আখের সাথে সাথী ফসল চাষ

প্রকাশ | ২৫ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

কৃষি ও সম্ভাবনা ডেস্ক
আখ আমাদের দেশের খাদ্য ও শিল্পে ব্যবহার্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অর্থকরী ফসল। চিনি, গুড় ও চিবিয়ে খাওয়ার জন্য আখ ফসল চাষ করা হয়ে থাকে। আখ একটি দীর্ঘমেয়াদি ফসল, যা জমিতে প্রায় ১৩-১৪ মাস থাকে। দেশে খাদ্যাভাব যখন কম ছিল, তখন আখচাষ বেশ জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু দিন দিন খাদ্য শস্যসহ অন্যসব জিনিসের বাজারমূল্য অনেক বেড়ে গেছে। অথচ তুলনামূলকভাবে আখের মূল্য না বাড়ার কারণে কৃষক ভাইয়েরা আখ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। উচ্চ ফলনশীল ও স্বল্পসময়ে চাষ করা যায় এমন ফসল চাষ করে বেশি আয় করার ফলে ক্রমশ আখ চাষের জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে তুলনামূলকভাবে নিম্নমানের জমিতে আখের চাষ করা হচ্ছে। ফলে আখের ফলন দিনকে দিন কমেই যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে সার্বিকভাবে দেশের চিনি শিল্পের ওপরে। তাই আখ ফসলকে এ বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনার। কারণ আখ ফসলি জমিতে প্রায় ১৩ থেকে ১৪ মাস অবধি থাকে, তাই দীর্ঘ সময়টি আমাদের সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। আর সে কারণেই আমাদের আখের সঙ্গে যাতে করে, আরেকটি স্বল্পমেয়াদি ফসল সুষ্ঠুভাবে চাষ করতে পারি, সে ব্যবস্থাও জনপ্রিয় করতে হবে। আখের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে আমরা ডাল জাতীয় ফসলের মধ্যে মটরশুঁটি, ছোলা, মসুর, মুগ ইত্যাদি। মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে পেঁয়াজ, রসুন ও তেল ফসলের মধ্যে তিল, তিসি, সরিষা, বাদাম ইত্যাদি চাষ করতে পারি। আখের সঙ্গে সাথী ফসলের চাষের কারণগুলো হলো- আখের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে ডালজাতীয়, তেলজাতীয় ফসলগুলো আলাদা জমি ছাড়াই বিনা সেচে বৃষ্টিনির্ভর অবস্থায় চাষ করা যায়, যা এককভাবে আখ চাষের চেয়ে অনেক লাভজনক। সাথী ফসল পরিচর্যার সময় আখের আংশিক আন্তঃপরিচর্যার কাজও হয়ে যায়। ডাল ফসলের গাছ ছোট, পাতা কম সে জন্য আখের সঙ্গে এর পুষ্টি এবং অন্যান্য বিষয়ে প্রতিযোগিতা কম। সাথী ফসল হিসেবে ডালজাতীয় ফসল চাষে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়াও আখের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে পেঁয়াজ ও রসুন চাষ করলে অতি অল্প সময়ে অতিরিক্ত একটি ফসল পাওয়া যায়। সাথী ফসল চাষে জমির ব্যবহার বৃদ্ধি ও জাতীয় উৎপাদন বেড়ে যায়। পেঁয়াজ ও রসুনের গাছ ছোট, পাতা কম ও সরু এবং গুচ্ছমূলের পরিধি সীমিত হওয়ায়, আখের সঙ্গে এদের মাটি থেকে পুষ্টি নিতে তেমন কোনো প্রতিযোগিতা হয় না। প্রাকৃতিক দুর্যোগে আখ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সাথী ফসল থেকে আংশিক ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যায়। পেঁয়াজ ও রসুনের পাতায় তীব্র ঝাঁজ থাকায় সাথী ফসল হিসেবে আখচাষ করলে আখে পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হয়। আখের সঙ্গে সাথী ফসল চাষ করলে জমিতে আগাছা কম হয় ফলে মূল ফসলের ফলন অনেকাংশে বেড়ে যায়। দোআঁশ, বেলে দোআঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটি আখ চাষের জন্য খুবই ভালো। চারা রোপণ : আখ ফসলের দুই সারির মাঝখানের মাটি কোদাল দিয়ে কুপিয়ে বা নিড়ানির সাহায্যে আলগা করে নিতে হবে এবং আগাছা থাকলে তা পরিষ্কার করে দিতে হবে। ডাল বীজ ৮-১০ ঘণ্টা ভিজিয়ে নিতে হবে। ডাল বীজের গায়ের পানি ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি ডালবীজ নির্ধারিত দূরত্বে বুনে দিতে হবে। পরিচর্যা: ডাল ফসলের তেমন পরিচর্যা করার দরকার হয় না। তবে আগাছা দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করে দিতে হবে। ডালের চারা গজানোর পর নির্দিষ্ট দূরত্বে চারা রেখে বাড়তি ঘন চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। তবে ছোলার ডালপালা এমনিতেই বেশি হয়, সে জন্য বীজ একটু পাতলা করে বুনলেও কোনো ক্ষতি নেই। রোগবালাই দমন: ডাল ফসলের মধ্যে মসুর ও ছোলার সাধারণত জাব পোকা ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা যায়। জাব পোকার আক্রমণ হলে কেরোসিন মেশানো ছাই ছিটিয়ে এ পোকা দমন করা যায়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে কেবলমাত্র তখনই অনুমোদিত কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। তবে ডাল ফসলের ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ হলে থিয়ন গ্রম্নপের কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। আবার মুগ ডালে বিছা পোকার আক্রমণ হলে কেরোসিন মেশানো দড়ি ক্ষেতের ওপর দিয়ে টেনে দিলে আক্রমণের মাত্রা অনেকটাই কমে যায়। আক্রমণ বেশি হলে ম্যালাথিয়ন ও ডায়াজিনন গ্রম্নপের যে কোনো কীটনাশক স্প্রে করে দমন করতে পারেন। গোড়া পচা রোগ দেখা দিলে ব্যাভিস্টিন স্প্রে করে দমন করতে হবে।