ভেষজ উদ্ভিদ উলটকম্বল

প্রকাশ | ২৫ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

দেবদাস মজুমদার
পথের ধারে আমাদের জীবনধারণে নানা গাছপালা আর লতা বেড়ে ওঠে। প্রকৃতিগতভাবেই চারপাশে অনেক দরকারি উদ্ভিদ জন্মে। তবে সবকিছু চেনা জানা হয় না। ভেষজ অনেক উদ্ভিদ আমাদের শরীরে ওষুধ হিসেবে কাজে লাগে। ইউনানি আর কবিরাজি বিশেষজ্ঞরা ভেষজ উদ্ভিদ ভালো চেনেন। অনেক স্ব-শিক্ষিত কৃষকও চেনেন। আমাদের উদ্ভিদের গুণাগুণ জানা জরুরি। কেননা, দরকারি এসব উদ্ভিদ আসলে আমাদের শরীরের রোগব্যাধির ওষুধ। পথে চলতে গিয়ে অজানা কত উদ্ভিদের ফুল দেখে আমরা মুগ্ধ হই। দরকারি এসব ফুল ও লতাপাতা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা উচিত। কেননা, প্রাণ ও প্রকৃতি আমাদের জীবনধারণে দরকারি। কোনো কোনো উদ্ভিদ মানবদেহের শক্তিবলের মহৌষধ হিসেবে কাজে লাগে। উপকূলীয় পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া ও ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া সড়কের পাশে দুয়েকটি উলটকম্বল গাছের দেখা মেলে। এসব উলটকম্বল উদ্ভিদ প্রকৃতিগতভাবেই বেড়ে উঠেছে। উলটকম্বল ফুল মূলত বর্ষার ফুল। এখন শরতে এ ফুল টিকে থাকবার কথা নয়। কাঁঠালিয়া উপজেলা সদর থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটি মোবাইল টাওয়ারের সামনে সড়কের পাশে একটি ?উলটকম্বল গাছে একটা ফুল ঝরেপড়ার অপক্ষোয় ছিল। মেরুন রঙে দারুণ শোভন এই উলটকম্বল ফুলের। উলটকম্বল, এটিকে অনেকে উবারষং ঈড়ঃঃড়হ বলেও চেনেন। এটির বৈজ্ঞানিক নাম অনৎড়সধ ধঁমঁংঃধ, ঔষধি গাছ হিসেবে পরিচিত এই গাছটি পাওয়া যায় এশিয়ার সর্বত্র। সাধারণত এপ্রিলের শুরুর দিকে এই গাছে ফুল ফোটা শুরু হয়। উলটকম্বল মানবদেহের শক্তিবলের ঔষধি গাছ। উলটকম্বল গাছ ৮ থেকে ১০ ফুট লম্বা হয়। বেশি মোটা হয় না। গাছের ছালে রেশমের মতো আঁশ থাকে, ফুলের রং মেরুন। ফল পঞ্চকোণবিশিষ্ট লোমাবৃত। কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে ধূসর বর্ণের হয়। এর পাতা, গাছ ও মূলের ছাল ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে মেয়েদের অনিয়মিত ঋতুস্রাব হয় অথবা নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে কম পরিমাণ হয়ে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে উলটকম্বল একটি পরীক্ষিত ওষুধ। এর মূলের ছাল থেকে এক ধরনের আঠাজাতীয় রস বের হয়, যা গর্ভাশয়ের শক্তি বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে বন্ধ্যত্ব রোগীদের ক্ষেত্রে উলটকম্বলের মূলের ছাল ভীষণ উপকারী। পাতা ও কান্ডের রস গনোরিয়া রোগে বিশেষ উপকারী। দীর্ঘদিন থেকে অনিয়মিত ঋতুস্রাব, জরায়ুসংক্রান্ত রোগ, বন্ধ্যত্ব, ব্যথাসহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে কার্যকর বলে জানান ভেষজ বিশেষজ্ঞরা। এ থেকে তৈরি ওষুধের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। উলটকম্বল, শুলফা বীজ, আওবেল, সারাকা ইন্ডিকা, চায়নারুট, শুকনা পুদিনা, শিয়ালকাঁটা, কবাবচিনি, জটামাংসী, তজ, বড় এলাচসহ অন্যান্য উপাদান নিয়ে ওষুধ তৈরি করা হয়। উলটকম্বল গাছের পরিকল্পিত আবাদ তেমন চোখে পড়ে না। সাধারণত গাঁয়ের গৃহস্থ বাড়িতে অনেকেই প্রয়োজনীয় ঔষধি বলে দুয়েকটি গাছ রোপণ করে থাকেন। এ ছাড়া সড়কের পাশে মাঝে মাঝে দুয়েকটি গাছ চোখে পড়ে। উলটকম্বল থেকে মানুষের নানা রোগের উপশমের ওষুধ মেলে। তাই পরিবেশবান্ধব উলটকম্বল গাছ রোপণ করা উচিত।