ফল সংরক্ষণে বারির ফলশোধন যন্ত্র

প্রকাশ | ২৮ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন
খাদ্য ও পুষ্টির অন্যতম উৎস ফল। ফল মানুষের পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ জোগান দেয়। বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে প্রায় ৫০ ধরনের ফল আছে। এর মধ্যে মাত্র অল্প ক'টি ফল বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ হয়, যা চাহিদার তুলনায় অর্ধেকেরও কম। অন্যদিকে সংগ্রহ এবং সংগ্রহোত্তর অব্যবস্থাপনার জন্য নষ্ট হয় প্রায় শতকরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ ফল। ফল উৎপাদনে ফল সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর প্রযুক্তির ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ফল সংরক্ষণে উদ্ভাবন করেছে ফলশোধন যন্ত্র। এই যন্ত্রের সাহায্যে ১০ থেকে ১২ দিন পর্যন্ত ফল অনায়াসে সংরক্ষণ করা যাবে স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতিতে। ফলমূল দ্রম্নত পচনশীল। তাই আদিকাল থেকেই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক লাভের আশায় ফরমালিন ব্যবহার করে থাকে। ফলে এই ফল খেয়ে মানুষের উপকারের থেকে হয় অপকারই বেশি। শরীরে হয় নানা রোগ। এই সমস্যা সমাধান খুঁজতে গিয়েই বারির এই যুগান্তকারী উদ্ভাবন। যন্ত্রের কাজে করার পদ্ধতি সম্পর্কে বারি সূত্রে জানা যায়, "যন্ত্রের মাধ্যমে দুই কিলোওয়াটের ১০টি বৈদু্যতিক হিটারের মাধ্যমে পানি গরম করা হয়। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে জন্য রয়েছে ডিজিটাল তাপ নিয়ন্ত্রক। ফলভর্তি পস্নাস্টিক ক্রেট বহনের জন্য মোটরচালিত কনভেয়ার রোলার ব্যবহার করা হয়। যন্ত্র চালাতে চারজন শ্রমিক প্রয়োজন। যন্ত্রের মাধ্যমে ফলকে সুষমভাবে ৫৩ থেকে ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৫ থেকে ৭ মিনিটে শোধন করা যায়। শোধন করা ফল ১০ থেকে ১১ দিন টাটকা থাকে, ফলের গায়ের রং উজ্জ্বলও থাকে। যন্ত্রটি পরিচালনা করা সহজ, শোধন খরচও কম। যেমন ঘণ্টায় ১ হাজার কেজি আম ও ৬শ কেজি কলা সংগ্রহ করা যায়। প্রতি কেজি আম সংগ্রহে ৬০ পয়সা এবং কলা সংগ্রহে ৮৩ পয়সা খরচ পড়বে। একটি বড় শোধনাগারের দাম ২ লাখ ৫০ হাজার। বারির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সেলিম রেজা মলিস্নক বলেন, বারি ফলশোধন যন্ত্রে পরিষ্কার পানি দিয়ে চৌবাচ্চাটি এমনভাবে পূর্ণ করতে হবে যেন ১০ সেন্টিমিটার খালি থাকে। হিটারগুলো বৈদ্যুতিক তারের সাহায্যে প্যানেল বোর্ডে যুক্ত করতে হবে। পানির তাপমাত্রা নির্দিষ্ট মাত্রায় নিয়ে আসতে হবে। দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পানি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় উঠে। তিনি আরও বলেন, এরপরে রোলার চালানোর জন্য মোটর চালু করতে হবে। এরপর জলাধারের এক প্রান্ত থেকে ফলভর্তি পস্নাস্টিকের ঝুড়ি পানির মধ্য দিয়ে রোলারে বসিয়ে দিতে হবে। এভাবেই অনবরত ফল ভর্তি ঝুড়ি রোলারের উপর বসিয়ে শোধন করা যাবে। দ্রম্নত ফল শুকানোর জন্য বৈদ্যুতিক পাখা ব্যবহার করা যাবে। এভাবে ১০ থেকে ১২ দিন ফল সংরক্ষণ করা যাবে।