বাকৃবি গবেষকের সাফল্য

পাঙাশে হবে আচার ও পাউডার

প্রকাশ | ১৪ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

মো. নাবিল তাহমিদ
গরিবের আমিষ নামে পরিচিত পাঙাশ মাছ। বাজারে অন্য যে কোনো মাছের তুলনায় পাঙাশের দাম কম থাকায় দরিদ্র পরিবারগুলো তাদের আমিষের চাহিদা এই মাছ দিয়ে পূরণ করে থাকে। কিন্তু মাছের খাদ্যসহ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় একদিকে পাঙাশ চাষিরা লোকসান গুনছেন অন্যদিকে অনেকে পাঙাশ চাষ ছেড়ে দিয়েছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পাঙাশ মাছ থেকে পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে মূল্য সংযোজন করা প্রয়োজন। আর পাঙাশ থেকে নতুন পণ্য উৎপাদন নিয়ে দীর্ঘ দুই বছর গবেষণা করে পাঙাশের শুটি মজাদার পণ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মৎস্য প্রযুক্তিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম নওশাদ আলম ও তার গবেষক দল। গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অধ্যাপক ড. এ কে এম নওশাদ আলম। সংবাদ সম্মেলনে ড. নওশাদ বলেন, কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় মিঠা পানির মাছের আহরণোত্তর ক্ষতি প্রশমন ও মূল্য সংযোজন প্রকল্পের আওতায় আমরা দুই বছর ধরে গবেষণা করছি। এই গবেষণার হাত ধরেই পাঙাশ মাছের সব পুষ্টিগুণ ঠিক রেখে স্বল্প খরচে লোভনীয় স্বাদ ও গন্ধের মচমচে পাঙাশের আচার ও পাউডার উদ্ভাবন করতে পেরেছি। পাঙাশের আচার সম্পর্কে তিনি বলেন, সাধারণ রান্নার যন্ত্রপাতি ও তৈজসপত্র দিয়েই স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায় রেখে এই মচমচে পাঙাশ আচার তৈরি করা যাবে। আচারটি শুকনো ও মচমচে হওয়ায় প্রায় এক বছরের অধিক সময় কক্ষ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যাবে। আচারটিতে শতকরা ৩৭ ভাগ আমিষ, ২৮ ভাগ স্নেহ, ১৬ ভাগ মিনারেল ও ১১ ভাগ ফাইবার পাওয়া যাবে। আচারে পাঙাশের তেল অক্ষুণ্ন্ন থাকায় হৃদরোগের ঝুঁকিও কমবে। এক কেজি পাঙাশ থেকে ৩৫০ গ্রাম পাঙাশ আচার পাওয়া যাবে। যা উৎপাদন করতে সর্বমোট ১২০-১৫০ টাকা খরচ পড়বে এবং ৪০০-৪৫০ টাকায় বিক্রয় করা সম্ভব হবে। পাঙাশের পাউডার সম্পর্কে তিনি বলেন, পাঙাশ একটি চর্বিযুক্ত মাছ। এর চর্বি ও আমিষকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ উপযোগী করে পাঙাশ পাউডার তৈরি করা হয়েছে। পাঙাশের পাউডারও প্রায় এক বছরের অধিক সময় ধরে কক্ষ তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যাবে। পাঙাশের পাউডার দিয়ে আচার, ভর্তা, স্যুপ, নুডুলস, তরকারি খিচুরি ইত্যাদি বানানো যায়। এ ছাড়াও একে পাউডার দুধ বা নবজাতকের খাবার, বেকারি পণ্য, বিস্কুট, চিপস্‌ বা অন্যান্য যে কোনো খাদ্যদ্রব্যে মিশিয়ে পুষ্টিগুণ বাড়ানো যায়। এক কেজি পাঙাশ থেকে ২০০-২৫০ গ্রাম পাউডার তৈরি করা সম্ভব। মাত্র ১.৫০ টাকা মূল্যের ৩ গ্রাম পাউডার দিয়ে একজনের খাওয়ার উপযোগী সু্যপ বা নুডুলস তৈরি করা সম্ভব। পাঙাশের পাউডারে ৪৫ ভাগ আমিষ, ৩২ ভাগ চর্বি, ১ ভাগ মিনারেল ও ৯ ভাগ ফাইবার পাওয়া যাবে। প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. এ কে এম নওশাদ আলম বলেন, বর্তমানে অন্যান্য মাছের উৎপাদন ও জোগান বেড়ে যাওয়ায় পাঙাশের বাজারমূল্য পড়ে গেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে পাঙাশের উৎপাদন ছিল ৭.৫ লাখ টন বর্তমানে উৎপাদন কমে ৩.৫ লাখ টনে নেমে এসেছে। আমাদের উদ্ভাবিত পণ্য দুটি সম্পর্কে পাঙাশ চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এতে করে তারা আর্থিকভাবে যেমন লাভবান হবেন তেমনি আরও অনেকই পাঙাশ চাষে উদ্বুদ্ধ হবেন যা আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। পণ্য দুটি খুব শিগগিরই বাজারে পাওয়া যাবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন তিনি।