সীতাকুন্ডে বাম্পার ফলনে খুশি আখ চাষিরা

প্রকাশ | ১৮ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুন্ড
আশানুরূপ ফলন ও ন্যায্য দাম পাওয়ায় এবার আখ চাষে সাবলম্বী হয়েছেন সীতাকুন্ডের অর্ধশতাধিক কৃষক। গতবারের তুলনায় এবার রোগবালাই কম হওয়ায় ও সঠিক সময়ে সেচের পানি পাওয়ার কারণে আখের দ্বিগুণ ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। পাশাপাশি বাম্পার ফলনের কারণে সীতাকুন্ডের সর্বত্র আখের চাহিদামতো সরবরাহ থাকায় সমান তালে আখ কিনছেন ক্রেতারা। জানা যায়, আখের চারা রোপণের উপযুক্ত সময় হলো কার্ত্তিক ও অগ্রায়ণের মাঝামাঝিতে। আখের চারা রোপণের আগে প্রথমে জমির আগাছা উত্তমরূপে পরিষ্কার করতে হয়। প্রতি তিন হাত পরপর মাটি কেটে উঁচু জমিতে আঁটি তৈরি করতে হয়। আঁটি তৈরির কয়েকদিন পর বিভিন্ন সার ও ওষুধ যেমন- পটাশ, ফসফেট, বাসুডিন ও গোবর একত্রে মিশিয়ে আঁটিতে পরিমাণমতো ছিটিয়ে দিতে হয়। এর পর মাটিকে কোদাল দিয়ে আলতো করে কুপিয়ে ঝুরঝুরে করে পানি প্রয়োগের পর প্রতি এক হাত অন্তর একটি করে আখের চারা লাগানো হয়। একমাস পর আগাছা পরিষ্কার করে পুনরায় মাটি ঝুরঝুরে করতে হয় এবং প্রতি তিনমাস পর পুনরায় আগাছা পরিষ্কার করে আখের আঁটিতে উত্তমরূপে মাটি দিতে হয়। এরপর প্রতিমাসে এক থেকে দু'বার করে শুকিয়ে যাওয়া পাতা পরিষ্কার করতে হয়। এ ছাড়া ঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আখ সুরক্ষিত রাখতে চার হাত পরপর বাঁশের কঞ্চি পুঁতে আখগুলোকে শক্তভাবে বেঁধে দেয়া হয়। প্রায় ১০ মাস পর শ্রাবণের শেষের দিকে জমি থেকে উৎপাদিত আখ কেটে বাজারে বিক্রয় করা হয়। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার সীতাকুন্ডের পৌর এলাকা, বাড়বকুন্ড ইউনিয়ন, মরাদপুর ইউনিয়ন ও বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের প্রায় ১০ হেক্টর জমিতে অর্ধশতাধিক কৃষক আখের চাষ করেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে আখের চাষ হয়েছে বাড়বকুন্ডের হাতিলোটা গ্রামে। এই গ্রামের মনির হোসেন, সাইফুল, নুর সোলেমান, হাসান উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, কেরামত আলী ও আলমগীরসহ ২০ জন কৃষক প্রায় চার হেক্টর জমিতে আখের চাষাবাদ করেছেন। কৃষি কর্মকর্তা ও মাঠকর্মীর কারিগরি সহযোগিতায় রোগবালাই দমনে সঠিক সময়ে কীটনাশক প্রয়োগসহ সময়পোযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ফলন হয় আশানুরূপ। এতে ১০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৬০ টন আখ উৎপাদিত হয়ে থাকে বলেও জানান তারা। হাতিলোটা গ্রামের কৃষক জহিরুল ইসলাম জানান, 'এবার ২০ শতক জমিতে তিনি আখের চাষ করেছেন। আখের চারা রোপণ, বাঁশ, কীটনাশক ও শ্রমিকের বেতন বাবদ তার ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সঠিক সময়ে রোগবালাই দমন করায় তার জমি থেকে তিন হাজার পিচ আখ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এতে তার খরচ বাদে ৩৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।' এলাকার অপর কৃষক মোশারফ হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, 'প্রতি বছরের ন্যায় এবারও তিনি ২৫ শতক জমিতে আখের চাষ করেছেন। বীজতলা তৈরি, সার, কীটনাশক ও বাঁশের কঞ্চিতে তার ৩০ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিছু আখের আঁটির ক্ষতিসাধিত হলেও তিনি পাইকারি বাজারে ৬৫ হাজার টাকার আখ বিক্রি করেছেন। সীতাকুন্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাফকাত রিয়াদ জানান, 'সীতাকুন্ডের পৌরসভাসহ তিনটি ইউনিয়নে এবার ১০ হেক্টর জমিতে ৬০ টন আখের আবাদ হয়েছে। রোগবালাই দমনে কৃষি অফিসের কারিগরি সহযোগিতায় আশানুরূপ ফলনে লাভবান হয়েছে কৃষক। পাশাপাশি লোকসানের ঝুঁকি কম থাকায় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ধীরে ধীরে বাড়ছে আখের চাষাবাদ।'