে যায়। এ ঘটনায় এলাকার অনেকেই তাকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন। শত প্রতিক‚লতার মধ্যেও তিনি জীবদ্দশায় এই কাজ করে যেতে চান। গড়তে চান ছায়াযুক্ত রাস্তা ও ফলদ সবুজায়ন। সেলিম শাহর রোপণকৃত গাছ দেখতে গিয়ে কথা হয় সদরের নতুনহাট পাবলিক কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র রাব্বি হোসেনের সঙ্গে। রাব্বি বৃক্ষপ্রেমী হিসেবে সেলিম শাহকে চেনেন। পঁাচ বছর আগে বাজেদুগার্পুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যখন আম গাছ রোপণ করতে গিয়েছিলেন তখন থেকে তার চেনা। গ্রামের মেম্বার মোহাম্মদ মোনকির জানান, সেলিম শাহ্ যে কাজটি করছেন তা একটি মহৎ কাজ। আমাদের সবার উচিত তাকে সহযোগিতা করা।