বৃক্ষপ্রেমী রাশেদ

প্রকাশ | ১৪ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুন্ড
প্রচেষ্টা আর অদম্য ইচ্ছা শক্তি যে কোনো মানুষকে সফলতার স্বর্ণ শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। তেমনি নিজের অদম্য ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ফলের বাগান গড়ে তুলে সফল হয়েছেন সীতাকুন্ডের বাঁশবাড়িয়ার ইউপি সদস্য রাশেদ। তার বাগান জুড়ে থাকা ফলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিনিয়ত বাগানে ছুটে আসছেন এলাকার মানুষ। স্থানীয় লোকজনের কাছে রাশেদ সফল কৃষক হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও বাগান দেখতে আসা লোকজন তাকে উপাধি দিয়েছেন বৃক্ষপ্রেমী হিসেবে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তার বাগানের বিষমুক্ত ফল দৃষ্টি কড়েছে স্থানীয়দের। বর্তমানে তার বাগানের উৎপাদিত ফল বিক্রির মাধ্যমে আয় করছেন লাখ লাখ টাকা। ফল বাগান গড়ে সফলতা অর্জনকারী রাশেদের এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ কৃষিকে একধাপ এগিয়ে দেয়ার পাশাপাশি ফল বাগান গড়তে আগ্রহী হয়ে উঠছেন উপজেলার অনেক বেকার যুবক। আলাপকালে মো. রাশেদ জানান, একান্ত শখের বসে ২০১৩ সালে বাঁশবাড়িয়া রেললাইনের পূর্বপাশের পাহাড় সংলগ্ন ৮ একর জমিতে আমসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলের বাগান গড়ে তুলি। শুরুতে বন্ধুর পরামর্শে নওগাঁ থেকে আম্রপালি, হাঁড়িভাঙা, হিমসাগর, মলিস্নকা, রাংগুয়াই, আম্র্রপালি, বারো মাসি ফজলিসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাড়ে চারশ আমগাছের চারা কিনে আনি। পরবর্তীতে আরো একশ চারা জোগাড় করি। এ ছাড়াও তিন শতাধিক বারি ওয়ান মাল্টা, ৫০টি কমলা, সহস্রাধিক পেঁপে, ৫০টি শরিফার চারা রোপণ করা হয়। তবে বাণিজ্যিক প্রসারের স্বপ্ন সফলে ৮ একর ফল বাগানের মধ্যে ৫ একর জমিতে রোপন করেন আমের চারা। শুরুতে বাগানের পরিচর্যার বিষয় বুঝতে কিছুটা অসুবিধা হলেও পরবর্তী সময়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল মুনসুরের পরামর্শে সফলতার দেখা পান রাশেদ। এতে আমের চারা রোপণের দ্বিতীয় বছরে বাগানে প্রচুর পরিমাণে ফলন হয়। প্রথমবারে বাগানের বিষমুক্ত আম নিজেরা খাওয়ার পাশাপাশি আত্মীয়স্বজনদের মাঝে বিলি করার পরও ৩/৪ লাখ টাকার আম বাজারে বিক্রি করি। প্রতিবারের ন্যায় এবারও আমের ভালো ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭/৮ লাখ টাকার আম বাজারে বিক্রি করেছি। রাশেদ আরও বলেন, আমার বাগানের ফল বিষমুক্ত হওয়ায় সীতাকুন্ডের পাশপাশি বিভিন্ন উপজেলা ও জেলার ক্রেতারা এখান থেকে আম কিনে নিয়ে যান। পরিদর্শনকালে দেখা যায়, পাহাড়ের পার্শ্ববর্তী জমিতে অত্যন্ত যত্ন সহকারে উন্নত জাতের কলম পদ্ধতির বিভিন্ন প্রজাতির আম, মাল্টা, কমলা, পেঁপে ও শরিফার বাগান গড়ে তুলেছেন ইউপি সদস্য রাশেদ। ফলের ভারে নু্যয়ে পড়েছে বাগানের প্রতিটি আম গাছের ডাল। এ ছাড়াও ফল ও ফুলে শোভিত হয়ে আছে মাল্টা, কমলা ও পেঁপে গাছ। বিষমুক্ত আম কিনতে আসা সীতাকুন্ডের সৌমিত্র চক্রবর্ত্তী বলেন, কেমিক্যাল মেশানোর প্রবণতার ফলে বাজারের আম কেনা বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু রাশেদের বাগানের আমগুলো একদিকে যেমন বিষমুক্ত, অন্যদিকে খুবই সুস্বাদু। তাই এ বাগানের আম কিনে নিয়ে নিজে ও পরিবারের সবাইকে নিশ্চিতে খাওয়ানো যায়। এরকম ফল বাগান সীতাকুন্ডের সবশ্রেণির ক্রেতার মন কেড়ে নেয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল মুনছুর বলেন, রাশেদের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও কঠোর পরিশ্রমের ফলে বাগানটি বাণিজ্যিক ফলবাগানে পরিণত হয়েছে। এ বছর রাশেদের বাগানে বিষমুক্ত বিভিন্ন প্রজাতির ৮ টন আম উৎপাদন হয়েছে। ফলের বাগানে রাশেদের এ সফলতা কৃষি বিভাগকে চমকে দেয়ার পাশাপাশি অনাবাদি জমিতে এবং পাহাড়ের বুকে বাগান গড়ে তলতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন অনেক বেকার যুবক।