বাড়বকুন্ডের লাল পেয়ারা

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুন্ড দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে স্বাদ ও পুষ্টিগুণে ভরপুর সীতাকুন্ড উপজেলার বাড়বকুন্ডের উৎপাদিত সুস্বাদু 'লাল পেয়ারা'। বাড়বকুন্ড পাহাড়ে স্থানীয়দের কাছে পেয়ারার আঞ্চলিক নাম 'গয়াম'। সীতাকুন্ড এলাকার প্রায় ২০ কিলোমিটার পাহাড়ি অঞ্চলজুড়ে গড়ে উঠেছে পেয়ারা বাগান। অনেকে বংশানুক্রমিক পাহাড়ে পেয়ারা চাষ করে আসছে। আষাঢ় থেকে ভাদ্র- এই তিন মাস এলেই চাষিদের চোখে-মুখে আনন্দের চিহ্ন দেখা যায়। এখানকার লোকজন পেয়ারা চাষ করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে। সরকারি উদ্যোগ ও সহযোগিতায় এখানকার পেয়ারা চাষিরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। সীতাকুন্ডে দুই ধরনের পেয়ারার চাষ হলেও বাড়বকুন্ডের লাল পেয়ারার চাষে কৃষকরা উৎসাহী বেশি। স্থানীয় চাষিদের ভাষায় এই পেয়ারার নাম 'আঞ্জির পেয়ারা'। এই পেয়ারার বৈশিষ্ঠ্য হচ্ছে, বাইরে হলুদ অথবা সবুজ আর ভেতরটা লালচে গোলাপী, আকারে খুব একটা বড় না হলেও স্বাদে অতুলনীয়। যে কোনো পেয়ারাতেই ভিটামিন 'সি' থাকলেও লাল পেয়ারায় 'সি' এর সঙ্গে অতিরিক্ত আছে ভিটামিন 'এ'। বাড়বকুন্ড মধ্যম মাহমুদাবাদ গ্রামের পেয়ারা চাষি মো. নুরুল আবছার অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে আর্থিক দৈন্যতার কারণে লেখাপড়া বাদ দিয়ে বন বিভাগ থেকে লিজ নিয়ে বাড়বকুন্ড পাহাড়ে পেয়ারা চাষ শুরু করে। কঠোর পরিশ্রম করে পাহাড়ি টিলায় পেয়ারা চারা রোপণ করে পাঁচবছর পর থেকে বাগানে পেয়ারা ধরতে শুরু করে। তিনি জানান, ৪০ শতক জায়গায় পেয়ারা বাগান করতে জঙ্গল পরিষ্কারসহ মোট ৩০ হাজার টাকা খরচ পড়ে। তিন বছর পর পেয়ারা ধরতে শুরু করলে মাত্র তিন মাসে ৭০ হাজার টাকার পেয়ারা বিক্রি করেন। তিনি জানান, পেয়ারা চাষ করেই তাদের ১০ জনের পরিবারের ভরণ পোষণ চলছে। শুধু তিনি নন,পেয়ারা চাষই এখানকার অধিকাংশ মানুষের জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। পেয়ারা চাষি ছমিউল হক বলেন, এই পেয়ারা চাষ করে আমরা প্রচুর লাভবান। এই চাষে মাত্র তিন মাস সময় দিয়ে এর লাভ থেকে সারা বছর সংসার খরচের টাকা আয় করি। তিনি বলেন, তার দু'একর জমিতে বাগান পরিষ্কারসহ ২০ হাজার টাকা খরচ করে ৬০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। একইভাবে মান্দারি টোলা গ্রামের হানিফ ৫০ হাজার টাকা খরচ করে দুই লাখ টাকা, আতর আলী ও কামাল উলস্ন্যা ৬০ হাজার টাকা খরচ করে ২ লাখ টাকা, সেলিম উলস্ন্যা ২০ হাজার টাকা খরচ করে ৭০ হাজার টাকা, আলিম উলস্ন্যা ২০ হাজার টাকা খরচ করে ৮০ হাজার টাকা, আবুল বশর বাবুল ৩০ হাজার টাকা খরচ করে এক লাখ টাকা আয় করেছে। বাড়বকুন্ডের লাল পেয়ারাকে ঘিরে এখানকার বাজারগুলো জমজমাট থাকে। খুব ভোরে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাইকাররা এসে এই পেয়ারা নিয়ে যায়। শুধু মহানগরীর নয়, আশপাশের অনেক উপজেলা এমনকি বাস- ট্রেনেও হকারদের বাড়বকুন্ডের 'লাল পেয়ারা' বলে চিৎকার করে পেয়ারা বিক্রি করতে দেখা যায়। উপজেলার বাড়বকুন্ড, মোহন্তের হাট, শুকলাল হাট, কুমিরা বাজার ও দারোগারহাট বাজার সরজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন ভোর থেকে চাষিরা দলে দলে বাগান থেকে পেয়ারা তুলে পেয়ারার ভার কাঁধে নিয়ে আসতে থাকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন বাজারগুলোতে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখান থেকে কমমূল্যে কিনে ট্রাকযোগে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার প্রায় ৩শ একর পাহাড়ে পেয়ারা চাষ হলেও শুধুমাত্র বাড়বকুন্ড এলাকায় লাল পেয়ারার চাষ হয়। মজার ব্যাপার হলো, ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও লাল পেয়ারা চাষ কেন সমগ্র উপজেলায় বিস্তৃত নয়, তার উত্তর দিতে গিয়ে কৃষক এবং কৃষি বিভাগ ভিন্ন মত পোষণ করেন। কৃষি বিভাগের মতে, লালপেয়ারা চাষে সাধারণ পেয়ারার চেয়ে বেশি সময় লাগে তাই কৃষকরা অধৈর্য হয়ে পড়ে। অন্যদিকে চাষিরা জানান, চাহিদার কারণে আমরা লাল পেয়ারা চাষে বেশি আগ্রহী কিন্তু মাটি ও প্রকৃতির কারণে বাড়বকুন্ডের বাইরে এই পেয়ারা চাষে উলেস্নখযোগ্য সাফল্য অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাফকাত রিয়াদ জানান, 'প্রায় ২০ কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকায় পেয়ারার চাষ হলেও একমাত্র বাড়বকুন্ড এলাকায় স্বল্পপরিসরে চাষ হওয়া লাল পেয়ারার সুস্বাদু আর নজরকাড়া রঙের কারণে ইতোমধ্যে খ্যাতিলাভ করেছে। লাল পেয়ারা একটি বিশেষ প্রজাতির পেয়ারা, তাই আর্কষণীয়।