প্রাণী চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত

প্রকাশ | ২৮ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
জাহিদ হাসান প্রায় দেড় কেজি লৌহজাতীয় পদার্থ কোনো প্রাণী খেয়ে ফেললে পাকস্থলীতে পরিপাকে বিঘ্ন ঘটে প্রাণীটির মৃতু্যমুখে পতিত হওয়ার কথা। আর সেটা যদি হয় অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো পাখির ক্ষেত্রে, সে ক্ষেত্রে বাঁচার সম্ভাবনা হয় একেবারেই ক্ষীণ। কিন্তু পাকস্থলীতে সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এমনই এক উটপাখিকে নতুন জীবন দিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালের চিকিৎসকরা। জানা যায়, গত এপ্রিল মাসে নেত্রকোনার চিড়িয়াখানা থেকে আট মাস বয়সী একটি উটপাখিকে চিকিৎসার জন্য আনা হয় বাকৃবির ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালে। পাখিটির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা জানান, পাখিটি কিছু লৌহজাতীয় পদার্থ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এ সময় ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালের পরিচালক এবং সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের প্রফেসর ড. মো. রফিকুল আলম পরীক্ষা করে পাখিটির পাকস্থলীতে অখাদ্য বস্তুর উপস্থিতির বিষয়ে নিশ্চিত হন। এমতাবস্থায় ভেন্ট্রিকুলোস্টমি অপারেশনের মাধ্যমে বস্তুগুলোকে পাকস্থলী থেকে অপসারণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অপারেশন টিমে প্রফেসর ড. মো. রফিকুল আলমের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন একই বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মাহমুদুল আলম। পাখিটিকে সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞান করে প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী ভেন্ট্রিকুলোস্টমি অপারেশনের মাধ্যমে পাকস্থলী থেকে বস্তুগুলোকে সফলভাবে অপসারণ করা হয়। অপসারিত বস্তুগুলোর মধ্যে ছিল বিভিন্ন আকারের তার কাটা (৮ ইঞ্চি কাটা ৮টি ও ১ ইঞ্চি কাটা ৩৩টি), ১টি চা চামুচ, ১টি ১০ মিলি পস্নাস্টিক সিরিঞ্জ, ১টি পস্নাস্টিক পেনিয়াম, ২ টাকা ও ৫ টাকার কয়েন, ১২টি টিনের চাকতি, ৫টি ৪ ইঞ্চি স্ক্রু, বিভিন্ন আকৃতির পস্নাস্টিক ও কাচের টুকরো, চিপস-চকলেটের প্যাকেটের খন্ড এবং পাথর ও ইটের ছোট ছোট টুকরো যেগুলোর সামগ্রিক ওজন প্রায় ১.৫ কেজি। অস্ত্রোপচার পরবর্তী পাখিটি সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে উঠলে তাকে আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। তদারকির অবহেলায় প্রায় ২ মাস পর আবারো একই ধরনের ঘটনা ঘটে। পাখিটি আবারো কিছু লৌহ ও পস্নাস্টিক বস্তু খেয়ে ফেলে। পুনরায় পাখিটিকে চিকিৎসার জন্য ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এবারও প্রফেসর ড. মো. রফিকুল আলম পাখিটি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন যে এর পাকস্থলীতে অখাদ্য বস্তু রয়েছে এবং অস্াে্ত্রপচারের সিদ্ধান্ত নেন। অস্ত্রোপচার টিমে প্রফেসর ড. মো. রফিকুল আলমের সঙ্গে আগের মতোই অংশগ্রহণ করেন প্রফেসর ড. মো. মাহমুদুল আলম। এবার আরো যোগ দেন সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের শিক্ষক ড. রুখসানা আমিন রুনা ও ডা. মোহাম্মদ রাগীব মুনীফ। দীর্ঘসময় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পাকস্থলী থেকে পূর্বের ন্যায় বিভিন্ন ধরনের লৌহ, কাচ ও পস্নাস্টিক জাতীয় দ্রব্য অপসারণে সফল হন চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচার পরবর্তী পাখিটিকে ভেটেরিনারি টিচিং হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়েছে। সার্জারি ও অবস্টেট্রিক্স বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মাহমুদুল আলম বলেন, দ্বিতীয় দফায় একই অস্ত্রপচারে পাখিটির জীবনের ঝুঁকি ছিল আগের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু পাখিটিকে বাঁচানোর অন্য কোনো উপায় না থাকায় আমরা অস্াে্ত্রপচারের সিদ্ধান্ত নিই। পাখিটি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ আছে।