নয়নাভিরাম শিরীষ

প্রকাশ | ০৫ মে ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শিরীষ পত্রঝরা ও পত্রমোচী বৃক্ষ। পরিবার-গরসড়ংধপবধব, উদ্ভিদতাত্ত্ব্বিক নাম- অষনরুরধ ষবননবপশ। ইংরেজি নাম- খবননবপশ, খবননবপশ ঞৎবব, ঋষবধ ঞৎবব, ঋৎুড়িড়ফ, কড়শড় ইত্যাদি। আদিনিবাস ইন্দোনেশিয়া, নিউগিনি এবং উত্তর অষ্ট্রেলিয়া। তা ছাড়া ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মালয় এবং চীনে এই গাছ জন্মে। ইদানীং আমেরিকা ও আফ্রিকায় এর চাষ সম্প্রসারণ হচ্ছে। শিরীষ গাছ ছায়াতরু হিসেবে খ্যাত, এ জন্য এর চাষাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাইতো উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ছায়াদানকারী বৃক্ষ হিসেবে শিরীষ চাষ করা হচ্ছে। ভারত ও পাকিস্তানে এর কাঠ ব্যবহার করার জন্য চাষ হয়। তা ছাড়া শিরীষ থেকে পশু খাদ্য ও ওষুধ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই সুপ্রাচীন কাল থেকে শিরীষ গাছ দেখা যায়। কাঠের প্রয়োজনীয়তা মেটানোর জন্য চাষিরা রোপণ করে থাকেন এবং কোথাও কোথাও আপনা আপনি জন্মে। আমাদের দেশের মানুষের কাছে এ শিরীষ গাছ কড়ই গাছ হিসেবে পরিচিত। পরিণত বয়সের একটি শিরীষ গাছ বিশাল আকার-আকৃতির বৃক্ষ হয়ে উঠতে দেখা যায়। এর কান্ড সরল, উন্নত ও গোলাকার। চামড়ার রং সাদাটে থেকে ঘিয়ে রঙের যা মসৃণ বা অধিক বয়স্ক গাছের চামড়া ফাটা ফাটা থাকে। গাছের উচ্চতা গড়ে ১৮ থেকে ৩০ ফুট হয়ে থাকে। এর শাখা-প্রশাখা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে যা ছাতার ন্যায় এবং পত্রঘন বিন্যাসে ছায়া সুনিড়ি। এর যৌগিক পাতা আকারে ৭ থেকে ১০ সেন্টিমিটার, বেশ মসৃণ, রং সবুজ এবং পাতাগুলো অবনতভাবে থাকে। বড় পত্র দন্ডে পাতা ধরে, পাতা সুবিন্যস্তভাবে সাজানো থাকে। প্রতি পত্রদন্ডে ৮ থেকে ১৬টি পাতা ধরে। পাতার বোঁটা বেশ ছোট। শিরীষ গাছ শীতকালে তার সমস্ত পাতা ঝরিয়ে দিয়ে পত্রশূন্য অবস্থায় থাকে, পত্রশূন্য গাছের শোভা তখন গাছের ঝুলন্ত ফলগুলো। বসন্তের শেষে যেই একপশলা বৃষ্টি আর তখনই শিরীষ গাছে নতুন পাতার আগমন ঘটে। একদিকে নতুন পাতা অন্যদিকে এর ফুল কলির আগমন এবং গাছে ফুল ফোটতে দেখা যায়। গাছের শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে থোকায় থোকায় ফুল ধরে এবং সারাগাছ ফুলে ফুলে ভরে উঠে। ফুটন্ত শিরীষ ফুলের সৌন্দর্য নয়নাভিরাম। আর এ শিরীষ ফুলের সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে বাংলার অনেক কবিই তাদের কাব্যে শিরীষ ফুলকে তুলে ধরেছেন নানান রূপে। এর ফুলের রং সাদা থেকে হাল্কা হলুদ। ফুলের সৌন্দর্য গুচ্ছ-কোমল পরাগ কেশরে বিদ্যমান এবং পরাগকেশরের অগ্রভাগ সবুজ। গন্ধ দূরবাহী ও উগ্র। ফুল ফোটার ব্যাপ্তি বসন্ত থেকে গ্রীষ্ম। ফুল শেষে গাছে ফল ধরে। এর ফল লম্বায় ৮ থেকে ১০ সেন্টিমিটার। চওড়া ৪ থেকে ৬ সেন্টিমিটার ও চ্যাপ্টা। পরিপক্ক ফলের রং খয়েরি। ফলের ভেতর বোতাম আকৃতির ৬ থেকে ১০টি বীজ থাকে। বীজের মাধ্যমে এর বংশ বিস্তার ঘটে। শিরীষ গাছের কাঠ বেশ শক্ত, মজবুত, টেকসই ও ভারি। কাঠের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শিরীষের রয়েছে ভেষজ নানান রকম গুণ। গাছের ছাল ও মূল বিষাক্ত পোকা-মাকড়ের কামড়ে বিষক্রিয়া নষ্টে কাজ করে, পাতার রস রাতকানা রোগে উপকারী। তা ছাড়া চর্মরোগ দমন, হাঁপানি দমন ও দাঁতের মাড়ি শক্ত করতে শিরীষ বেশ উপকারী। ছবি ও লেখা : মোহাম্মদ নূর আলম গন্ধী