যমুনার চরে বাদামের বাম্পার উৎপাদন

প্রকাশ | ১৯ মে ২০১৯, ০০:০০

আখতার হোসেন খান
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার যমুনা নদীর গর্ভে জেগে ওঠা বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল এলাকা। বর্ষায় দু'কূল ভাসিয়ে নেয়া যমুনা শুষ্ক মৌসুমে ধু-ধু বালুচর। যমুনার বুকে জেগে ওঠা বালুচর অবহেলিত মানুষের বেঁচে থাকার অন্যতম একমাত্র অবলম্বন। রাক্ষুসে যমুনার ভাঙা গড়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকা মানুষ বালুচরে দীর্ঘদিন ধরে চীনা বাদামের চাষ করে আসছে। চলতি মৌসুমে বাদামের দাম ও ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। তাই চরের কৃষক বাদামকে আদর করে নাম দিয়েছেন যমুনার গুপ্তধন। সরেজমিন যমুনা চর ঘুরে দেখা গেছে, যমুনা নদীর বুকজুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় চর। আর এসব বালুচরে মাইলের পর মাইল চীনা বাদামের ক্ষেত। বালুর চরে সবুজ আর সবুজে ছেয়ে গেছে লতানো বাদামের গাছে। প্রতিটি লতানো বাদাম গাছের মুঠি ধরে টান দিলেই উঠে আসছে থোকা থোকা সোনালি রঙের চীনা বাদাম। এ যেন বালুর নিচে লুকিয়ে থাকা গুপ্তধন। বর্ষার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আগেই গুপ্তধন ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষাণ কৃষাণী। ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা চরের কৃষক লাল মিয়া জানান, যমুনা চরের বালু, মাটি, চীনা বাদাম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এ বছর বাদাম চাষ করে অনেক লাভ হবে বলে আশা করছি। প্রতি মণ কাঁচা বাদাম বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকায় এবং প্রতি মণ শুকনা বাদাম বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২২০০ টাকায়। এবার ফলন ভালো হওয়ায় এক বিঘা জমিতে ৮ থেকে ১০ মণ বাদাম পাওয়া যাচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাদামের ফলনও হয়েছে। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘায় ১৪-১৫ হাজার টাকা লাভ হবে বলে আশা করি। আরেক কৃষক শাহ আলম জানান, বালু মাটিতে অন্য কোনো ফসল উৎপাদন করে বাদামের সমপরিমাণ লাভ হয় না। অন্যান্য ফসল উৎপাদনের চেয়ে চীনা বাদাম উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় চরাঞ্চলের আমরা সবাই বাদামের চাষ করেছি। বাদাম রোপণের পর অন্য ফসলের মতো কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। নেই রাসায়নিক সারের ব্যবহার। বীজ রোপণ আর পরিপক্ব বাদাম উঠানোর মজুরির খরচ ছাড়া তেমন কোনো খরচ নেই বললেই চলে। একটি ফসলেই আমাদের সারা বছরের সংসার চলে। বালুচরের এ ফসলটি আমাদের বেঁচে থাকার জন্য গুপ্তধন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জিয়াউর রহমান বলেন, গতবছর যমুনার চরে ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়েছিল। এবছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে ঢাকা-১ ও ডিজি-২ জাতের চীনা বাদামের চাষ হয়েছে। আমরা আশা করছি যমুনার চরে বাদামের ব্যাপক চাষাবাদ কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। কৃষকদের সব সময় আমরা সচেতনতামূলক পরামর্শ দিয়ে থাকি এবং কোনো রোগ হলে তাৎক্ষণিক উপ-সহকারী কৃষি অফিসারকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়ে থাকি।