খুলনার পান বিদেশিরাও খান

খুলনায় ৭৯০ দশমিক ৩৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়। এ অঞ্চলে পানচাষির সংখ্যা পাঁচ হাজার ৫৬৩ জন। ঝাল মিষ্টির পানের কারণে খুলনা অঞ্চলের পানের বেশ সুখ্যাতি রয়েছে। খুলনায় বিভিন্ন ফসল চাষের পাশাপাশি অর্থকরী ফসল হিসেবে পানচাষ অনেকটাই জনপ্রিয় ও লাভজনক হয়ে উঠেছে। খুলনা থেকে দুবাই, সৌদি আরব, কুয়েতসহ আরও অনেক দেশে পান রপ্তানি হচ্ছে

প্রকাশ | ২১ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

শুভ্র শচীন
আপ্যায়ন আতিথেয়তায় পানের জুড়ি নেই। অনেকেই আবার নিয়মিত পানের স্বাদ নেয়ার অভ্যাসও গড়ে তুলেছেন। দেশের সীমানা পেরিয়ে অনেক আগে ভিনদেশিদের ঠোঁট রাঙাচ্ছে খুলনার পান। তবে খুলনার পানে ব্যাকটেরিয়া পাওয়ার কারণে গত প্রায় এক বছর এ অঞ্চল থেকে রপ্তানি বন্ধ ছিল। এক বছর পর আবারও পান রপ্তানি হচ্ছে। সূত্রমতে, ঝাল মিষ্টির পানের কারণে খুলনা অঞ্চলের পানের বেশ সুখ্যাতি রয়েছে। খুলনায় বিভিন্ন ফসল চাষের পাশাপাশি অর্থকরী ফসল হিসেবে পানচাষ অনেকটাই জনপ্রিয় ও লাভজনক হয়ে উঠেছে। তবে গত বছর এ অঞ্চলের পানে ক্ষতিকর 'সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া' পাওয়ায় পান রপ্তানি বন্ধ ছিল। সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া মূলত পান ধোয়ার পানি থেকে পানের সঙ্গে মেশে। পানের বরজ থেকে পান সংগ্রহের পর তা যে পানি দিয়ে ধোয়া হয়, তাতেই সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া থাকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনার রূপসা, দীঘলিয়া, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, ফুলতলা, দাকোপসহ আরও বেশ কিছু অঞ্চলে পানচাষ করা হয়। সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে এ অঞ্চলে বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে পানচাষ হচ্ছে। খুলনায় যেসব পানচাষ করা হয় সেগুলো হলো, ঝালপান, বেনারসিপান, ছাঁচিপান, মিষ্টিপান, হাইব্রিডপান, মন্টুপান, বাবনাপান ও গেছোপান। তবে ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে ধারণা নেই অঞ্চলের পানচাষিদের। দীঘলিয়ার বারাকপুরের পানচাষি মুরাদ শেখ বলেন, আমরা বরজ থেকে পান সংগ্রহ করে তা পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে রাখি। পরে শহরে পাইকারদের কাছে পৌঁছে দিই। পাইকাররা আবার এজেন্ট মারফত এয়ারপোর্টে পান পাঠান। এজেন্টরা এয়ারপোর্টে কোল্ড স্টোরে পান সংরক্ষণ করে। পরে সেখান থেকে পান মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যায়। কিন্তু ভাইরাসের কথা জানি না। তিনি বলেন, একেক সিজনে আমি দুই বিঘার বরজ থেকে দুই থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ পাই। পান চাষে লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন এ অঞ্চলে পানচাষির সংখ্যা বাড়ছে। কৃষি অফিস থেকে কখনো সাহায্য পাই না, কোনো ট্রেনিং পাইনি। মাঝে মাঝে লোক আসে, কী নিয়ে সার্ভে করে চলে যায়। পানচাষি কৃষ্ণপদ দে বলেন, খুলনা থেকে দুবাই, সৌদি আরব, কুয়েতসহ আরও অনেক দেশে পান যায়। কিন্তু সরকারি সহযোগিতা পেলে আরও ভালো মানের পান উৎপাদন করতে পারতাম। কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, খুলনায় ৭৯০ দশমিক ৩৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হয়। এ অঞ্চলে পানচাষির সংখ্যা পাঁচ হাজার ৫৬৩ জন। এ দপ্তরের খুলনার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক পঙ্কজ কান্তি মজুমদার বলেন, আমরা অঞ্চলভিত্তিক পানচাষিদের সতর্কতামূলক ট্রেনিং দিচ্ছি। পান ধোয়ার পানি থেকে যাতে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া পানের সঙ্গে না মিশতে পারে, এ জন্য আমরা সতর্ক করছি। উলেস্নখ্য, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে খুলনার পান সরবরাহ করা হচ্ছে দেশে-বিদেশে। দুবাই, সৌদি আরব, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই খুলনার পান বেশ জনপ্রিয়। পানচাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন চাষিরা। খুলনার বেশ কিছু অঞ্চলে পানচাষের কারণে বেকারত্ব দূর হচ্ছে। তবে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পান চাষে আরও বেশি আগ্রহী হবেন চাষিরা। তবে গত ডিসেম্বর থেকে স্থানীয় বাজারে পানের দাম বেড়েছে। কাঁচা পান বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে শুরু করে ২শ টাকা পর্যন্ত প্রতি পোন (৮০টি) দরে। চাষিরা জানিয়েছেন, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ার কারণে পানের উৎপাদন কমেছে। এতে করে পানের দাম বেড়েছে।