নন্দিত লতা উদ্ভিদ সোনাঝুরি

বিশেষজ্ঞদের মতে হামিংবার্ডই এ ফুলের পরাগায়ন করে থাকে। একদিন বয়সের ফুলে মধুর পরিমাণ এবং ঘনত্ব তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। দুদিন বয়সের ফুলে মধুর ঘনত্ব বেশি থাকে তবে মধুর পরিমাণ কমে যায়। সোনাঝুরিলতার ফুলে কোনো গন্ধ নেই

প্রকাশ | ০৪ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

আসমা অন্বেষা
ঢাকার রমনা পার্ক, মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, ফুলার রোডে ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রাঙ্গণে এ ফুল দেখা যায় - যাযাদি
সোনাঝুরিলতা- কাব্যিক নামটা ফুলের সোনাঝরা রূপের সঙ্গে মানিয়েছে বেশ। প্রচুর শাখা প্রশাখা বিশিষ্ঠ ঝুলন্ত লম্বা লতা। একে বলা হয় অফুরন্ত প্রাণ শক্তি সম্পন্ন চিরসবুজ লিয়ানা। বৃহৎ আকারের কাষ্ঠল ক্লাইমবারকে সাধারণত লিয়ানা বলা হয়। এই লিয়ানারা কোনো সাপোর্টকে অবলম্বন করে খুব দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়তে পারে এদের টেনড্রিলের সাহায্য নিয়ে। বাড়ির বেড়া, অন্য কোনো গাছ এবং ছোটখাটো বিল্ডিংকে অবলম্বন করে এরা দ্রম্নত বেড়ে উঠতে পারে। সোনাঝুরিলতার বৈজ্ঞানিক নাম- চুৎড়ংঃবমরধ াবহঁংঃধ এবং অনেকগুলো সিনোনিম আছে। এই জেনাসের নাম এসেছে গ্রিক শব্দ থেকে যার অর্থ ্তুভরৎব্থ এবং ংঃবমরধ-এর অর্থ ধ ৎড়ড়ভ। নামের পরের অংশ এসেছে ল্যাটিন শব্দ ্তুাবহঁংঃঁং্থ থেকে যার অর্থ ্তুনবধঁঃরভঁষ্থ। ফুলটির পুরো নামের অর্থ দাঁড়ায় নবধঁঃরভঁষ ৎড়ড়ভ ভরৎব। সোনাঝুরিলতার আদি বাস ব্রাজিলে। তারপর এরা ছড়িয়ে পরে, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া এবং প্যারাগুয়েতে। তারও পরে উত্তর ও দক্ষিণ মেক্সিকোতে যেখানে এরা এখন ড্রাই ফরেস্টে বেড়ে উঠেছে। ঢাকায় কয়েকটি স্থানে দেখা যায় এই গাছ। রমনা পার্ক, মিপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, ফুলার রোডে ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রাঙ্গণে। বলধা গার্ডেনেও কয়েকটি গাছ আছে। ব্যক্তিগত সংগ্রহেও কিছু গাছ থাকার কথা। পূর্ণ সূর্যালোক অথবা স্বল্প সূর্যালোকে এরা বেড়ে ওঠে। এদের কোল্ড-হারডি পস্নান্টও বলে। অর্থাৎ এরা ঠান্ডা সহ্য করতে পারে। ২৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে এরা। আসলে অধিক উষ্ণতা ও শীত দুটোই ওদের অপছন্দ কিন্তু বেঁচে থাকতে পারে। অপেক্ষাকৃত কম উষ্ণতার দেশগুলোতে প্রচুর পরিমাণ চাষ হতে দেখা যায়। গার্ডেনাররা এই লতাগুলোকে উপকূলবর্তী বাগানের গাছ বলে মনে করে থাকেন। এরা পানির প্রাচুর্য পছন্দ করে। এই লতাটির অদ্ভূত প্রাণশক্তি থাকার কারণে এই লতার উপরের দিকের বৃদ্ধি কোনো কারণে বাধা পেলে মাটির নিচ থেকে আবার কুশি গজাতে থাকে। এতে তাদের ইচ্ছেমতো বৃদ্ধির সুযোগ দিলে এরা দ্রম্নত এদের সাপোর্টকে ঘন কাষ্ঠল লতা এবং অনন্য সুশ্রী এবং প্রাণবন্ত ফুল দিয়ে ঢেকে ফেলতে পারে সহজেই। ইচ্ছে করলে এদের নিয়মিত প্রম্নন করে সুনির্দিষ্ট একটি দৃষ্টি নন্দন আকৃতির মধ্যে রাখা যেতে পারে। বাড়ির সামনের গেটের লোহার জালি, পাথুড়ে দেয়াল বা দীর্ঘ বেড়াকে এরা খুব সহজেই ঢেকে ফেলতে পারে। এই গাছ একটানা প্রায় ৭৫ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। ফুলগুলো সাধারণত ৩ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। ফ্লেম ভাইন থোকা থোকা অসাধারণ আবেদনময়ী রঙের ফুল তৈরি করে। ফুল ফোটা চলে বসন্ত থেকে শীত পর্যন্ত। শীতে ও বসন্তে গাড় কমলা রঙের ফুলে ভরে যায় ঝোপগুলো। অন্যান্য দেশে বসন্তকালে ফুল ফুটলেও আমাদের দেশে শীতের প্রারম্ভেই এই ফুল ফোটে এবং দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়। ঝুলন্ত মঞ্জরির ফুলগুলো নলাকার এবং প্রায় ৫ সেমি লম্বা হয়। ডালের আগায় একটি থোকাতে সাধারণত ১৫-২০টি ফুল থাকে। পরাগধানীগুলো ছোট টিউবের মতো ফুলগুলো থেকে বের হয়ে আসে। বেশির ভাগ সময়েই ফুলেরা এদের নিজস্ব ওজনের ভারে নিচের দিকে ঝুলে থাকে। ফুলটির উজ্জ্বল লালচে-কমলা মিষ্টি রঙ অনেক দূর থেকেই চোখে পড়ে। কাছ থেকে দেখতেও অপূর্ব লাগে। ফুলের আকৃতি ও রঙ দুই অনন্য সুন্দর। ফুল ফোটা শেষ হলে শুকনো ডালপালা ও ডাঁটা ছেঁটে ফেলা ভালো। সাধারণত সোনাঝুরিলতার বংশবৃদ্ধি হয় গ্রাফটিংয়ের মাধ্যমে। ফ্লেম ভাইন ফুল এক ধরনের মধু তৈরি করে দিনের বিভিন্ন সময়ে যা নির্ভর করে ফুলের পুষ্টিতার ওপরে। এই ফুলকে সাধারণত বলা হয় চৎড়ঃধহফৎড়ঁং। যার অর্থ- এদের গর্ভমুন্ড থেকে অনেক আগেই এদের এনথারের পুষ্টতা প্রাপ্ত হয়। বিশেষজ্ঞদের মত অনুসারে হামিংবার্ডরাই এদের পরাগায়ন করে থাকে। একদিন বয়সের ফুলে মধুর পরিমাণ এবং ঘনত্ব তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি থাকে। দুদিন বয়সের ফুলে মধুর ঘনত্ব অনেক বেশি থাকে তবে মধুর পরিমাণ কমে যায়। সোনাঝুরিলতার ফুলে কোনো গন্ধ নেই। আর যে ফুল পরাগায়ন করতে পারে না এবং সে ফুলের বীজ তৈরি হয় না। অনেকের ধারণা মৌমাছি দ্বারাই এদের সঠিক পরাগায়ন হয়। কারণ মধুর লোভে অনেক মৌমাছিকেই এই ঝোঁপের আশপাশে ঘুরতে দেখা যায়। সঠিক পরাগায়নের মাধ্যমে ফল তৈরি হয়। ফল সাধারণত সরু, পাতলা এবং লম্বা হয়ে থাকে।